মানুষের সৃষ্ট বন্যায় ও প্রকৃতির তান্ডবে পশ্চিম বাঙলার ১২টি জেলা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত

লেখক
মুসাফির

সমস্যা সংকুল পশ্চিম বাঙলাকে প্রায় প্রতিবছরই মানুষের সৃষ্ট বন্যায় গ্রাস করে বর্র্ষ৷ এর মূল কারণ হলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি যতটা না  নদী, খালবিল সংস্কারের দিকে নজর দেন তার চেয়ে বেশী নজর শুধু লেকচারবাজি আর বক্তৃতায় ৷ কোটি কোটি টাকা বন্যা ও নদনদী সংস্কারের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয় কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফাঁকা আওয়াজ৷ বরাদ্দ টাকা যে কোথায় যায় সেটা ভগবানই জানে না৷  এতে কিছু সুবিধাবাদীরাই সুফল ভোগ করে ৷

সব ব্যাপারে যতটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার  কথা সংবাদ ঘোষণা করা হয় বাস্তবে কিন্তু দেখা যায় সেই মত কাজ হয় না৷ নদনদীগুলির গর্ভদেশ মজে গেছে৷ ডিভিসির ব্যারেজগুলির কি করুণ দশা! সামান্য জলেই উপচে যায়৷ যাতে বাঁধের ক্ষতি না হয় সেই কারণে জল ছাড়া হয় ব্যারেজ থেকে৷ মনে পড়ে প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী আমেরিকার টেনেসি নদীর বাঁধ দেখে এদেশে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন৷ আমেরিকার পাহাড়ী এলাকা আর পশ্চিম বাংলার পলি মাটির এলাকা বিশেষ করে দামোদরের চারিপাশে শুধু বালির চড়া ও নরম মাটি ৷  মেঘনাদ সাহা ছিলেন এই পরিকল্পনার একজন দক্ষ বৈজ্ঞানিক৷ তিনি  বলেছিলেন, সরকারকে যে, ব্যারাজ আরো করা দরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে৷ সেকথা সরকার কাণে নেননি৷ তাছাড়া  নদনদীগুলির নিম্নদেশের পলি সরাতে কৃত্রিমভাবে স্রোত  সৃষ্টি করে পলি সরাবার ব্যবস্থার কথা বলেন ৷ সেটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি৷ নননদীগুলির গর্ভদেশ যেমন মজে গেছে, তারপর আবার তাদের শাখা নদীগুলির দু’পাশে মাটি ফেলে স্থানীয় অধিবাসীরা তীরগুলিতে জমি বাড়িয়ে  বাড়িঘর দোর , চাষের জমি ও সাধারণের জন্যে আঞ্চলিকক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলি রাস্তা তৈরী করে নদী ও খাল গুলিকে ধবংস করে ছেড়েছে৷ এদিকে কারোই দৃষ্টি নেই৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভাগীরথীর দুইতীর, সরস্বতী, দামোদর, রূপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, অজয় অন্যান্য নদনদীগুলির করুণ দশার সৃষ্টি করেছে দুইতীরের বাসিন্দারা ৷ নদনদীর জমি জরিপই হয় না৷ তাই সুষ্ঠুভাবে নদীগুলিকে সংস্কার করার দিকে জনগণের ও সরকারের নজরই নেই৷ চাষাবাদের জন্য চাষের জমিতে আগে বড়ো বড়ো পুষ্করিণী খনন করা হতো ৷ সেইগুলি  অনেকক্ষেত্রে মজে গেছে  অথবা ভরাট করে জমি তৈরী হয়েছে৷ জলাভূমিতে কলকারখানা কিংবা প্রমোটারদের লোলুপ দৃষ্টিতে সেখানে বড়ো বড়ো রাস্তার দু’পাশে আকাশ ছঁোয়া বাড়ি উঠেছে৷ বড়ো বড়ো রাস্তা হওয়াতে জল চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে জল জমে যাচ্ছে৷ বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে৷ নদনদীগুলির জল ধারণের খুব একটা ক্ষমতা নেই৷ তাই সামান্য বৃষ্টিতে নীচু জমি জলবদ্ধ হয়ে পড়ছে৷

