উচ্চমাধ্যমিকের পর কলকাতার বিভিন্ন কলেজে পড়তে গেলে নিয়ম অনুসারে মেধা অনুসারেই অনার্স-এ চান্স পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ইয়ূনিয়ন নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়েই অনার্স-এ ভর্তি হতে হচ্ছে৷ নিলাম ডাকার মত করে ছাত্র-নেতাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, ‘ভূগোল ৬৫ হাজার চলছে, সাংবাদিকতা ৩৫ হাজার, ইংরেজী ৩৫ হাজার,...এমনিভাবে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স নেবার জন্যে দর ঘোষণা চলছে৷ সেই টাকা না দিলে মেধা তালিকায় নাম উঠলেও ওই ছাত্রকে ‘কাউন্সিলিংয়ের জন্যে নির্ধারিত রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ গেটে কড়া প্রহরা৷
এমনি তোলাবাজি বহুদিন থেকেই চলছে৷ এই টাকা কোথায় যায়? ছাত্র-নেতারা তো নেয়ই, এই বিপুল অংকের টাকা আরও কোথায় কোথায় যায়, তা তদন্ত সাপেক্ষ৷ বছরের পর বছর এটা হচ্ছে--- কলেজ কর্তৃপক্ষ বা সরকার কি এর কিছুই জানে না? এটা কি সম্ভব? হঠাৎ এখন ব্যাপারটা খুব বাড়াবাড়ি হওয়াতে--- চারিদিকে এ নিয়ে হৈ-হট্টগোল হওয়াতে মুখ্যমন্ত্রী নড়েচড়ে বসেছেন৷ এখন আবার কলেজগুলিতে বিরোধী দলের ইয়ূনিয়ন নেই, তাই প্রতিপক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না৷ এখন তাই মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী কলেজে কলেজে এইভাবে তোলাবাজি চলবে না বলে হুঙ্কার দিচ্ছেন৷ পুলিশকেও বলা হয়েছে তোলাবাজকে রুখতে ব্যবস্থা নাও৷ ইয়ূনিয়ন নেতাদের কড়া নির্দেশ জারী করা হচ্ছে, এসব চলবে না৷
অনেক দেরীতে ঘুম ভাঙ্গলেও তবুও যদি সরকারের ঘুম ভাঙ্গে তাহলে ভাল ৷ তোলাবাজি যদি বন্ধ হয়, তাহলে নবাগত ছাত্র-ছাত্রা ও তাঁদের অভিভাবক -অভিভাবিকাগণ শ্বাস ছেড়ে বাঁচবেন৷
আর, সরকার যে এই নীতিটা ঘোষণা করেছেন, এটা যেন স্থায়ীভাবে পালিত হয়৷ এই নয় যে, এ নিয়ে বর্তমানে যখন হৈচৈ হচ্ছে, পার্টির ইমেজ খারাপ হচ্ছে, তাই আপাততঃ তোলাবাজির টাকাটার একটা মোটা অংশ যে পার্টির কর্র্তদের হাতে আসে না, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না৷ কারণ তাঁরাই যখন ছাত্রদের পরিচালনা করেন, তখন তাঁদের অজ্ঞাতে রেখে কি প্রকাশ্যে এভাবে তোলাবাজি চলতে পারে? এটাও তো একটা সঙ্গত প্রশ্ণ৷ শুধু ছাত্রভর্তির ব্যাপারেই নয়, ছাত্র ইয়ূনিয়নের মাধ্যমে দলীয় রাজনৈতিক নেতারা সমস্ত নেতা ব্যবস্থাটিকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাইছে৷ উদ্দেশ্যে, নিজ নিজ দলের ক্যাডারবৃদ্ধি৷ কিন্তু এরফলে যে সারা দেশের সর্বনাশ হচ্ছে এটা কি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীবৃন্দ ভেবে দেখেছেন?
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দেশের এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা মানুষের নৈতিকমানের চরম অবনতি৷ দেশ গড়তে গেলে চাই মুখ্যতঃ ২টো জিনিস--- নোতুন মানুষ, নোতুন পরিকল্পনা৷ আগে নোতুন মানুষের কথাই চিন্তা করা যাক৷ নোতুন মানুষ মানে মুখ্যতঃ বোঝাচ্ছে সৎনীতিবাদী মানুষ৷ স্কুল-কলেজগুলির মুখ্যউদ্দেশ্য হওয়া উচিত, শুধু শিক্ষাবৃদ্ধি নয়, শিক্ষাবৃদ্ধির সঙ্গে সততা ও নৈতিকতা বৃদ্ধি৷ স্কুল-কলেজগুলি হওয়া উচিত যথার্থ মানুষ তৈরীর মুখ্য মাধ্যম৷ এই লক্ষ্যে সমস্ত শিক্ষা-ব্যবস্থাটাকেই ঢেলে সাজানো উচিত৷ প্রকৃত মানুষ তৈরীর শিক্ষাটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের মত এই শিক্ষাক্ষেত্রগুলির পবিত্রতা রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য৷
শিক্ষাক্ষেত্রগুলির কলুষতার প্রধান কারণ হ’ল শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ৷ দলীয় রাজনীতির রন্ধ্রপথ দিয়ে স্কুল কলেজে চরম কলুষতার নোংরা বেনোজল প্রবেশ করে৷ ফলে, ছাত্র-ছাত্রারা পারস্পরিক হৃদ্যতা ভূলে গিয়ে পারস্পরিক ঘৃণা-বিদ্বেষ করতে শেখে৷ ইয়ূনিয়ন বাজীর সঙ্গে সঙ্গে অবধারিত ভাবে দেখা দেয় তোলাবাজি, খুনোখুনি এইসব নোংরামি৷ এমনিভাবে বিদ্যাশিক্ষার মন্দিরগুলি মাছের বাজারে পরিণত হয়৷
ফলে শিক্ষাকেন্দ্রগুলির যে মূল লক্ষ্য মানুষ তৈরী---সেই লক্ষ্য কোথায় হারিয়ে যায়৷ তাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী সহ দেশের সমস্ত শুভানুধ্যায়ী সমাজ সচেতন ব্যষ্টির কাছে আমাদের অনুরোধ শিক্ষাক্ষেত্রগুলিকে দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা করুন৷ শিক্ষাকেন্দ্রগুলির পরিচালনার দায়িত্ব প্রকৃত শিক্ষাবিদ্দের দিয়ে তৈরী বোর্ডের ওপর অর্পণ দিয়ে তৈরী বোর্ডের ওপর অর্পণ করা হোক ৷ না হলে দেশ সমাজ রক্ষা পাবে না৷
- Log in to post comments