কোচবিহার ১৫ই জুন ঃ কোচবিহার শহরের কাছারী মোড়ের সন্নিকটে জেলা পরিষদের অতিথি নিবাস হলে গত ১৫ই জুন থেকে ১৭ই জুন তিন দিন ব্যাপী ‘আমরা বাঙালী’ দলের একাদশ ত্রৈবার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল৷ উক্ত অনুষ্ঠানে পঃবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম,মণিপুর ও ঝাড়খন্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় তিনশত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন৷ সম্মেলনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন হয় ও বকুল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় সচিব রূপে পুননির্বাচিত হন৷
সম্মেলনের প্রথম দিনে অর্থাৎ ১৫ জুন বেলা ১২টায় অনুষ্ঠানের শুরুতে মিলিত কন্ঠে ‘বাঙলা আমার দেশ’ প্রভাত সঙ্গীত সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়৷ এরপর আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় সচিব বকুল চন্দ্র রায় ‘আমরা বাঙালী দলের পতাকা উত্তলন করেন ও তারপর প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন৷ তারপর এক এক করে বাংলার মহান মনীষীদের প্রতিকৃতিতে মাল্যর্পণ করা হয়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম, বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসু ও কোচবিহারের অন্যতম বিশিষ্ট সমাজসেবক ঠাকুর পঞ্চানন বর্র্ম প্রমুখ৷
মিলিত আহারের পর বেলা ২ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কোচবিহার শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমণ করে৷ অতিথি নিবাসের সন্নিকটে অনুষ্ঠিত জনসভায় সকলেই উপস্থিত হন৷ উক্ত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আমরা বাঙালীর ত্রিপুরা রাজ্যের সচিব হরিগোপাল দেবনাথ, বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সচিব বকুল চন্দ্র রায়, উজ্জ্বল ঘোষ, সুবোধ বর্মন, কেশব মজুমদার, খুশিরঞ্জন মন্ডল, সাগরিকা পাল ও জয়ন্ত দাস ৷ উক্ত পথসভায় জাগরণী সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রীমতী শ্যামা দে৷ পথসভায় বিভিন্ন বক্তা পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলা ভাষী বিভিন্ন এলাকায় বাংলা ভাষার সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী কাজের দাবী রাখেন৷ অসমে নোতুন নাগরিকপঞ্জী তৈরীর মাধ্যমে এক কোটি ঊণচল্লিশ লক্ষ বাঙালীর নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চলছে৷ এর বাইরেও পুরুষানুক্রমে অসমে বসবাসকারী বাঙালীদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলছে৷ ‘আমরা বাঙালী’র নেতৃবৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন ও এর বিরুদ্ধে সমস্ত বাঙালীদের আন্দোলনের আহ্বান জানান৷ সন্ধ্যে ৬টার পর যাত্রী নিবাস হলে মণিপুরে বাঙালীদের ভাষা-সংসৃকতি রক্ষার জন্যে যিনি তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মণিপুর থেকে আগত সেই ‘আমরা বাঙালী’ সমর্থিত এম.এল.এ মোঃ আদারউদ্দিনকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়৷ উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাদল মজুমদার৷ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোঃ আদারউদ্দিন বাংলা ভাষা ও সংসৃকতি রক্ষার্থে মণিপুর, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড সর্বত্রই বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামের আহ্বান জানান৷ এই সভায় কোচবিহারের ৩২ জন ‘আমরা বাঙালী’র একনিষ্ঠ কর্মী যাঁরা বিভিন্ন আন্দোলনে অনেক বার কারাবরণ করেছেন তাদের সবাইকে বিভিন্ন উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়৷ এরপর মণিপুরের এম.এল.এর উদ্দেশ্যে একটি মানপত্র পাঠ করার পর মানপত্রটি মোঃ আদারউদ্দিন সাহেবের হাতে তুলে দেন কেন্দ্রীয় সচিব বকুল চন্দ্র রায়৷
সবশেষে সভাপতি শ্রী বাদল মজুমদার তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সর্বত্র বাঙালীদের ন্যায্য অধিকারের দাবীতে দল-মত ভুলে আন্দোলনের ডাক দেন৷ উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রী শুভেন্দু ঘোষ৷
