তিববত চিরকালই একটি স্বাধীন দেশ৷ তিববতীরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ও শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী৷ চীন আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে তিববতকে জোর করে নিজেদের কব্জায় এনেছে৷ কমিউনিষ্টদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা একসময় এশিয়ার বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও তিববতে সামরিক অভিযান চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে গ্রাস করে৷ ইউ এন ও-এর প্রতিবাদ ও পৃথিবীর অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিবাদের কোনও ধারই ধারেনি৷ এই আগ্রাসী মানসিকতার আরম্ভ হয় সেই মাও সে তুংয়ের আমলে৷ বর্তমান জিং পিয়াংও সেই নীতি নিয়ে চলেছে৷ দলাই লামা প্রাণের দায়ে কিছু অনুগামী নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন৷ তিনি তিববতের প্রধান ধর্মগুরু৷ সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই দলাই লামাকে চীন মোটেই সহ্য করতে পারে না৷ তিনি সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশে অতিথি হিসেবে মাত্র কয়েকদিনের জন্যে গমন করেন৷ তাতে চীনের গোঁসা হয়েছে৷ অরুণাচল চিরকালই ভারতবর্ষের অন্তর্গত৷ বর্তমানে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য রাজ্য৷ চীন অরুণাচলের বড় এক অংশ দাবী করছে তিববতের অংশ বলে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবী৷ তাছাড়া তিববতও কী চীনের? চীন তো তিববতকে জোর করে অধিকার করে রেখেছে৷ তিববতীরা এতে মোটেই সন্তুষ্ট নন৷ দলাই লামা অরুণাচলে বৌদ্ধদের আমন্ত্রণে গমন করেন৷ তিনি অন্য কোনও উদ্দেশ্যে যাননি৷ এতে চীনের এত গোঁসাটা কীসের ভারতের ওপর চীন রেগে বিষোদ্গার করে বলছে যে, ভারতের পশ্চিমে যে জম্মু-কশ্মীর সেখানে চাপ সৃষ্টি করবে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে৷ এটা তো নতুন হুমকী নয়৷ পাকিস্তানের সঙ্গে বেআইনী আঁতাত করে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ লাদাক যেটি হিমালয়ের পর্বতের অংশ তার ওপর দিয়ে রাস্তা বের করে নিয়েছে জোর করে৷ শুধু তাই নয়, চীনের বিদেশ মন্ত্রক সাংবাদিক সম্মেলন করে হুমকী দিয়েছে এই বলে যে ভারত দলাই লামাকে অরুণাচলে যেতে দিয়ে ক্ষতি করেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের৷ শুধু তাই নয়, চীনের আক্রমণের পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রিজিজু অরুণাচলকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেছেন বলে এতটাই চীনের উষ্মা যে গ্লোবাল টাইমস্ সম্পাদকীয়তে ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে চীনের সামরিক শক্তির কথা৷ চায়না ডেইলিও হুমকীর সুরে লিখেছে---ভূ রাজনৈতিক খেলায় চীনের সঙ্গে ভারত টেক্কা দিতে পারবে না৷ সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের জিডিপি-এর কথা৷ সেখানে বলা হয়েছে চীনের জিডিপি ভারতের তুলনায় অনেক বেশী৷ সামরিক ক্ষমতার জোরে চীন ভারত মহাসাগর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে৷ বলা হয়েছে দিল্লী যদি ইট ছোঁড়ে পাককেল ছুঁড়তে দ্বিধা করবে না বেজিং৷ তারপর চীন রাজনৈতিক তাস আরও জোর দিয়ে খেলবে কশ্মীর নিয়ে৷ এর সঙ্গে অবশ্যই মদত দেবে পাকিস্তান৷ সংবাদে প্রকাশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আগামী মাসে চীন সফরে যাবেন৷ পাকিস্তান চীনের দোসর৷ তাই দলাই লামার অরুণাচলে পদার্পণকে কেন্দ্র করে চীনের ভারতের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি৷ চীন ভুলে গেছে যে হিমালয়ের দক্ষিণের সবটাই ভারতের মধ্যে পড়ে৷ চীন যে বর্তমানে পৃথিবীতে একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের কারণ সেটা তো চীনের আশপাশের