গণতন্ত্রের স্বার্থে ভারত সরকার এফ.আর.ডি.আই. বিল আইনে পরিণত করা থেকে বিরত থাকুন

লেখক
প্রবীর সরকার

এবার বিজেপি সরকার লোকসভায় ‘‘এফ.আর.ডি . আই নামে আর্থিক বিল আনছে যে কালা কানুন গরিবের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাঙ্কগুলি নিয়ে নিতে পারে গ্রাহকদের সম্মতি ব্যতীতা৷  এই কথা বলা হচ্ছে এই কারণে তা হলো ছোট ছোট আমানতকারীরা এই কালা কানুনে নিঃস্ব হয়ে যাবেন৷  গত১৯৬১ সালের  আর্থিক সংস্থান বিষয়ে একটি আইন করা হয় যে আইনে ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের কিছুটা নিরাপত্তা ছিল গচ্ছিত টাকার ব্যাপারে তাতে  এক লক্ষ  টাকার ইনসোরেন্স গ্যারান্টি ছিল৷ এই বিল পাশ হলে তার আর থাকব না৷

চরম বেকার সমস্যা, অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেই বোঝা যায় সরকার হালেপানি না পেয়েই নানাভাবে একদিকে জনগণের উপর করচাপিয়ে ও আর্থিক সংকোচন ঘটিয়ে দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষের উপর আর্থিক শোষন চালিয়ে যাবার ফন্দি করেছে৷ এটা সেই কালাকানুুন যা নিঃস্ব করে দেবে  দেশের  হতভাগ্য গরিব জনগণকে৷  এই কালাকানুুন বিশেষজ্ঞদের একাংশে-এর মতে আমানতকারী টাকার উপর আমানতকারীর চেয়ে ব্যাঙ্কগুলির অধিকার বেশী হবে৷

তবে বর্ত্তমানে দেখা যাচ্ছে আমানতকারীদের ব্যাঙ্কে জমানো টাকা যেটা সেভিং অ্যাকাউন্টে আছে সেটা ব্যাঙ্ক চাইলে গ্রাহকদের না জানিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সেই টাকাফিক্সড ডিপোসিট করে দিতে পারবে৷ তাও অতি অল্পসুদে৷

এটা হয়েছে তার মূল কারণ কর্র্পেরেট সংস্থাগুলো ব্যাঙ্কের ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না৷ যেহেতু ভারতের বহুদলীয় গণতন্ত্র তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত তাই তাদের সম্পত্তিতে হাত দিতে না পেরে নোতুন আইন করে গরিব টাকায় হাত দেওয়ার আইন কালাকানুন করছে৷ গত ১৫ই ডিসেম্বর থেকে লোকসভা শুরু হয়েছে৷ তারমধ্যেই এই কালাকানুন পাশ করার  প্রচেষ্টা সরকার করবে৷ স্ট্যান্ডিং কমিটিতে   বিলটি পড়ে আছে৷  বিরোধীরা সমবেত ভাবে বিরোধিতা করছেন৷ যেহেতু লোকসভায়  বিরোধী পক্ষ কম সংখ্যায় আছেন তাই এটিকে পাশ করানো বর্ত্তমান বিজেপি সরকারের পক্ষে অসুবিধা নেই কিন্তু উচ্চ কক্ষে কিছুটা অসুবিধা হবে বলেই মনে হয়৷ 

যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই বিলে আর্থিক সমস্যাগুলি ও আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে৷  তবে আমানতকারীরা কীভাবে আর্থিক নিরাপত্তা পাবেন সে বিষয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেন নি৷  মনে রাখা দরকার ভারতে প্রথমবার আইন আনছে এক নির্র্বচিত সরকার৷  যে সরকার বার বার বলে থাকেন ভারত বিশ্বের প্রথম সারির সার্থক গণতান্ত্রিক সরকার৷ সংবিধানের মতে সরকার জনগণের , জনগণের জন্য ও জনগণের দ্বারা নির্র্বচিত৷

