আবার আলু চাষীর আত্মহত্যা গত ফেব্রুয়ারীতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার অন্তর্গত গোপালশাল গ্রামে গোপাল নন্দী নামে এক আলুচাষী আত্মহত্যা করেছিল৷ মহাজনের কাছে সার ও আলুবীজ কেনার জন্যে টাকা ধার নিয়ে দেড় বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিল৷ কিন্তু আলুর ঠিক দাম না পাওয়ায়, কীভাবে সে ঋণের টাকা শোধ করবে--- এই চিন্তাতেই শেষ পর্যন্ত গলায় দড়ি দিয়েছিল৷ এবারও সেই হুবহু একই চিত্র৷ এবারও সেই পশ্চিমমেদিনীপুর জেলার আনন্দপুর থানার বেউচাবাঁধি গ্রামের স্বপন হাজরা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করল৷ এবারও স্বপন হাজরা মহাজনের কাছে টাকা ধার করে তার দশ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিল৷ কিন্তু আলুর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে সে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল৷ এইভাবে, সমস্ত আলু চাষীরাই কম-বেশী হতাশার শিকার৷ আলু উৎপাদন করতে যে পরিমাণ ব্যয় করতে হয়েছে, উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে না৷ তার ওপর সম্প্রতি অধিক বর্ষণেও প্রচুর আলু মাটির নীচেই পচতে শুরু করেছে৷ এ অবস্থায় আলু চাষীদের হতাশা বহুগুণ বেড়ে গেছে৷ এই অবস্থা প্রায় প্রতি বছরই হচ্ছে৷ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তার ওপর এখন নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে চাষীদের লড়াই করতে হয়৷ এই ভাবেই সমস্ত দেশবাসীর মুখে যারা অন্ন যুগিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটায় সেই চাষীদের মুখে হাসি নেই, হতাশার কালো ছাযা তাদের গ্রাস করেছে৷ কেবল আলু চাষের ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্ন সব্জি বা ধান চাষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা দেশেরই এই একই চিত্র, বছরের পর বছর এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷ একটি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, গত ২০ বছরে ২০ হাজারের বেশী চাষী আত্মহত্যা করেছে৷ দেশে উদারনীতি চলার ফলে এই সম্ভাবনা ক্রমবর্ধমান প্রতিবছর চাষীর আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েই চলেছে যে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ে এদেশে লক্ষ্মীর সিংহাসন বলে লোকে মনে করে৷ সেই মহারাষ্ট্রেই প্রতিবছর গড়ে তিন হাজার চাষী আত্মহত্যা করে সারা দেশের চিত্র এর চেয়েও ভয়ঙ্কর৷
সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়