দ্বিতীয় দিনে কেন্দ্রীয় সচিব গত তিন বৎসরের ‘আমরা বাঙালী’-র কাজের প্রতিবেদন পাঠ করেন৷ আর্থিক প্রতিবেদন পাঠ করেন সহসচিব তারাপদ বিশ্বাস৷ এরপরে এই দুই প্রতিবেদনের উপর প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগহণ করেন৷
তৃতীয় দিনে ‘আমরা বাঙালী’ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন হয় ও ১৭জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন৷ বকুল চন্দ্র রায় সর্বসম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয় সচিব হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন৷
অসমে এন.আর.সি-এর নামে বাঙালী বিতাড়নের প্রতিবাদে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘আমরা বাঙালীর’ তীব্র প্রতিবাদ
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ২৩শে জুন কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘‘হিউম্যান প্রোটেকশন এ্যাণ্ড এ্যাওয়ার নেস অর্র্গনাইজেশন’’ এর পক্ষ থেকে অসমের রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্ব নবীকরণ পঞ্জী নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷ এই সভাতে বিভিন্ন বাঙালী গণসংঘটন ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন৷ উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা অরুণাভ ঘোষ, অসম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, বাংলাপক্ষ সংঘটনের পক্ষ থেকে ডাঃ গর্গ চট্ট্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের বর্ষিয়ান নেতা- প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে সায়ন্তন বসু, বিশিষ্ট আইনজীবী কল্লোল বসু , আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় সচিব বকুলচন্দ্র রায়, আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য, সিপিএমের যুবসংঘটনের প্রতিনিধি ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী আইনজীবী অশোক গাঙ্গুলী, পবিত্র কুমার ঘোষ ও নিতীশ বিশ্বাস মহাশয় প্রমুখ৷
তপোধীর ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে অসমে বাঙালী নির্যাতনের নির্মম প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন, তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকত্ত্ব কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র আমরা কোন মতে মেনে নেব না৷ তিনি এই সভায় প্রশ্ণ তোলেন সর্বানন্দ সনোওয়াল ভারতীয় হলে অর্জুন নমঃশূদ্র নয় কেন৷ কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের প্রতিক্রিয়া মাথার উপর ছাদ হারানোর কষ্ট যারা জানেন তারাই বোঝেন সে যন্ত্রণা কতটা ভয়ঙ্কর ৷ বিজেপি প্রতিনিধি সায়ন্তন বসু দেশবিভাগের ভয়াবহ যন্ত্রণার কথা স্বীকার করেও বলেন যাতে বিদেশীদের হাতে দেশ না চলে যায়, তাই এন.আর.সি নির্দেশ নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট৷ আমরা এই প্রক্রিয়াকে নীতিগতভাবে সমর্থন করি৷
তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন অনেকেই, শ্রোতারা প্রশ্ণ তোলেন বিদেশী কারা? কিন্তু তিনি তার যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি৷ ‘আমরা বাঙালী’র সচিব বকুলচন্দ্র রায় বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অসমে বাঙালী নির্যাতনের প্রতিবাদ করে আসছি৷ ইতিমধ্যে আমরা অসম বিদেশ দফতরের সামনে বাঙালী বিতাড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছি, বিভিন্ন জেলায় পথসভা ও মিছিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও অসম সরকারের কাছে এই বার্র্ত দিতে চেয়েছি অবিলম্বে অসমের বাঙালী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে৷ তা না হলে আমরা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলবো৷ প্রয়োজনে অসমের যোগাযোগকারী জাতীয় সড়ক অবরোধ করতেও বাধ্য হব৷