চীনের আগ্রাসী মনোভাব

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতে অবস্থিত ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সীমান্ত  অঞ্চলে এক নাগাড়ে চীন, পাকিস্তান ও নেপালের কিছু উগ্রপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী দীর্ঘ বছর ধরে ভারতে অনুপ্রবেশ করে ভারতের সার্বভৌম অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে৷  এটি প্রায় স্বাধীনতার  কিছু বছর পর থেকেই চলে আসছে৷ অবশ্য ভারতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতা ও নেত্রীগণ প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রতিরোধ করতে৷ মনে পড়ে চীন ভারতের পঞ্চশীল নীতিকে  পরিহাস করতেই গত ১৯৬২ তে ভারত আক্রমণ করে তেজপুর পর্যন্ত নেমে আসে৷ হিমালয়ের ম্যাকমোহন লাইনের সীমানার দক্ষিণ দিকে যেটি  ভারতের অংশ হিসাবে চিহ্ণিত তার প্রায় ৪৫ হাজার বর্গ মাইল জোর পূর্বক চীন আটকে রেখেছে৷  বিভিন্ন সময়ে চীন-ভারত আলোচনায় সেটি আজও নিষ্পত্তি হয় নি৷

ভারত ও চীনের মধ্যবর্ত্তী রাষ্ট্র তিববত যেটি বাফার  রাষ্ট্র ছিল সেটিকে  চীন গ্রাস করে’  সরাসরি  ভারতের অন্তর্গত হিমালয়ের দক্ষিণভাগের  বিরাট এলাকা হস্তগত করেছে৷  কৈলাস ও মানস সরোবরের  পবিত্র হিন্দুতীর্থক্ষেত্রগুলি কৌশলে নিজের বলে দাবী করে ভারতের  তীর্থযাত্রীদের   প্রবেশে বাধা দিচ্ছে৷  ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাঁধ নির্র্মণ করে ভারতের বুকে আসা ব্রহ্মপুত্র নদের জলকে নিয়ন্ত্রণ করে ভারতকে বিপাকে  ফেলেছে৷ সম্প্রতি - সিকিম, ভূটানের সীমান্তে অবস্থিত --- চুম্বি উপত্যকায় চীনারা সামরিক ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে ও ভুটান ও সিকিমের সীমান্ত  দিয়ে চীন রাস্তা তৈরী করে  ওই এলাকা জবর দখল করছে৷  এতে সিকিম, ভুটান  প্রতিবাদ করেছে৷ সিকিম ভুটানকে রক্ষার দায়িত্ব ভারতের ৷ তাই ভারতীয় সেনা ডোকা-লায় অবস্থান করছে যেটা ১৪,৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত৷  চীন ভারতের বিরুদ্ধে   বার বার হুমকী দিচ্ছে, চীন সরকার বার বার নিজের শক্তি জাহির করতেপ্রেস রিলিজ দিয়ে বার বার পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বলছে যে চীন নাকি ভারতকে উচিত শিক্ষা দেবে৷ তাছাড়া নেফা  এলাকার বড় অংশ চীনের বলেও তারা মিথ্যা দাবি জানিয়ে আসছে৷

 চীনা সরকার  পাকিস্তানের  সঙ্গে হাত মিলিয়ে কশ্মীর ও জম্মু সীমান্তে  পাকিস্তানী জঙ্গী-মুসলীম অনুপ্রবেশকারীদের -অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্যও দিচ্ছে৷ এমনকি  ভারতের অন্তগর্ত-পাকিস্তানী সমর্থকদের ও নানাভাবে সাহায্য করছে৷

বর্ত্তমানে পশ্চিম বাঙলার উত্তরে  দার্জিলিংয়েও যে নেপালী অনুপ্রবেশকারীদের  হিংসাত্মক  আন্দোলন চলছে তাতে চীন সরাসরি অস্ত্রশাস্ত্র,  খাদ্যদ্রব্য সংবরাহ করছে৷ নেপালী অনুপ্রবেশকারীরা দার্জিলিংয়েতে  গোর্র্খল্যান্ডের  দাবী তুলে আন্দোলন করছে, যাকে চীনাপন্থী যে  কমিউনিষ্ট দল ভারতে অবস্থান করছে (সিপিএম) পরোক্ষে  সহায়তা  করছে৷ আগে তো এই সিপিএমই প্রতক্ষভাবেই গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনকে মদত দিয়েছে৷ ১৯৬২ সালে  ভারত আক্রমণের  সময়, এমনকি এই  কিছু দিন আগে  ডোকা-লাম থেকে  ভারতীয় সৈন্য সরিয়ে আনার প্রশ্ণে তারা    কমিউনিষ্ট চীনেরই পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে৷ এই ধরণের  উক্তি ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে  অবশ্যই অনুকূল নয়৷ নিছক  সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থেই  ভারতের কিছু  রাজনৈতিক দল সরাসরি পাকিস্তান ও নেপালীদের হয়ে উমেদারী করে চলেছে ৷

তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির লোকসভায় ঘোষণা করেছেন,গোর্র্খল্যান্ড দাবী নিয়ে কমিটি নয়৷ এটি সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী৷  তবে স্মরণ করা যেতে পারে কেন্দ্রীয় শাসক দলই ইতোপূর্বে ভোটের স্বার্থে এই সংবিধান বিরোধী গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলন কে সমর্থন জানিয়েছে৷

 মাতৃভূমির  সার্বভৌমিকতা ও নিরাপত্তা সবার ওপরে৷ মনে  রাখতে হবে দেশ বাঁচলে তবেই আমরা নোংরা দলতন্ত্রকে মাথায় তুলে নাচানাচি করতে সক্ষম হব৷ তাই দলমত নির্বিশেষে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের নামে বাঙলা ভাঙার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে , রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে  ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে ৷