গণতন্ত্রের স্বার্থে তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে এসে প্রকৃত দেশনেতা ও নেত্রীর স্থান পূরণ করুক

লেখক
প্রভাত খাঁ

দীর্ঘ ৭০ বছর পর এই হতভাগ্য পশ্চিমবাঙলা ও সারা ভারতের রাজ্যগুলির ও খোদ দিল্লীর যে আইন শৃঙ্খলা ও আর্থিক উন্নয়নের বহর তাতেই বোঝা যায় এদেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার কতটা অধঃপতন ঘটেছে৷ শুধু নোংরা রাজনৈতিক কাজিয়া চলছে৷ সারা রাষ্ট্রের আর্থিক দুরবস্থার সংবাদ সারা পৃথিবী জানে৷ এরা সর্বদা কেন্দ্র কি রাজ্য,  সার্বিক উন্নতির ফাটা ঢাক পিটিয়ে চলেছে৷  কলকারখানা সবই প্রায় বন্ধ ৷ চাকরীর কোন সংবাদই নেই ভারতের রেলসংস্থা সবচেয়ে একটি সর্বভারতীয় কর্মসংস্থানের আশ্রয়স্থল৷ সেখানে যেন শনির দশা! রেল পরিসেবাটা একেবারে ধসে গেছে নূতন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে রেলে এত দুর্ঘটনা ঘটছে ও গাড়ী ওলটাচ্ছে যা কহতব্য নয়৷  যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটছে ৷ শুধু তাই নয়,  যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা এমনকি দুরপাল্লার ট্রেনগুলিতে যে ভাবে খাদ্য ও পরিষেবা দান করা হচ্ছে, তাতে যাত্রীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট৷ সঠিক সময় গাড়ী ছাড়ছে না আর অনেক বিলম্বে গাড়ী গন্তব্যস্থানে পৌঁছচ্ছে৷ এতে প্রশাসনের কোন হেলদোলই নেই !  শুধু মামুলি দায় সাড়া বক্তব্য রেখেই কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন৷ প্রশাসন  নিজেদের দায়িত্ব পালনে একেবারেই ব্যর্থ৷ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ ও অন্যান্য মন্ত্রীগণের দেশসেবা ও বক্তব্য রাখার যে মান তা দেখে শুণে ভাবতে হয় আমরা কোন রাষ্ট্রে বাস করছি! ধনীদের আর্থিক অবস্থা বেড়েই চলেছে, আর কোটি কোটি গরিব অসহায় মানুষ শোষণের জাতাকলে চিরে চ্যাপ্ঢা হয়ে আধমরা হয়ে পড়েছে৷ কোন সুরাহা নেই৷ প্রতিমাসে রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন তেলের দাম বেড়েই চলেছে৷ রেশনে যা দেওয়া হয় তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় এতই কম যে বলার নয়৷ চাল গম সামান্য  যা দেওয়া হয়  তাতে কারোই পুরোপুরি ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় না৷ সরকারী তোষাখানার টাকা কর্মচারী পুষতেই শেষ হয়ে যায়৷  দেশের সেবাটা হবে কী করে? সরকারকে ব্যয়সংকোচে কঠোর হতে হবে ৷ সংবাদে শোণা যায় দু’একজন নেতা বা নেত্রী আছেন যাঁরা কোন অর্থ নেন না৷  তাতে কতটা কাজ হয়? ভারতের মত উন্নতি কামী গরিব দেশের রেশনিং ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে৷  বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও  অক্ষম নাগরিকদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷  তার পরিবর্তে  তো গরিব জনগণের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের  সুদ বছর বছর কমেই  যাচ্ছে৷ এ কেমন শাসন ব্যবস্থা ? চরম আর্থিক সংকটে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ব্যর্থনীতি সারা দেশকে ডোবোচ্ছে ৷   আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ তেলের , ডিজেলের দাম যে হারে কমে, সেই হারে কিন্তু সরকার দাম না কমিয়ে জনগণের ঘাড়ে দ্রব্যমূল্যের বোঝা বাড়িয়ে শোষণ করেই চলেছে৷ যে কটি সিদ্ধান্ত এই কেন্দ্রীয় সরকার  নিয়েছেন তার সবকটিই দেশকে ডুবিয়েছে৷  বিশেষ করে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষকে হতাশ করেছে৷  সব জিনিসের  দাম  আকাশছোঁয়া হচ্ছে৷ আশ্চর্যের ব্যাপার  প্রাণদায়ী ওষুধ, গুরুত্বপূর্ণ নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় জিনিস, এর দাম কমা তো দুরের কথা প্রচন্ডভাবেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কমিশন প্রায়ই ও খোলা দোকানে উঠে যাচ্ছে ৷  ফোরেরা  নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এতই বাড়িয়েছে যে গরিবের পক্ষে  তা সংগ্রহ করা দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এ কেমন স্বাধীন দেশের সরকার৷ প্রতিটি বাড়ীতে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত  কর্মক্ষম যুবক-যুবতী বেকার হয়ে বসে আছে ৷ শেষ পর্যন্ত এই বেকার যুবক-যুবতী বিপথগামী হচ্ছে৷ অধিকাংশ স্থানে অনেক এমন ঘটনা ঘটছে তা সভ্যতাকে লজ্জা দিচ্ছে৷ এসব তো স্বাধীন দেশে আমরা আশা করিনি৷ বড় দু-চারটা  কলকারখানা খুললে তো আর বেকার সম্যসা দুর হবে না৷ চাই ব্যাপক ক্ষুদ্র কুটির শিল্প৷ ভারতের মতো দেশে সেটা হবে মূলতঃ কৃষিভিত্তিক ও কৃষিসহায়ক শিল্প যা গড়ে উঠুক ব্লকভিত্তিতে ৷ তাই ব্যাপকভাবে কৃষির উন্নতি ঘটাতে হবে৷  লোকালাইস নয়, ডিসেন্ট্রালাইস পথে  বিভিন্নস্থানে এই শিল্প গড়তে হবে৷ তাতে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হবে৷ শহর নগরে, শিল্পাঞ্চলে যেভাবে মানুষের অস্বাভাবিক ভীড় তাতে  অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক৷ 

