মনীষীরা বলেছেন, মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান৷ অথচ স্বাধীনতার ৭১ বৎসর পরে স্বাধীন ভারতের কোটি কোটি বাঙালী স্বভূমিতে মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত৷ সাম্রাজ্যবাদী তথা শোষক শ্রেণীর চক্রান্তে স্বাধীন ভারতে বাঙলাকে ছিন্ন ভিন্ন করে অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড বিহার ও ওড়িশার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে৷ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গণপরিষদে ভাষাভিত্তিক রাজ্য তৈরীর প্রস্তাব করা হয়৷ অন্যভাষার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব কার্য্যান্বিত করা হলেও বাংলার ক্ষেত্রে কিন্তু তা করা হ’ল না৷ পরন্তু প্রথমতঃ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক ও ক্ষমতালোভী তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বের চক্রান্তে বাঙলার বৃহদংশকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হল৷ আগে থেকেই বাঙলা থেকে একটা বড় অংশ অসম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ ১৯৩১ সালের এক সমীক্ষাতে দেখা গেছে অসমের ৩৯ লক্ষ বাঙালী ও অসমীয়া ভাষাভাষী ১৯ লক্ষ ৮২ হাজার৷ স্বাধীনতার পর শ্রীহট্ট জেলাকে অসমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ এছাড়া ওপার বাঙলা থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালী উদ্বাস্তু হয়ে অসম প্রদেশ করেছে৷ তা সত্ত্বেও অসমে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা কম দেখানোর জন্যে জনগণনার ব্যাপক কারচুপি করে দেখানো হল বাঙালীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ও অসমীয় ৩৯ লক্ষ৷ জনগণনার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক কারচুপি করে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে তা এই জনগণনার রিপোর্ট থেকে যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষকেই মেনে নিতে হবে৷
সহজ কথায় অসমে অসমীয়াদের চেয়ে বেশী জনসংখ্যায় বাঙালীদেরই বাস৷ আর এটাও ইতিহাস যে অসমের নওগাঁ, হোজাই, লঙ্কা, লামডিং, বরপেটা, ধুবড়ি, কাছাড়, মিকির পাহাড়ের সমতল অংশ--- এ সমস্ত মূলতঃ বাংলাভাষী এলাকা ও মূল বঙ্গভূমিরই অংশবিশেষ যা ব্রিটিশদেরই ষড়যন্ত্রে অসমের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল অথচ স্বাধীনতার ৭১ বছর পর এই অসমের অধিকাংশ বাঙালী আজ তাদের মাতৃদুগ্ধসম মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত তো বটেই,আজ তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন৷
মেঘালয়ের গারো পাহাড়, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমতল অংশ ও মূলতঃ বাঙলা এলাকা ও এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীও বাংলাভাষী৷ এখানেও বাঙালীরা স্বভূমে পরবাসী৷
ত্রিপুরা প্রাচীন বাঙলার অন্তর্ভুক্ত৷ এখানে রাজনৈতিক চক্রান্তে সমতলের বাঙালী ও পাহাড়ী বাঙালীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেবাঙালীর ভাষা-সংস্কৃতিএমনকি অস্তিত্বকেও সংকটপন্ন করা হচ্ছে৷
প্রাচীন বাঙলার পশ্চিমাংশের পরিস্থিতিও ভয়াবহ৷ বর্তমান ঝাড়খণ্ডের সরকারী হিসেবে ৪০ শতাংশ ও প্রকৃতপক্ষে, প্রায় ৬৫ শতাংশ (কারণ বাংলাভাষার কুর্র্মলীসহ কয়েকটি উপভাষাকে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখানো হয়েছে) বাঙালীকে মাতৃদুগ্ধসম মাতৃভাষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে৷
বর্তমান বিহার ও ওড়িশার সঙ্গে বাঙলাভাষী যে সমস্ত এলাকা যুক্ত সেখানেও বাঙালীরা মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত৷
এমনকি খোদ, পশ্চিমবাঙলাতেও এখন অফিস-আদালতের কাজকর্মে বাংলাভাষা ব্রাত্য হয়ে রয়েছে৷ এতদিেেন পঞ্চায়েত স্তরে সামান্য কিছু কাজকর্ম বাংলায় করা হচ্ছে মাত্র৷
অথচ ওপার বাংলা অর্র্থৎ বর্তমান বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা পাকিস্তানের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র ৬মাসের মধ্যে ওখানকার সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী কাজকর্ম বাংলাতে শুরু করে দিয়েছে৷ ইচ্ছে থাকলে যে এটা করা মোটেই কঠিন নয়, তা তারা দেখিয়ে দিয়েছে৷