গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলনের  অযৌক্তিকতা

লেখক
অাচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

আবার দার্জিলিং ‘গোর্খাল্যান্ড’ আন্দোলেনে তেতে উঠেছে পুলিশের গাড়ীতে আগুন ধরানো, সরকারী সম্পত্তি  ও  অফিস জ্বালানো, নানান স্থানে পুলিশ-গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ---এভাবে দার্জিলিং অশান্ত হয়ে উঠেছে৷

বিমল গুরুংরা সরাসরি পৃথক ‘গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবীতে এই আন্দোলন করছে৷ সুবাস ঘিসিং-এর জি-এন-এল-এফও তাদের সঙ্গে ঐক্যমত্যে পৌঁছে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে সামিল হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৷

কোন্ যুক্তিতে গোর্খাল্যান্ড? দার্জিলিং কি গোর্খাদের আদি বাসস্থান? না---তা তো নয়! এটা সমস্ত ঐতিহাসিকই স্বীকার করেন৷ এখানকার মূল অধিবাসী লেপচা ও ভুটিয়া যাঁরা কোচজাতিভুক্ত আদি বাঙালীদেরই অংশ বিশেষ৷

তাই দার্জিলিং  আদৌ গোর্খাদের আদি বাসস্থান নয়৷ তা হলে এরা এল কোথা থেকে? এরা নোপালের অন্তর্গত একটি বিশেষ এলাকার বাসিন্দা৷ জীবিকার সন্ধানে এরা নেপাল ছেড়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে  প্রবেশ করে৷

১৯৫০সালে নেপালের সাথে ভারতের এক চুক্তি হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল জীবিকার সন্ধানে নেপালেরগোর্খাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠী ভারতে আসতে পারে, তারা এখানে জীবিকাও অর্জন করতে পারে, কিন্তু ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না৷

তারপর তারা দলে দলে দার্জিলিংয়ে এসেছে৷ পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাহায্যে তারা অনেকে এখানকার নাগরিকত্ব  অর্জন করে’ছে৷ এটাও বিশেষ আপত্তিজনক ছিল না৷

কিন্তু এখানে এরা নাগরিকত্ব অর্জন করে এখন এরা বাংলা থেকে দার্জিলিংকে ছিনিয়ে নিয়ে পৃথক রাজ্য তৈরী করতে চায়৷

বর্তমানে দার্জিলিংয়ে যে সমস্ত নেপালী রয়েছে সবাই কিন্তু গোর্খা নয়৷  গোর্খা ছাড়াও নেওয়ারী, তামাং  প্রভৃতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠী রয়েছে৷  কূটকৌশলী গোর্খা নেতারা সবাইকে গোর্খা বলে  দাবী করে যা পুরোপুরি অনৈতিহাসিক৷  তাই এখানে বর্তমানে যারা দার্জিলিংয়ে বাস করছে, তাদের একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র গোর্খা, তবু গায়ের জোরে---সন্ত্রাসের আবহ সৃষ্টি করে সবাইকে গোর্খা বলে পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবাংলার বুকে ছুরি চালাতে চায়৷

মোরারজী দেশাই যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি দার্জিলিংএ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকারীদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন,  গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন যদি করতে চাও,যাও নেপালে গিয়ে আন্দোলন কর ৷ এখানে নয়৷

আসলে বহিরাগত গোর্খা বা নেপালীদের মধ্যে ‘গোর্খাল্যান্ডে’র সংকীর্ণ সেন্টিমেন্ট ঢুকিয়েছে কম্যুনিষ্ট পার্টি৷ ওরাই গোর্খাদের এইভাবে উস্কিয়ে তাদের হাত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিল৷ তাই কম্যুনিষ্টরাই আসলে গোর্খা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে৷ কম্যুনিষ্টরা সর্বত্রই এইভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে হাত করার রাজনৈতিক কুটকৌশলের জন্মদাতা৷

কিন্তু যৌক্তিক দিক থেকে বিচার করলে প:বঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দার্জিলিং ভেঙ্গে গোর্খাল্যান্ড বানানোর পেছনে  কোনো ন্যায়সঙ্গত যুক্তি নেই৷  সরল জনসাধারণকে এইভাবে নানান্ সেন্টিমেন্ট  দিয়ে ক্ষমতা লাভ করার কৌশল করে ধূর্ত রাজনৈতিক নেতারা৷ এরা স্থানীয় মানুষের উন্নয়ন আদৌ চায় না৷ তাই আগে জি এন এল এফ ও বর্তমানকালে জিটিএ-র নামে রাজ্য ও কেন্দ্র যে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, তার সিংহভাগ আত্মসাৎ করেছে৷ তাই এখন  অডিট-এর কথা তোলায় জি টি এ-নেতারা হিংসাত্মক আন্দোলনের পথে গিয়ে অডিট বন্ধ করতে চায়৷

বাঙালীদের আজ সচেতন হতে হবে৷ এককালে বিশাল বঙ্গভূমিকে ছাটতে ছাটতে শোষকগোষ্ঠী আসল বঙ্গভূমির এক অতি ক্ষুদ্র ভগ্ণাংশকে  প:বঙ্গ নামে বাঁচিয়ে রেখেছে৷ এখন এই ভারতে বাঙালীর  নিজস্ব ভূমি বলে এই প:বঙ্গটুকুই  দাবী করতে পারি৷ আবার একেও দুটুকরো করে এর থেকে দার্জিলিংকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ এর পেছনে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে শোষক পঁুজিপতি গোষ্ঠীর মদত আছে৷

এখন বাঙালীদের আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না সর্বত্র বাঙালীদের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ৷