ভারতের লোকসভা ও বিধানসভার আসন যখন শূন্য হয় তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্য আসন পূর্ণ করে থাকেন, এটা তাঁর সাংবিধানিক দায়৷ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী তাদের সংসদীয় পদে পদত্যাগ করার ফলে ওই দুটি সংসদীয় আসনে (আসন দুটি হলো যথাক্রমে গোরক্ষপুর ও ফুলপুর) পুননির্বাচন হয় আর বিহারের আরারিয়া লোকসভা আসন শূন্য হয় লোকসভার মাননীয় সদস্যের অকালে পরলোক গমন করার ফলে ৷
বিহারে দুটি বিধানসভা আসন --- জেহানাবাদ ও ভাতুয়ায়ও পুননির্বাচন হয়৷ গত ১১ই মার্চ ওই নির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত হয়৷ এই উপনির্বাচনে জনগণ অর্র্থৎ নাগরিকগণ বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে যে বোট পড়েছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে জনগণ নির্বাচনকে প্রায় অগ্রাহ্যই করেছে৷ যে হারে বোট পড়েছে কেন্দ্র দুটিতে সেটা নেহাতই একেবারে যৎসামান্য৷ রাজনৈতিক দলগুলি যে উৎসাহ তার প্রেক্ষিতে বলা যায় বোটারদের উৎসাহ তেমনটা ছিলই না৷
তাই গোরক্ষপুর আসনে ৪৭.৪৫ শতাংশ ও ফুলপুর আসনে বোট পড়েছে মাত্র ৩৭.৩৯ শতাংশ৷ বিহারের আরারিয়া লোকসভা আসনে ৫৭ শতাংশ আর জেহানাবাদ আসনে ৫০.০৬ শতাংশ আর ভাতুয়া আসনে বোট পড়েছে মাত্র ৫৪.০৩ শতাংশ৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপি লোকসভা আসনে ৭১টি আসন পায়৷ চার বছরের মাথায় উপনির্বাচনে বোট পড়েছে সেটা মারাত্মকভাবে কম৷ এখানে গোরক্ষপুর লোকসভার আসনে ৬২ শতাংশ বোটার বোট বয়কট করেছে৷ এর কারণ হলো সাধারণ মানুষের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি মোটেই আস্থা নেই ৷ তারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বোট দান না করে৷ বোটারদের মধ্যে বেশ কিছু নোটা বোটারও আছেন৷ দুটি বিহারের বিধান সভার আসন যথাক্রমে জেহানাবাদের আসনে ৫০শতাংশ বোটার বোটদানে বিরত ৷ আর ভাতুয়া আসনে ৪৬ শতাংশ বোটার বোট দানে বিরত৷ এতে প্রমাণিত হয় দীর্ঘ ৭১ বছরের স্বাধীন ভারতের সিংহভাগ জনগণ (নাগরিকগণ) সরকারগুলির শাসনে মোটেই কোনো সেবা পায়নি৷ রাজনৈতিক দলগুলি লুটেপুটে রাজ্যগুলিকে শোষণই করে চলেছে৷ এতে প্রমাণিত হয় এ দেশের গণতন্ত্র জনগণের সেবা না দিয়ে নিছক ধনী ও শাসকগুলি নিজেদের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে মাত্র৷ এটা ভারতের গণতন্ত্রে কাছে একটা অশনি সংকেত!
অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে বলতে হয় যে অদ্যাবধি যে সব দল শাসনতন্ত্রে বসে দেশ শাসন করে চলেছে তাদের অধিকাংশই জনগণের স্বার্থের কথা শোনেইনি বরং তাদেরই রক্তমোক্ষণ করে ধনীর সম্পদ বাড়িয়েছে৷
প্রত্যক্ষভাবে গণতন্ত্রের নামে গরিব শোষণ করে দেশ ও জনগণকে ধণতন্ত্রের যূপকাষ্ঠে বলি দিয়ে জনগণকে রক্তশূণ্য করে চলেছে৷ ঋণের বোঝার সবটাই হতভাগ্য কোটি কোটি গরিব নাগরিকদের কাঁধে ও মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে৷ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিল ও গুডস্ সার্বিস ট্যাক্স (জি.এস.টি) এর সর্বনাশা শোষণ৷ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর দৃষ্টান্তটাতো সরকারী অর্থনীতির চরমতম ব্যর্থতা৷
এদেশের গণতান্ত্রিক শাসনের নামে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি-নীতিগুলির মধ্যেই রয়ে গেছে ত্রুটি, জানা সরষের মধ্যেই ভূত৷ নাগরিকগণের অদ্যাবধি কোন অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত করার কোন শুভ প্রচেষ্টাই চোখে পড়লো না নির্র্বচিত জন প্রতিনিধিদের কর্ম প্রচেষ্টায় !
