পৌরুষের বজ্রকৌস্তুভ, উল্কার অনল-শিখা, রাজনীতির জ্বলন্ত ধুমকেতু, বিশ্বের দেশে দেশে বিপ্লবীদের হৃদস্পন্দন বীর বাঙালী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন স্বাধীনচেতা, মানবপ্রেমিক তথা খাঁটি বাঙালী-ভারতপ্রেমিক তিনি ছিলেন মনে প্রাণেই দেশপ্রেমিক৷৷ পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার লক্ষ্যে বিদেশের মাটিতে স্বাধীন ভারত সরকার তৈরী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা তথা বিজয়ীর বেশে দেশের পূর্ব-প্রত্যন্ত মণিপুরে প্রবেশ ও স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন সমগ্র দেশজুড়ে এক অভূতপূর্ব স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষায় উন্মাদনা সৃষ্টি করে! দেশের দেশপ্রেমিক মানুষ যুবসমাজ, সেনাবাহিনীর দেশীয় নওজওয়ানরা দিকে দিকে বিদ্রোহে সামিল হয়, যার প্রভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত ব্রিটিশ শক্তি তাদের বশংবদ দেশনেতা, মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরু এ্যাণ্ড কোম্পানীর হাতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নামক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মৌরসীপাট্টা হস্তান্তরিত হয়৷ স্বাধীন ভারত সরকার সেই ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের ত্রাস, স্বাধীনতার অগ্রপথিক সুভাষচন্দ্রের দেশপ্রেমকে অস্বীকার করে আসছে---পরাধীন জাতির মনে মহাপ্লাবন সৃষ্টিকারী নেতাজীর ভূমিকার অসম্মান ও অমর্যাদা প্রদর্শন করে আসছে---মহান জাতীয় নেতার স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত প্রদান করেনি৷
গত ২১শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বর্ষপূর্ত্তিতে দিল্লীর লালকেল্লায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদীজি তাঁর ভাষণে নেতাজীর প্রশংসায় গদগদ ভাব দেখালেও তাঁর এই ভাষণে বাঙালীদের আপ্লুত হলে তা হবে এক ঐতিহাসিক প্রমাদ (ব্ল্যাণ্ডার)৷
আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস ১৯৪৩-এর ২১শে অক্টোবরকে স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শন ঠিক কাজ৷ কিন্তু তার পূর্বে আমরা বলতে চাইছি, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এতদিন নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সুমহান অবদানকে অমর্যাদা করার জন্যে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সরকারীভাবেই সমগ্র জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে’---
(১) স্বাধীন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নেতাজীর দেশপ্রেমকে স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন করা হোক
(২) স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর ভূমিকা ও সশস্ত্র সংগ্রামের পথকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন করা হোক
(৩) আজাদ হিন্দ বাহিনী ও নৌ বিদ্রোহীদের যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হোক
(৪) ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে, যে রাষ্ট্রীয় প্রমাদ সংঘটিত হয়েছিল, তার সংশোধিত ইতিহাস বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হোক৷
এখানে উল্লেখ্য ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট মার্কিনী ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের অফিসারদের সামনে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছিল৷ তাতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁদের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল তাঁদের নাম ও ভূমিকার উল্লেখ ছিল৷ তাতে প্রথমে ছিল গান্ধীজীর নাম৷ তারপর ছিল জওহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও তারপর আরও বহু নেতার নাম ও অবদানের কথা৷ একেবারে শেষের দিকে একচকিতের জন্যে নেতাজীর চিত্র দেখিয়ে শুধু উল্লেখ করা হয়েছিল অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধী যা করতে পেরেছিলেন, সুভাষচন্দ্র সহিংস আন্দোলনের দ্বারা তা করতে পারেন নি৷ এইভাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর সুমহান ভূমিকাকে একরকম অস্বীকার করাই হয়েছিল৷
মোদী সরকারের উচিত স্বাধীন ভারত সসরকারের পক্ষ থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সংশোধিত ইতিহাস নোতুন করে তুলে ধরা৷
(৫) এই সঙ্গে বলবো, বাঙালীরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশী বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল৷ সেই বাঙলা ও বাঙালী জাতিকে খণ্ড খণ্ড করার রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বন্ধ করে’ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চৌহদ্দির মধ্যে ঢোকানো বাঙলার এলাকাগুলিকে (যা বাংলা ভাষাভাষী অধূ্যষিত) একসঙ্গে সংযুক্ত করে’ সংবিধানের ৩ নং ধারা অনুসারে বাঙালীদের জন্যে বাঙালীপ্রধান বাঙালীস্তান রাজ্য গড়ে তুলে প্রতিটি বাঙালীর নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদান করুক ভারত সরকার৷ এন আর সি-র নামে একটি বাঙালীরও নাগরিকত্বহরণ করা চলবে না৷
- Log in to post comments