বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে তখন এই প্রতিবেদক বয়সে অনেক ছোট৷ উত্তর ২৪ পরগণার শ্যামনগর সবুজ সংঘের মাঠে একটি ফাইনাল ম্যাচ হচ্ছে৷ শুনেছিলাম মাঠে সুব্রত ভট্টাচার্য আসছেন৷ তখন মোহনবাগানের স্তম্ভ সুব্রত ভট্টাচার্য৷ যেহেতু শ্যামনগরের ওই মাঠে খেলেই সুব্রত বড় হয়েছেন, ফুটবলার হয়েছেন তাই ওই মাঠে তিনি মাঝে মাঝেই যেতেন খেলতেনও অনামী ফুটবলারদের সঙ্গে৷ সেই ফাইনাল ম্যাচে সুব্রতকে খেলতে দেখেছি ফরোয়ার্ড পজিশনে৷ হেডে একটি ফাইনাল পাস বাড়ালেন সতীর্থকে৷ তা থেকে গোল হ’ল৷ হাফ টাইমে বিপক্ষ খেলোয়াড়দের, জুনিয়রদের বার বার বললেন---পারবি তোরা পারবি৷ সেই সময়কার কোচ মুরারী সুরকে খেলা শেষে বলতে শুণেছি---এ অঞ্চলের ছোটরা ভাল ফুটবল খেলছে৷ এদের মনোবল বাড়াতে হবে৷ তাহলেই এরা ভাল খেলবে মুরারীদা৷ এখন শ্যামনগরে সুব্রত ভট্টাচার্য ছোটদের ফুটবল শেখানোর মূল কারিগর৷ ব্যস্ততার মধ্যেও খুদেদের খোঁজ-খবর নেন, তাদের শরীর গঠনের জন্যে সাহায্য করেন এমনকি নিয়মিতভাবে ওদের বেড়াতে যাওয়ারও ব্যবস্থা করেন মন ভাল করার জন্যে৷
ঠিক একই রকম মন্তব্য শোণা গেল বর্তমান ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর গলায়৷ তিনি অনুধর্ব ষোল ভারতীয় দলটির খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত৷ জানালেন কোচ বিবিয়ানো ফার্ণাডেজের চেষ্টায় ছোটরা দারুণ খেলছে৷ প্রত্যেক খেলোয়াড়ই গেম প্ল্যান অনুযায়ী খেলতে পারছে৷
খেলাধূলার জগতে ছোটদের মধ্যে থেকে প্রতিভা খোঁজা, আর তাদের সাহায্য করার মানসিকতা সুব্রত-সুনীলদের মত ক্রীড়া ব্যষ্টিত্বরা দেখালে ছোটরা সাহস পায়, অনুপ্রেরণা পায়, ভাল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ণ দেখে৷ তাই জেলাস্তর থেকে রাজ্য স্তরে এমন অনেক সুনীল ছেত্রী, সুব্রত ভট্টাচার্য চাই, যাঁরা বিদেশ থেকে এনরিকেদের খেলা দেখতে মাঠে যান না, মাঠে যান পিয়ারলেসের গোলকিপার সন্দীপ পালের খেলা দেখতে৷
আমাদের দেশের তারকা ফুটবলারদের মধ্যে এমন ফুটবলার খুব কমই আছেন যাঁরা পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে বাস্তবোচিত চিন্তাভাবনা করেন, নিজেদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই ছোটদের জন্য মাঠে যান, ওদের উৎসাহ দেন৷ উপযুক্ত প্রশিক্ষক ছাড়া বিশ্বের দরবারে প্রতিযোগিতায় টঁিঁকে থাকার উপযোগী হওয়া যায় না৷ ঠিক এই জায়গাটায় খেলাধূলার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ফুটবল মাঠে আমাদের খ্যাতনাম ফুটবলারদের অনেকটা দায়িত্ব নিতে হবে৷ সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গাঙ্গুলী, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, কার্তিক শেঠ, তরুণ দে, দীপক মণ্ডল, বিকাশ পাঁজি, বাইচুং ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রীরা উদ্যোগী হলে খুদে ফুটবলারদের ভাল মানের ফুটবলার হিসেবে অচিরেই গড়ে তোলা যাবে৷ বিদেশীদের থেকে অবশ্যই কিছু শেখা যাবে কিন্তু অন্য দেশ থেকে অর্থ রোজগারের উদ্দেশ্যে আসা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যতটুকু শেখা যাবে তার চেয়ে অনেক বেশী শেখা যাবে আমাদের দেশের সেই সব খেলোয়াড়দের কাছে থেকে যারা বিদেশীদের বিরুদ্ধে অনেক লড়াই করেছেন ও ভাল খেলে বিদেশীদেরই প্রশংসা অর্জন করেছেন৷ তাই বিশ্ব ফুটবলে অনেক পিছিয়ে থাকা ভারতীয় খুদে ফুটবলারদের জন্যে সুব্রত ভট্টাচার্য, সুনীল ছেত্রীদের ইতিবাচক ভাবনা খুবই ফলপ্রসূ হবে৷