অত্যন্ত লজ্জার কথা তা হলো অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও, কর্মসংস্থানের অভাবে কোটি কোটি কর্মক্ষম যুবক যুবতী ও বয়স্ক কর্মক্ষম ব্যষ্টিরা বেকার হয়ে বেঁচে থাকার নিষ্ঠুর জীবন যন্ত্রনা ভোগ করে চলেছে৷ বলতে কষ্ট হয় টিভিগুলিতে যেভাবে নির্লজ্জ প্রচার হচ্ছে তাতে মানসিক উৎকর্ষ হওয়াতো দূরের কথা অনেকে বিপথগামী হচ্ছে৷
মোদ্দা কথা হলো, জনগণ বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত, দারিদ্র্য সীমার নীচে যারা বাস করে, তারা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না৷
কেবলমাত্র রাজনৈতিক দলগুলি আর তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা ছল বল কৌশলে বোট বৈতরণী পার হয়ে দেশের অসহায় জনগণকে কেবল আশার ছলনায় ভুলিয়ে রেখেছে৷ তাইতো দেখা যায় বোট যখন আসে সব দলই দয়ার সাগর হয়ে ছিঁটে ফোঁটা করুণা বর্ষণ করে থাকে৷ দুর্নীতিতে ও ঋণভারে জন্মভূমি ভারাক্রান্ত৷ সমস্তদিকে উৎপাদন ব্যাহত, নিরাপত্তার দারুণ অভাব, শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর শিলান্যাস৷ রেশনিং ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তরা যে অমানবিক কাণ্ড ঘটাচ্ছে তার কোন প্রতিকারই নেই ৷ ভেজালে দেশ ছেয়ে গেছে৷ নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ আজ অসহায়৷ যেসব প্রাত্যহিক ঘটনা ঘটছে সেটাতো গণতন্ত্রের দারুণ কলঙ্ক৷ নারীনির্র্যতন ও পাশবিক অত্যাচার চলছে৷ মোদ্দা কথা গণতন্ত্রের শাসকগণ চরমভাবেই ব্যর্থ৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে৷ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কোন দিশাই সরকার দেখাতে পাচ্ছে না ৷ কি রাজ্য আর কি কেন্দ্র সরকার , শুধু গদির দিকেই দলগুলির নজর৷ সেবার কোন দৃষ্টান্তই নেই৷ গণতন্ত্রে সুস্থ জনমত গ্রহণটি একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় ৷ সেটা তো ভেঙ্গেই পড়েছে৷
নির্বাচনে মানুষ উৎসাহিত হয়ে বোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে কিন্তু নির্বাচনের যে ছবি চোখে পড়ছে তাকে ঠিক সুস্থ নির্বাচন বলা যায় না৷ নির্বাচনে অন্ততঃ ৬৫ শতাংশ বোট পড়ার কথা৷ শতকরা তিনভাগের দু ভাগ তো বোট দেবে ! সেটার কোন নজির চোখে পড়ল না৷ কারণটা যে মানুষের অনাস্থা ত াকি অস্বীকার করা যায়? রাজনৈতিক দলগুলির আচার আচরণে, কথাবার্র্তয়,প্রশাসনিক ক্রিয়া কান্ডে ও সেবায় জনগণ চরমভাবে বেদনাহত৷ তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন থেকে৷
এই মতদান থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ও নেতা-নেত্রীরা শিক্ষা নিয়ে ন্যায়নীতির পতাকা হাতে নিয়ে প্রকৃত দেশসেবায় একটু মন দিন ৷ তা না হলে গণতন্ত্র চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে৷ যে দেশে জনগণেরই সরকার সেদেশের কর্ষকদের প্রাণে বাঁচতে রাস্তায় নামতে হয় কেন? এর উত্তর কে দেবে৷ এটাই কি প্রশাসনিক ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় পরিচয় নয়?
- Log in to post comments