এখন সময় জিটিএ বাতিল করা

লেখক
সুকুমার সরকার

দার্জিলিং, কার্শিয়াং কালিম্পং, নেপাল নয়৷ সেখানকার ভাষাও নেপালী নয়৷ ভূতাত্ত্বিক ভাবে সিকিমও বাঙলার অংশ, নৃতাত্ত্বিক ভাবে লেপচা ও বাঙালীর রাজবংশী রাই (রায়) জনজাতি৷ গোর্খারা অনেক পরে নেপাল থেকে এসে বসবাস করতে শুরু করেছে৷ গোর্খারা উক্ত ভূমির ভূমিপুত্র নয়৷ গোর্খারা নেপালের উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু৷ এখানে এসে তারা প্রথমে নিজেদের জাত্যাভিমানের প্রভাব বিস্তার করেছে ও পরে সরকারী সুযোগ পেতে উপজাতির খাতায় নাম লিখিয়েছে৷ এরা কোন্ যুক্তিতে গোর্খাল্যাণ্ড দাবী করে? এই দাবীর পিছনে না আছে তাদের ভৌম জাতিসত্তার সমর্থন, না আছে ভাষাগত উত্তরাধিকারের সমর্থন৷ এই দাবী যদি কেউ করতে চায় তার ন্যায্য অধিকার আছে লেপচাদের ও বাঙালী রাজবংশীদের৷ গোর্খাদের নয়৷ জনগোষ্ঠী হিসেবে গোর্খারা নিজেদের গোর্খা ভাষা চাইতে পারে৷ কিন্তু পাহাড়ে বাঙলা বা লেপচা ভাষা চলবে না এমন কথা বলার ধৃষ্টতা তারা পায় কোথা থেকে?

আসলে বামফ্রণ্টের আমলে জ্যোতি বসুরা যে ভুলের পাহাড় তৈরী করে দিয়ে গেছে এসব তারই বিষফল৷ সুবাস ঘিসিং বা বিমল গুরুং সেই ভুলের বিষবৃক্ষ৷ এর সমূল উৎপাটন দরকার৷ তার জন্যে দরকার ছিল লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন, রাই উন্নয়ন পর্ষদ গঠন৷ মমতা সরকার এই পথে হেঁটে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে যথেষ্ট সফলতা পেয়েছেন৷ আজ বিমল গুরুংদের যা কিছু পশ্চাদগামীতা তা ওই লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের শুরু থেকেই৷ এ ব্যাপারে মমতা সরকারকে সাধুবাদ জা নাতেই হয়৷ কিন্তু পাপশক্তিও তো থেমে থাকে না৷ তারাও মরণ-কামড় নিয়ে আসবে নেমে পড়ে৷ প্রশাসনকে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়৷

বামফ্রণ্টের একটা দুর্বলতা ছিল চীন, নেপাল৷ ওরা পরোক্ষে চেয়েছেন, দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং কমিউনিষ্ট চীন নেপালের করিডোর হোক৷ তাই তারা উক্ত তিন পাহাড়ী জনপদকে সুবাস ঘিসিংদের লিজ দিয়েছিল৷ বিমল গুরুং পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিষ্ট পার্টির ভুল সিদ্ধান্তের সুবাস ঘিসিং পরবর্তী বিষবৃক্ষ৷ মমতার প্রথমেই উচিত ছিল সেই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করা৷ কিন্তু তিনি তা না করে সেই বিষবৃক্ষে জল ঢাললেন জিটিএ গঠনের মধ্য দিয়ে৷ আজ পাহাড় নিয়ে মমতার শিরঃপীড়ার কারণ ওই ভুলটুকু৷  তবে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে মমতা সরকার পাহাড়ী-বাঙলার পাহাড়বাসীর উন্নয়নের স্বার্থে সম্প্রতি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাও যথার্থ৷

যে কমিউনিষ্ট প্রীতির কারণে বামপন্থীরা পাহাড়কে অশান্ত করে রেখেছিল মমতার তো সেই কমিউনিষ্ট প্রীতির ব্যাপার নেই৷ সুতরাং মমতার এটাই উপযুক্ত সময়  বিমল গুরুংদের শক্ত হাতে দমন করার৷ এমনিতেই লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হওয়ায় বিমল গুরুংরা অনেকটা দমে গেছে৷ এবার এই অশান্তির সমূল উৎপাটন দরকার৷

গোর্খারা নেপাল থেকে লেপচা বাঙলায় এসেছে ভাল কথা৷ লেপচা বাঙলাকে আপন স্বদেশ ভুমি মনে করে সুখে শান্তিতে থাকুক৷ নিজেদের গোর্খা ভাষায় কথা বলতে চায়, বলুক৷ তাই বলে লেপচা বা বাঙলা ভাষা পাহাড়ে বলতে দেব না, পড়তে দেব না এমনটি বলার ধৃষ্টতা পায় কোথা থেকে৷

পৃথিবীর যে কোন ভৌম অঞ্চল থেকে যে কেউ পৃথিবীর যে কোন ভৌম অঞ্চলে গিয়ে বসবাস করতে পারে৷ কিন্তু যে ভৌম অঞ্চলে তিনি বা তারা বসবাস করবেন নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সেই ভৌম অঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে একাত্ম করে নেবেন এটাই নোতুন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের মত৷ সেই অর্থে বিমল গুরুংরা নেপাল থেকে এসে বাঙলায় থাকতেইপারেন৷ নিজেদের ভাষা সংসৃকতির উন্নতিও করাব প্রচেষ্টা গ্রহণ করতেও পারেন৷ কিন্তু, ভূমিপুত্র লেপচা-রাই-বাঙালীদের ভাষা-সংসৃকতি নিয়ে কোনও বিরূপ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ এ ব্যাপারে পাহাড় সংক্রান্ত মমতা সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত যথার্থ৷ তবে ভুল হয়েছিল ক্ষমতায় এসে তড়িঘড়ি ‘গোর্খাল্যাণ্ড টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন’ গঠন করা৷ সে ভুলের সংশোধনও করা যেতে পারে৷

সম্প্রতি পাহাড় নিয়ে মমতা সরকার যে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আছে তাতে এখনই উপযুক্ত সময় জিটিএ বাতিল করে দেওয়া৷ বিমল গুরুংদের ধবংসাত্মক কাজকর্মকে কঠোর হাতে দমন করা৷ এ ব্যাপারে পাহাড়ের আপামর জনগণের সমর্থন সরকার পেয়ে যাবে৷ মনে রাখতে হবে গোর্খারাই পাহাড়ের একমাত্র জনজাতি নয়৷ সংখ্যাগরিষ্ঠও নয়৷ পাহাড় হাসবে লেপচা, রাই, বাঙালী ও গোর্খাদের সমবেত মিলন সংসৃকতিতে৷ এ ব্যাপারে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে মমতা সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকা উচিত৷ কোনক্রমেই বিমল গুরুংদের অন্যায় আবদারের প্রতি দুর্বল মনোভাব দেখালে চলবে না৷