রাজ্যগুলি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ চীন তার দেশের জনগণকে রাজনৈতিক অধিকারই দেয়নি৷ চীনের জনগণ ভিতরে ভিতরে ফঁুসছে৷ তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যে ধীরে ধীরে তৈরী হচ্ছে৷ চীন কি ভুলে গেছে হিমালয় এলাকায় ভারতের প্রায় ৬৭ হাজার বর্গমাইল স্থান সে অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে? কোন মুখে সে অরুণাচলের দাবী করে? মোদ্দা কথা হ’ল দলাই লামা হলেন বিশ্ব নাগরিক, তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী৷ তিনি অরুণাচলে গিয়েছেন তাঁর পূর্ব নির্ধারিত ধর্মীয় সফর হিসেবে৷ এতে তার কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই৷ ভারতকে চীন ভুল বুঝে হুমকী দিচ্ছে৷ ভারতের ঘরোয়া ব্যাপারে চীন কোনও মন্তব্য করতে পারে না৷ দলাই লামার কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই৷ এ কথা সত্য সারা তিববত আজও তাদের প্রিয় দলাই লামাকে শ্রদ্ধা করে ও তাকেই তারা স্মরণ করে৷ এটাই জড়বাদী কমিউনিষ্ট চীনের শাসকগণ মোটেই সহ্য করে না৷ চীন প্রথম থেকে চায়নি ভারত দলাই লামাকে আশ্রয় দিক৷ কিন্তু চীন ভুলে গেছে যে ভারত আশ্রয়হীনদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে থাকে৷ তাই শ্রদ্ধেয় দলাই লামা ও তার কিছু অনুগামীকে আশ্রয় দেয় ভারত৷ ধর্মচারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা আছে৷ চীনের এ ব্যাপারে অহেতুক বেশী বাড়াবাড়ি করাটা মোটেই উচিত নয়৷ প্রবীণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী দলাই লামা চীনের অভিযোগকে নস্যাৎ করে বলেন---ভারত আমাকে কোনওদিনই ব্যবহার করে প্রতিবেশী চীনকে চ্যালেঞ্জ জানায় নি৷ চীন বরং তিববত ও চীনের উভয়ের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তিববতকে অর্থবহ ভাবে স্বায়ত্ব শাসনের সুযোগ করে দিক৷ তিনি জানান চীনে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ভারতকে সত্যই ভালবাসেন৷ কিন্তু সংকীর্ণমনা রাজনীতিকরা ভারতকে অন্য চোখে দেখে৷ ঠিক যেমন আমাকে ওরা রাক্ষসের চোখে দেখে৷ আমি তাহলে রাক্ষস মোটেই নয়৷ আর আমরা স্বাধীনতার কথা ভাবছি না৷ আমরা চীনের সঙ্গেই থাকতে চাই৷ আমরা চীনের সঙ্গে থেকে নিজেদের উন্নতি করতে চাই৷ তাহলে পারস্পরিক লাভ হবে৷
এরপরও কি চীন বলবে যে বোমডিলায় দলাই লামা পৌঁছেছেন বলে ভারত চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে৷ স্মরণে থাকে যে ১৯৮৩ খ্রীষ্টাব্দে ষষ্ট দলাই লামা জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ অরুণাচলের তাওয়াং জেলায়৷ তাছাড়া এটি তিববতী পীঠস্থানও বটে৷ যেমন কৈলাস পর্বত হ’ল সদাশিবের জন্মস্থান ও লীলাক্ষেত্র৷ হিমালয়ের অধিকাংশ স্থানে হিন্দুদের তীর্থস্থান আছে৷ যেমন মানস সরোবর হ’ল ভারতের পবিত্র তীর্থস্থান৷ এসব স্থান জোর করে চীন আটকে রেখেছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদকে জোর করে বাঁধ দিয়ে চীন ভারতের জলের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ এ সবই হ’ল চীনের আগ্রাসী মানসিকতা চীন জোর করে শক্তি প্রয়োগ করে তিববতকে কেড়ে নিয়েছে কারণ তিববতের তেমন প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না৷ এখন চীন গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে ভারতকে হুমকী দিচ্ছে, ভারতের জনগণ তাতে মোটেই ভীত নয়৷ ভারত জবাব দেবার জন্যে তৈরী৷ চীন যেন তা স্মরণে রাখে৷
অতিথিকে চিরকালই ভারত শ্রদ্ধা করে, সম্মান দেয়৷ চীনের যুক্তিবাদী ও নীতিবাদী জনগণ চিরকালই ভারতবর্ষকে আপনজন বলে স্মরণ করে, শ্রদ্ধা করে৷ ঠিক তেমনই চীনকে ভারত চিরকালের বন্ধু বলে অন্তরে স্থান দেয় ও বুকে টেনে নেয়৷ এটা ভারতের দুর্বলতা নয় বরং মহত্ত্ব৷ চীনের কমিউনিষ্ট শাসকগণকে সংযত হতে হবে৷ একটা কথা মনে রাখুক, ভারত মোটেই দুর্বল নয়৷
- Log in to post comments