৮ই এপ্রিল ঃ পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পেশকে কেন্দ্র করে, প্রায় সারা রাজ্য জুড়েই সন্ত্রাসের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে৷ প্রতিপক্ষের প্রার্থী যাতে মনোনয়ন পেশ করতে না পারে তার জন্যে হুমকি, মারপিট, খুন-জখমও চলেছে৷ বোমা-পিস্তল প্রভৃতি আগ্ণেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হয়েছে৷ বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর শাসকদলের দিকে৷ আশ্চর্য হতে হয়, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক জয় সন্দেহাতীত৷ তবুও তাদের ধনুক ভাঙ্গা পণ---যেন একজনও বিরোধী না জেতে৷ গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে৷ বিরোধিতা থাকলে তবে শাসকগোষ্ঠীর দোষত্রুটিকে তারা ধরিয়ে দিতে পারে৷ সবাইকে নিয়েই জনগণের সার্বিক কল্যাণ করা সম্ভব৷ কিন্তু বিরোধিতাই মানব না---এ তো স্বেচ্ছাচারী প্রবণতা! মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রভৃতি জেলা থেকে শাসক দলের অন্যান্য দলের প্রার্থীদের প্রতি জোর-জুলুমের খবর এসেছে৷ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশে বাধা প্রদান করা হচ্ছে৷ তবে শুধু যে শাসক দলই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাচ্ছে তাও নয়৷ আসলে নির্বাচনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধীদের ওপর জুলুমবাজীর এই ‘সংসৃকতি’টা এ রাজ্যে মূলতঃ বাম আমলে সিপিএম দলই আমদানি করেছে৷ চরম স্বৈরাচারীতা ও একনায়কতন্ত্রী মনোভাবের পরিচয় তারা দিয়েছে৷ আর বর্তমানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সিপিএমের ওই হার্মাদ বাহিনীই তৃণমূলে প্রবেশ করে এই সব অশান্তির সৃষ্টি করছে৷
এ রাজ্যেও বিজেপিও অন্যান্য দলের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়৷ বীরভূমের মহম্মদবাজারে ঝাড়খণ্ড থেকে গুণ্ডা বাহিনী এনে এরা মুড়ি-মুড়কির মত বোমাবাজী করার খবর এসেছে৷ অন্যান্য জেলার বহুস্থানেও বিজেপির ক্যাডার বাহিনী হাঙ্গামা চালিয়েছে৷ এই ভাবে সারা রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য চলেছে৷
বিজেপির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে শাসক দলের সন্ত্রাস সৃষ্টির সঙ্গে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পেশ করতে পারছে না৷ এই অভিযোগ তুলে মনোনয়নের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়৷ বলা বাহুল্য ১লা এপ্রিল থেকে ৯ই এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময়সীমা৷ সুপ্রিম কোর্টে বিজেপির অন্যান্য দাবীর মধ্যে ছিল অনলাইনে মনোনয়নপত্র পেশের সুবিধা দিতে হবে৷ প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে হবে ও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করাতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানায়, তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবেন না৷ প্রার্থীরা তাঁদের বক্তব্য নির্বাচন কমিশনে পেশ করুন৷ নির্বাচন কমিশনে তো বিরোধীরা অভিযোগ করেছেই৷ এরপর নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ৯ই এপ্রিল সোমবার রাতে নির্দেশিকা জারী করেন যে, ১০ এপ্রিল, মঙ্গলবারও মনোনয়ন পত্র পেশ করা যাবে৷ কিন্তু পরে আবার ১০ই এপ্রিল সকালে নির্বাচন কমিশন তার শেষ নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেয়৷ অর্থাৎ ১০ তারিখে মনোনয়নপত্র দাখিলের আর সুযোগ থাকল না৷ আগের দিনের নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও পরের দিনে আবার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার---এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের নয়া নির্দেশিকা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিরোধীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনি নাইডু সরণীতে রাজ্য নির্বাচন অফিসের সামনে ১৪৪ ধারা জারী হয়েছে৷ ৮ই এপ্রিল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিজেপি, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি অব্যাহত৷ বামেরা নির্বাচন কমিশনারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধর্মঘটেও নামতে পারে বলে জানিয়েছে৷ সারা রাজ্য এখন এই ইস্যুতে আন্দোলনে উত্তাল৷