নাগরিকপঞ্জী তৈরীর  নামে অসম থেকে  লক্ষ লক্ষ বাঙালীর  নাগরিকত্ব হরণের  প্রতিবাদে  আমরা  বাঙালীর পথসভা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

গত ১০ই সেপ্টেম্বর  উত্তর ২৪ পরগণার ব্যারাকপুর ষ্টেশন  সংলগ্ণ স্থানে  আমরা বাঙালী সংঘটনের  উঃ ২৪ পরগণা নেতৃবৃন্দ অসমে  নাগরিক পঞ্জী তৈরীর নামে লক্ষ লক্ষ  বাঙালীর  নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার  প্রতিবাদে  এক পথসভার  আয়োজন করেন৷

সভা শুরু  হয় বৈকাল ৪টায়, শুরুতে  স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন  বিশিষ্ট কবি শিবরাম চক্রবর্ত্তী৷  পরে  প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন  করে বিশিষ্ট গায়ক  শঙ্কর  সরকার (স্পান্দনিক শিল্পী)৷

এরপর  বক্তব্য রাখেন গোপাল রায় চৌধুরী (সচিব কলি জেলাকমিটি) , জ্যোতিবিকাশ  সিন্হা (হুগলী জেলা সচিব),  শৈলেন  মোদক  (অসমের প্রতিনিধি), মানস দেব (বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট), বাপি পাল (উত্তর ২৪ পরগণা জেলাকমিটির  সদস্য), সুধীর গুপ্ত  (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ), জয়ন্ত দাস (কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব)  ও  অরূপ মজুমদার (উঃ ২৪ পরগণা আমরা বাঙালীর  জেলা  কমিটির  সদস্য)৷ বক্তারা বলেন, বাঙালীকে তার  অতীত  ইতিহাস  ভুললে  চলবে না৷  একসময়  বাংলা ছিল খনিজ বনজ  শিল্প, শিক্ষা ও সংসৃকতি ইত্যাদির  উন্নত  ও শ্রেষ্ঠ পীঠস্থান ৷ বাংলার  ঐতিহ্য  ছিল মিলনের৷ বাংলা  স্বমহিমায়  প্রতিষ্ঠিত  ছিল৷  বাংলার  শিক্ষক সাহিত্যিক , রাজনীতিবিদ  অন্যায়ের  বিরুদ্ধে  যেমন  রুখে  দাঁড়িয়েছেন  তেমনি  বাংলার  বিজ্ঞানী, ধর্মগুরুরা বিশ্বকে  আলোর পথের  সন্ধান  দিয়েছেন৷  ব্রিটিশরা এসে  বাংলার ঐতিহ্য ও মিলন  নষ্ট  করেছেন৷  হিন্দু-মুসলিম  মিলনের  ভাবনায়  চিড় ধরিয়েছেন ৷ তারা  বাংলায়  মিরজাফর  তৈরী করেছেন৷ ব্রিটিশ আমলেই  বাংলা ও পঞ্জাব  টুকরো  হয়৷ উদ্বাস্তু হয়  পঞ্জাব ও বাংলার  মানুষ৷ পরে  পঞ্জাবের  সমস্যা মেটানো হল ৷ পুনর্বাসন  পেল  পঞ্জাবের  উদ্বাস্তুরা৷ কিন্তু  বাংলার  সমস্যা জিইয়ে রাখা হল ৷  বক্তারা  বলেন তার জের এখনও চলছে৷ তাই  স্বাধীনতার  পর  পঞ্চাশের  দশক থেকেই  অসম,  ত্রিপুরা, উত্তরপূর্বাঞ্চলে  ও  ভারতের  বিভিন্ন  প্রান্তে  বাঙালীদের  উপর বার বার আক্রমণ ও আইনের  আঘাত  নেমে  আসে৷ অসমে ‘বঙ্গাল খেদাও’, ১৯৮৩ সালে নেলীর গণহত্যা, ত্রিপুরাতে  ৮০ এর গণহত্যা ইত্যাদি  আজও  ইতিহাস  হয়ে আছে৷ বাঙালী বিরোধী ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ প্রকাশ  গত ৩০শে জুলাই ২০১৮ অসমে  এন.আর.সি প্রয়োগের  মাধ্যমে  প্রায়  চল্লিশ  লক্ষ বাঙালীকে বিদেশী চিহ্ণিত করে  ডিটেনশন  ক্যাম্পে  রেখে  দেশছাড়া  করার পরিকল্পনা৷  আমরা বাঙালী সংঘটন  তাই দিকে দিকে  পথসভার  মাধ্যমে  প্রতিবাদ  জানাচ্ছেন৷ পথ অবরোধ, রেল অবরোধ, কুশপুত্তলিকা দাহ প্রভৃতির  মাধ্যমে  তাঁরা  জানিয়ে  দিচ্ছেন  অবিলম্বে এন.আর.সির নামে  বিদেশী  তক্মা  দিয়ে বাঙালী বিতাড়ন বন্ধ  করা হোক৷ বাঙালী বিরোধী হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী কায়েমি  স্বার্থবাদীরা  জানে না যে বাঙালী কাপুরুষ নয়৷  ভারতের  স্বাধীনতা আন্দোলন  ও বাংলাদেশের  মুক্তি সংগ্রাম  তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ৷ তারা  বলেন বর্তমান  বাংলার  রাজনীতিবিদরা  বাঙালীর উক্ত সমস্যার জন্য  শুধুই কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন  করে৷  বাংলা  ও বাঙালীর  সমস্যার  জন্যে তারা আন্তরিকভাবে কিছুই করতে চায় না৷ এরজন্য দায়ী ভোট ব্যাঙ্ক৷ বিগত কংগ্রেস  আমল , এরপর ৩৪ বছরের বাম আমলে  বহু বাঙালী ছাত্রযুবক প্রাণ হারিয়েছেন৷ সে ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা আছে৷  বর্তমানে  যারা  বাংলার  মসনদে  আছেন  তারা ও বাংলার মানুষদের  জীবন  নিয়ে  ছিনিমিনি  খেলছেন৷ নোংরা  রাজনীতির  বলি হচ্ছে  বর্তমান  বাংলার  যুব সমাজ৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, প্রোমোটার রাজ  তোলাবাজ, সিন্ডিকেটরাজ  ইত্যাদির পিছনে  কাজ করছে  কায়েমি স্বার্থ৷ বাংলার যুব সমাজ  শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবে৷ বক্তারা  বলেন তাই  বর্তমান পরিস্থিতি বিচার  করে ভারতীয়  সংবিধান মোতাবেক  বাংলার  কেটে নেওয়া অঞ্চলগুলিকে  একত্রে জুড়ে  সামাজিক  অর্থনৈতিক অঞ্চল বাঙালীস্তান  গড়াই  হবে সমস্ত  অন্যায় অত্যাচার ও নানা সমস্যা থেকে  বাঙালীদের  বাঁচার  একমাত্র  পথ৷ এজন্য  সমস্ত বাঙালীকে  ঐক্যবদ্ধ  হয়ে লড়াই  চালিয়ে  যেতে হবে৷

এদিন ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা  ভারতবন্ধের  দিন৷  তা উপেক্ষা করে শ’য়ে শ’য়ে  বাঙালী ভাইবোনেরা  অধীর আগ্রহে  নিয়ে  বক্তাদের বক্তব্য শোনেন৷ অনেক ফোন নম্বর দিয়ে  যোগাযোগ করার  জন্য বলেন৷ সভা চলে রাত ৮ টা  পর্যন্ত৷