ভারতীয় জিমন্যাসটিক্সের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল গত বৃহস্পতিবার সাইয়ের দফতরে একযোগে চিঠি জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন বিদ্রোহী চার জিমন্যাস্ট ও দুই কোচ৷ কোচ বদলের দাবীতে বাংলার প্রতিবাদী দুইমেয়ে জিমন্যাস্টের পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপের জন্য নির্বাচিত দুই পুরুষ জিমন্যাস্ট ও তাঁদের কোচও ৷ শিবির শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৭ অক্টোবর৷ তার পর পুরো যাওয়ার কথা ছিল দোহায়৷
শিবির শেষ হওয়ার ছয় দিন আগেই অভূতপূর্ব এই পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার বাতিল হয়ে গেল দোহাগামী ভারতীয় দলের সফর৷ ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশিপে যোগ দিচ্ছে না ভারতের কোনও দল৷ শেষ মুহূর্তে দল তুলে নেওয়ায় বড় রকমের জরিমানা হতে পারে৷ এ নিয়ে আবার চাপান-উতোর শুরু হয়েছে সাইয়ের সঙ্গে সর্বভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার কর্র্তদের৷
সাইয়ের মনোনীত কোচের বদল চেয়ে দু’দিন আগেই রণংদেহি মূর্তি নিয়েছিলেন দোহাগামী মেয়ে দলের দুই জিমন্যাস্ট প্রণতি দাশ ও পাপিয়া দাশ৷ দুই বঙ্গকন্যা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সাইয়ের নির্র্বচিত কোচ গুরদয়াল সিংহ বাওয়াকে তাঁরা চান না৷ বরং কোচ হিসাবে চান তাঁদের দীর্ঘদিনের কোচ জয়প্রকাশ চক্রবর্তীকে৷ দেশের দুই সেরা জিমন্যাস্ট চিঠিতে লিখেছিলেন , ‘জয় স্যার না গেলে আমরা যাব না৷’’ আনন্দবাজারের হাতে চলে আসে সেই গোপন চিঠি৷ জয়নগর ও জলপাইগুড়ির দুই বঙ্গকন্যার সেই বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হওয়ায় তোলপাড় পড়ে যায় দেশ জুড়ে৷ দিল্লির সাই দফতর ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের অফিসাররা দফায় দফায় আলোচনায় বসেন৷ দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল, তীব্র চাপের মুখে ঠিক হয় সাইয়ের নির্র্বচিত কোচ একাত্তর বছরের বাওয়াকে বদলে মেয়েরা যে কোচকে চাইছেন, সেই জয়প্রকাশকেই পাঠানো হবে দলের সঙ্গে ৷ সেই চেষ্টা শুরুও হয়৷ কিন্তু নাম পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ৮ই অক্টোবর৷ সেই তারিখ পেরিয়ে যাওয়ায় নোতুন কোচ হিসাবে জয়প্রকাশের নাম নথিভুক্ত করতে পারননি সাই কর্র্তরা ৷ মেয়েরাও অনড় মনোভাব নেন৷
এরকম পরিস্থিতিতে মেয়েদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন ছেলেরাও৷ সার্ভিসেসের দুই জিমন্যাস্ট আদিত্য সিংহ রানা ও গৌরব কুমার ছিলেন দোহাগামী দলে৷ তাঁরাও শিবির ছেড়ে দেওয়ার চিঠিতে সই করে দেন৷ এ দিন বিকেলে মুম্বাইগামী ট্রেনে ওঠার আগে দিল্লি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছেলেদের কোচ বি.এল . বাইস্কর বললেন, ‘ মেয়েদের কোচ নির্বাচন নিয়ে খুব বাজে কিছু হল৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আমার দুই ছাত্রের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টুর্র্ণমেন্ট ছিল৷ খুব খারপ হল’’৷
যাঁকে নিয়ে এত বড় ঘটনা সেই মেয়েদের কোচ জয়প্রকাশ এ দিন দিল্লি থেকে ট্রেন ধরেছেন শহকে ফেরার৷ বলছিলেন,‘‘সাইয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্র্তর জন্যই এটা হল৷ কয়েকমাস হল দায়িত্ব পেয়েছে৷ এসেই রাজনীতি করে দেশকে ডোবাল৷ অসম্ভব খারাপ লাগছে৷ মেয়েগুলো যেতে পারল না৷ আমাদের সব পরিশ্রম শেষ হল৷’’ জয়প্রকাশবাবুর দুই ছাত্রী আজ শুক্রবার ফেরার ট্রেন ধরবেন৷ প্রণতি বলছিলেন, ‘‘এত কষ্ট করে ট্রায়াল দিয়ে সবাইকে টপকে এক নম্বর হলাম৷ কিন্তু যাওয়াই হল না৷ খারাপ লাগছে৷ কিন্তু কোচ ছাড়া তো যাওয়া যায় না৷ জয়স্যারকে ছাড়া যাব না ঠিক করেই রেখেছিলাম৷’’ আর পাপিয়ার মন্তব্য, ‘‘জীবন প্রথম ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলাম ৷ যাওয়া হল না৷ কষ্ট হচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও বলছি, যিনি আমাদের গুরু সেই জয়স্যার না যেতে পারলে তো গিয়েও লাভ হত না৷’’