জোট রাজনীতির বিকল্প

লেখক
দীপক দেব

ক্ষমতাসীন প্রধান শাসক পক্ষকে কেবল ক্ষমতাচ্যুত  করার জন্য, সমস্ত বিরোধী দলের  একটা সাময়িক মিলিত জোট বানাবার  তোড়জোড় চলছে ৷  প্রত্যেক দলের একটা ভিন্ন মতাদর্শ আছে , তাই তাঁরা ভিন্ন দল৷  শুধু ক্ষমতা ভোগের বেলায় তাঁরাই চূড়ান্ত সত্য বাকীরা মিথ্যা৷ ক্ষমতা ভোগের বেলায় ‘আমরা’ ‘ওরা’র ভাগাভাগি মারামারি চলছেই৷ তখন একদল অপর দলকে সন্দেহের চোখে দেখে যাচ্ছে৷  সেই ভিন্ন ভিন্ন দলগুলি হঠাৎই  নিজেদের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে  ‘আমরা সব ভিন্ন ভিন্ন দল তবুও এখন আমরা একজোট, নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে, এসো  সবাই মিলে জোট বাঁধি৷ এই হল জোট ভণ্ডামি৷ জোটের দলগুলি  তো কই  নিজেদের দল ভেঙ্গে দিয়ে একদল এক আদর্শ বানিয়ে নিচ্ছে না৷  কেন ? কারণ তাহলে ক্ষমতা মধু অনেকের হাতে পৌঁছবে না৷  এইসব রাজনৈতিক নেতাদের যদি সুবুদ্ধি থাকত, ও ওরা স্থানীয় অঞ্চলের মানুষের অস্তিত্ব বিকাশের জন্য  যদি সচেষ্ট হতো, প্রত্যেক স্থানীয় ভাষার মানুষকে তাঁর মাতৃভাষা ও সংসৃকতির বিকাশের  গ্যারান্টী ও প্রতিটি অঞ্চলের  মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পরিকাঠামো দিত, ডোল বা ভরতুকির রাজনীতি না করে, শাসক পক্ষ যদি নিজ নিজ রাজ্যের প্রতি ইঞ্চি জমিকে,  প্রতিবিন্দু জলকে,  সূর্য শক্তিকে, বাতাসের গতি শক্তিকে, মাটির তলার খনিজকে,  বনজসম্পদকে  ও মানবিক শক্তি বুদ্ধিকে  উপযোগ নেবার রাজনীতি করত তাহলে, স্থানীয়  অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের জীবনে একটা সুরক্ষা সমৃদ্ধি সম্মানের পরিকাঠামো এসে যেত৷ দারিদ্র্যমুক্ত অঞ্চল তৈরী হয়ে যেত৷  মাতৃভাষা সংসৃকতি ও সভ্যতার একটা বড়  উপাদান৷  তাই দারিদ্র্য মুক্তি অভিযানের পাশাপাশি আঞ্চলিক মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝে  আঞ্চলিক ভাষাতেই  সরকারী সমস্ত বিভাগে কাজকর্ম চালু রাখা,  উচ্চতর শিক্ষাতে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করার পরিকাঠামো তৈরীর অভিযান যদি চালু রাখত, স্থানীয় মানুষ মনের কথা ব্যক্ত করার স্বাধীনতায় মুক্তির স্বাদ পেত৷ এরপরেও প্রধান কাজটি হল ভাষার সেন্টিমেন্ট বা দারিদ্র্য সেন্টিমেন্টের বাইরে এসে অধ্যাত্মবোধে এক বিশ্ব চেতনার জাগরণের জন্য  নন্দন বিজ্ঞান--- মোহন বিজ্ঞান---সর্বাধুনিক যন্ত্র বিজ্ঞান--- সমবায় চেতনা---প্রভৃতি৷ তাহলে  এক নোতুন রাজনীতির শোষণমুক্ত নোতুন পৃথিবী তৈরীর দিশা মানুষ পেয়ে যেত৷  তখন তেমন নোতুন রাজনীতির কারণে সমাজ পেয়ে যেত নোতুন সমর্থ মানুষ  যাঁদের জাত-পাত-ধর্ম-ভাষা-অর্থ দিয়ে কেনা যায় না৷ সমাজ পেয়ে যেত তেমন নেতা যাঁরা শুধু মানুষ নয়, অসহায় প্রাণীন সত্তাদের ও সুরক্ষা সুবিকাশের পরিকাঠামো দিতে সচেষ্ট থাকত৷  এমন নেতাদের কী আর  ভোটের আগে দরজায় দরজায় হাত জোড় করে  নাগরিকের পা ছুঁতে হবে? না, মানুষের জয়জয়কার এমনিতেই আসবে সমৃদ্ধ সমাজের গুণে, প্রতিভা সম্মানের কারণে, অসহায়কে প্রতিরক্ষা দেবার কারণে, দ্রুত আঞ্চলিকভাবে সার্বিক উন্নয়নের  কারণে,  শহরের সুখ-সুবিধাকে  সমস্ত গ্রামে ছড়িয়ে দেবার কারণে, স্থানীয় মানুষের জীবন যাপনে গতি ও নিপুণতা এনে দেবার কারণে,  সার্বিক ভয়মুক্তির পরিবেশ দানের কারণে,  স্থানীয় মানুষের জয়জয়কার পেয়ে যেত নোতুন রাজদনৈতিক দল৷ তখন মানুষের জীবনের দাম, প্রতিভার দাম  যত বাড়তো প্রয়োজনে জিনিসপত্রের দাম তত কমে যেত৷ চাহিদার থেকে উৎপাদন  (সর্বাধুনিক যন্ত্রশিল্প ও কৃষি শিল্প বিজ্ঞানের উপযোগ নিয়ে) শতগুণ বাড়িয়ে দিলে জিনিসের দাম কমত কিন্তু জিনিসের মান বাড়ত, পরিমাণ বাড়ত৷   তেমন রাজনীতির পাঠ পড়ার ও পড়ানোর সময় এসে গেছে৷ দারিদ্র্যের গপ্প শুণিয়ে মানুষ ক্ষেপানোর রাজনীতি, কেবল ক্ষমতার জন্যে ভণ্ড জোট রাজনীতি  বন্ধ হবার সময় এসেছে৷ সবার কাজ হতে পারে৷ সবার ৮ ঘন্টা শ্রমের দাম সে পেয়ে যেতে পারে  মাত্র ৪ ঘন্টা কাজ করে৷ সেই রাজনীতির কথা তো কাউকে বলা হয় না৷  অসম্ভব সম্ভব হতে পারে যদি মানুষের সদর্থক সমবায় চেতনা থাকে, নীতিবোধ থাকে, শৃঙ্খলার জ্ঞান থাকে৷

তাতে আজকের দিশাহীন মানুষ সামাজিক- অর্থনৈতিক--- সংসৃকতি---সমস্ত স্তরে  প্রকৃত  দিশা খুঁজে  পাবে  তখন জোট-ঘোটের নানান্ কৌশল  করবার দরকার  পড়ত না৷ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে  পুঁজিবাদী সম্প্রদায়বাদী জোটের বিরুদ্ধে  জোট বদ্ধ  হয়ে লড়াই  করত৷