অসমে একদিকে এন.আর.সির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া, তারপর আবার ডি-ভোটার (ডাউটফুল-ভোটার)-এর নোটিশ, ওদিকে আলফার হুমকি--- এই ত্রিফলা আঘাতে মানসিক চাপে পড়ে আত্মহত্যা করল অসমের ও দলাবাড়ি জেলার হরিশিঙা থানার অন্তর্গত ঘাগ্রা উলুবাড়ি গ্রামের বাসিন্দায় দীপক দেবনাথ (৪৯)৷ তাঁর ১৯৭১ সালের লিগ্যাল ডেটা রয়েছে৷ সেই অনুসারে এন.আর.সির প্রথম তালিকায় তাঁর নামও উঠেছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় তালিকায় আবার তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়৷ তিনি তখন এন.আর.সি কেন্দ্রে যোগাযোগ করেন৷ আবার নূতন করে আবেদন পত্র জমা দেওয়া হয়৷ এরপরে বর্ডার পুলিশ তাঁর নামে আবার ডি-ভোটারের নোটিশ পাঠিয়ে দেয়৷ ‘ডি-ভোটার’ মানে ডাউটফুল ভোটার অর্থাৎ সন্দেহজনক ভোটার৷ এই অবস্থায় দিশাহারা হয়ে পড়েন দীপকবাবু৷ এই মানসিক চাপে শেষ পর্যন্ত তিনি গত ২৮শে অক্টোবর গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন৷
কয়েকদিন আগে গত ২১শে অক্টোবর ১৯৫১ সালের অসমের বাসিন্দা হিসেবে নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এন.আর.সি তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ায় ও তারপর এন.আর.সি কেন্দ্র থেকে তাঁকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করায় অসমের দলগাঁওয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও আইনজীবী নীরদ বরণ দাস আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ নীরদবরণ বাবু তাঁর নাগরিকত্ত্বের সমস্ত বৈধ নথিপত্র নিয়ে এন.আর.সি অফিসে থেকে শুরু করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ দিনের পর দিন এইভাবে সরকারী অফিস ও আদালতে ঘোরাঘুরি করেও কোনো কাজ না হওয়ার মানসিক চাপে তিনিও আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷
গত ৯ই সেপ্ঢেম্বর একই কারণে আত্মহত্যা করেন বাকসা জেলার বিনয় চন্দ৷ এরপর ওদলাবাড়ি জেলার গোপালচন্দ্র দাস, টাংলের বিমলচন্দ্র ঘোষ, একই কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷
গত ২৮শে অক্টোবর দীপক দেবনাথ আত্মহত্যা করার পর এলাকার বাঙালীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে দীপক দেবনাথের মৃতদেহ নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন৷ জনতার মধ্যে থেকে শ্লোগান ওঠে, ‘এন.আর.সির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা মুর্দাবাদ’, ‘মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ মুর্দাবাদ’, ‘স্বরাষ্ট্র বিভাগ হায় হায়’, ‘বাঙালীর ওপর অত্যাচার বন্ধ কর’,’ বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি করা অসম সরকার হুঁশিয়ার’ ইত্যাদি৷
জোরদার অভিযোগ উঠেছে অসমে এন.আর.সির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রতীক হাজেলা বেছে বেছে বাঙালীদেরই নানান্ ছলে বিদেশী সাজাচ্ছেন৷ এর ফলে বাঙালীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ সম্প্রতি এ পর্যন্ত অন্ততঃ ২০ জন বাঙালী এই কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে সংবাদে প্রকাশ৷