শিক্ষাব্যবস্থায় স্বাস্থ্য, নৈতিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা অত্যন্ত আবশ্যক ৷ ভারতীয় ধ্যানধারণাকে দুরে ঠেলে দিয়ে  শুধু পশ্চিমি শিক্ষা দান করলে  মানুষ গড়ার আসস উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হবে৷  ভারতের মাটিতে ভারতের মহান আদর্শ,  কৃষ্টি সংসৃকতিকে মূল্য দিয়ে  সার্থক ভারতীয় গড়ে তোলার পবিত্র পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তবে দেশ বাঁচবে৷  ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দেশকে যথার্থভাবে গড়ে তোলা যাবে না৷ ভারতকে ভারতের মতো করে গড়ে তুলতে হবে নব্যমানবতাবাদী মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৷

মনে রাখতে হবে , সেবা ও ত্যাগব্রতী শাসক আর  সেবাপরায়ণ ও ত্যাগব্রতী নাগরিকগণই পারে সেই নতুন ভারত গড়তে৷ ভোগবাদী মানসিকতা তো ভারতের লক্ষ্য ছিল না৷  সবাইকে নিয়ে ---এমনকি পশুপক্ষী , তরুলতাসহ প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে  যারা মানবতার সেবায় ব্রতী তারাই প্রকৃতপক্ষে দেশকে  যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারেন৷ তাদেরই নেতৃত্বে এক মহান আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে ভারত গড়ে উঠতে পারবে৷ যাকে দেখে সারা বিশ্ব নতুন পথের সন্ধান পাবে ৷ ভারত বিশ্বে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আজ স্বার্র্থন্বেষী ধান্দাবাজ কিছু অদূরদর্শী দেশনেতা  দেশকে টুকরো টুকরো করে  ক্ষমতা লাভের  মোহে দেশের সর্বনাশ করে গেছেন৷  সেই দুরারোগ্য ক্যান্সারের ক্ষতে দেশকে ভুগতে হচ্ছে৷ আর বর্তমানেও কিছু স্বার্র্থন্বেষী নেতা সেই ‘ডিভাইড এ্যান্ড রুল’ অনুসরন করে  দেশ শাসনের লাঠি ঘোড়াচ্ছেন ৷ তাই এ দেশের কী কল্যাণ হবে!  চরম নোংরা দলবাজিতে  দেশের গণতন্ত্রের নাভিঃশ্বাস উঠছে ৷ কই সেই নীতিবাদী সৎ দেশসেবকগণ তো দেশ সেবায় অদ্যাবধি এলেন না৷  তাই এদেশে সৎ নীতিবাদী মানুষেরই বড় অভাব৷ নেতাদের মনে রাখতে হবে নিছক আত্মসুখের পেছনে  ঊধর্বশ্বাসে ছুটে প্রকৃত দেশ নেতা হওয়া যায় না৷ তাঁদের হতে হবে সৎ ও নীতিবাদী --- আধ্যাত্মিকতায়  আত্মনিবেদিত সম সমাজতত্ত্বে বিশ্বাসী৷ জীবসেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে যাঁরা নিঃশ্বার্থভাবে কাজ করবেন তাঁরাই প্রকৃত দেশনেতা ও নেত্রী বলে গণ্য হবেন৷ এই ধরণের মহান মানুষের বড়ই অভাব নোংরা দলবাজিটাই দেশকে গোল্লায় পাঠাচ্ছে৷ এতে গণতন্ত্রের নাভিঃশ্বাস উঠছে৷ মনে রাখতে হবে বিরোধীহীন দণতান্ত্রিক সরকার কখনও দেশ সেবক হয়ে ওঠে  না৷  তাঁরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে ৷ এর উদাহরণ ভারতবাসী দেখেছেন৷  তাই নেতা ও নেত্রীগণ আত্মসচেতন হন ৷ বিশেষ করে  গণতন্ত্রের স্বার্থে আজকের যুবক-যুবতীরা এগিয়ে এসে  প্রকৃত দেশনেতা ও নেত্রীর স্থান পূরণ করুক৷