 এবারের বন্যায় পশ্চিম বাংলার সৃষ্টি ১২টি জেলা প্লাবিত হয়েছে ৷ মারা গেছে ৩৯ জন৷ বন্যার  পর পানীয় জলের অভাবে, সুষম খাদ্যের অভাবে নানা রোগের  প্রাদুর্র্ভব ঘটেছে৷ বিশেষ করে  শিশুদের খাদ্যাভাবটা বেশী ৷ অসাধু ব্যবসারদার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে শোষণ করছে৷ বন্যাক্লিষ্ট এলাকায় চুরি রাহাজানির উৎপাত বেড়ে গেছে৷ এদিকে স্থানীয় মানুষজন, পঞ্চায়েত, পুলিশ প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে৷

বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলিতে  প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷   রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে ১৬২টি ত্রান শিবির খুলেছে৷ ১০৪টি ব্লক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ হাওড়ার উদয় নারায়পুর ও হুগলীর খানাকুলে মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন৷ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকারকে না জানিয়ে ডিভিসি জল ছাড়ায় ক্ষতি হয়েছে৷ তাঁর দাবী, এই বন্যা মানুষের সৃষ্ট৷ সরকারের মতে ৪৬টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে পশুদের জন্য৷ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে  দুর্গতদের জন্যে  ত্রাণ শিবির খোলার সাথে সাথে কোথাও রান্না করা খাদ্য দেওয়া হচ্ছে, কোথাও শুকনো খাবার ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংঘটনগুলিও কিছু কিছু স্থানে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিচ্ছেন৷ আনন্দমার্গ সংঘটন পঃবঙ্গে ও  অসমে ত্রাণকার্য চালাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গর বন্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ সর্বগ্রাসী দামদরের জল ছাড়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলী ও হাওড়া জেলার নীচু এলাকায় প্রতিবছর দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বীরভূমের লাভপুর ব্লক সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোপাই ও কুয়ে নদীর  বন্যায় ৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মজে যাওয়া নদীগুলির বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াতে ক্ষতি হয়েছে দারুণভাবে৷ নদীয়া বাদ যায়নি৷ নদনদী সংস্কারের দায় মূলতঃ কেন্দ্রীয় সরকারের৷ একদিকে চরম বেকার সমস্যা, বহু কলকারখানা বন্ধ হওয়াতেও দারুণভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ নাজেহাল৷ এই সর্বগ্রাসী বন্যা নিম্নমধ্যবিত্তদের ক্ষতি করে গেল দারুণভাবে৷

 এই নদীমাতৃক পশ্চিমবাঙলার জন্যে আজ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে যাতে হতভাগ্য পশ্চিমবঙ্গ যেন আর বন্যায় ধবংস না হয়৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা প্রায় মোট ৮ লক্ষের অধিক কিউসেক জল বিভিন্ন জলাধার থেকে ছাড়ায় পশ্চিমবাংলা ডুবে গেছে!  মনে হয় ,পশ্চিমবঙ্গে অবিজেপি সরকার থাকায় এরাজ্যকে কেন্দ্র নানাভাবে বঞ্চিত করছে৷ জনগণের ক্ষোভ কিন্তু কেন্দ্রের বিমাতৃ সুলভ আচরণে বাড়ছে সেদিকে কেন্দ্র দয়া আশাকরি করে নজর দেবেন৷ প্রধানমন্ত্রী নিজরাজ্যে ও অসমে বন্যাপীড়িত এলাকার দর্শন করলেন কিন্তু হতভাগ্য পশ্চিমবাঙলায় তার অদ্যাবধি আসার সময় হল না৷