 অত্যন্ত দুঃখের কথা সংসদীয়  গণতন্ত্রে বহুদলীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘ ৭০ বছরের শাসনে হতভাগ্য জনগণই রক্তশূন্য হয়েছেন বার বার৷

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় জনগণ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ও জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম চালাতে যে বিপুল  পরিমান খরচ বহন  করতে  হয় সবটাই  প্রায় গরিব মানুষের ঘাড়ে চাপে৷ ফলে করের বোঝায় তারাই চিঁড়ে চ্যাপ্ঢা হয়ে পড়ছে দিনের পর দিন৷

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন দিতেই ও সরকারী ঠাট বাট রক্ষা করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের কর বাবদ রাজকোষ শূণ্য হয়ে যাচ্ছে৷ তাতে হতভাগ্য রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছে৷ ফলে রাজ্যসরকারও  নানাভাবে কর চাপিয়ে তাদের শোষনের মাত্রা বাড়াচ্ছেন৷ ভারতের শাসন নিয়ন্ত্রণ করছে মূলতঃ কর্র্পেরেটর গণ যারা দেশের ভাগ্যবিধাতা৷ তাদেরই ধনে পুতে  লক্ষ্মীলাভ  হচ্ছে৷ তাদেরই হাতে ভারতের মোট স্থাবর ও  অস্থাবর সম্পত্তির প্রায় অর্ধেকের বেশী প্রায় ৫৩ শতাংশ আছে৷ যাদের সংখ্যা মোট  জনসংখ্যার মোট সংখ্যার  মাত্র ১ শতাংশ৷ ২০১৫ সালের ভারতীয়  ধনীদের  তালিকায় মাত্র ৯৭ জন ভাগ্যবান বিলিনিয়ার আছেন৷

সংবাদে জানা যায় যে সরকার  বড়ো বড়ো কর্র্পেরেটরদের আয়কর  ছাড় দেন বছরে ৮০০ বিলিয়ন টাকা৷ যাকে নাকি বলা হয় ‘‘কর উৎসাহ’’ বাবদ  ছাড়৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয় ছোট  মাঝারি  কেলেঙ্কারী বাদ দিয়ে  বড়ো মাপের  কেলেঙ্কারীতে  ৯২টা কেলেঙ্কারী  ঘটিয়ে সরকারী কোষাগার থেকে প্রায় ৭৩ লক্ষ কোটি টাকা  লুঠ করা হয়েছে৷ সরকার নীরব দোষীদের শান্তি  দিতে সুদূর  পরাহত ! সর্ষের মধ্যেই ভূত! এই তো হতভাগ্য দেশের  গণতন্ত্রের হাল ! শাসনে যারাই আসে তারাই রাজশক্তির দৌলতে  অধিকাংশই লক্ষ্মীর বর পুত্র হয়ে যায়৷ অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক!

তবে কিছু  যে ভালো নেই তা কিন্তু নয়৷ তাঁদের সংখ্যা নগণ্য মাত্র৷ রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নেও  পরিবারকেন্দ্রীক শাসনে এদেশের রাজনীতির মান  নিম্নমুখী তাই দেশে দুর্নীতির  প্রাদুর্র্ভব বেশী৷  সৎনীতিবাদীরা জঘন্য দলতন্ত্রে স্থান পান না৷  বর্ত্তমান রাজনীতি চলছে  ছল, বল, কৌশল ও বাগাম্বরে৷ তাই হতভাগ্য জনগণ দিশেহারা ও শোষিত৷

তাই বর্ত্তমান সরকার হতভাগ্য জনগণের কথা চিন্তা করে  গরিব জনগণের কষ্টার্জিত টাকা থেকে ব্যাঙ্কে  রাখা নজর দয়া করে সরিয়ে রাখুন৷ তাদের আস্থা অর্জন করুন৷