‘‘প্রাণ দেবো, তবু গোর্খাল্যাণ্ডের নামে বাঙলা ভাগ হতে দেবো না’’ সারা বাঙলায় আমরা বাঙালীর প্রতিবাদ সভায় অঙ্গীকার

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

শিলিগুড়ি: দার্জিলিংয়ে খুনী সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী  বিমল গুরুং ও তার সহকর্মীদের  অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবীতে ও গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে   শিলিগুড়িতে আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল বেরুচ্ছে ও বিভিন্ন স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ জনগণও ব্যাপকভাবে আমরা বাঙলীর মিছিলগুলিতে ও পথসভাগুলিতে   স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন৷ সবাই শপথ গ্রহণ করেন, ‘‘প্রাণ দেবো তবু গোর্খাল্যাণ্ডের নামে বাঙলা ভাগ হতে দেবো না৷’’

গত ১০ই জুলাই বিকেলে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে বাঙলা ভাগের চক্রান্তের প্রতিবাদে পথসভা হয় শিলিগুড়ি এয়ার ভিউ মোড়ে (হাওড়া পেট্রোল পাম্প)-এর সামনে৷ এই পথসভায় বক্তব্য রাখেন আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় সাংঘটনিক সচিব খুশীরঞ্জন মন্ডল ও জলপাইগুড়ি জেলা সচিব কেশব সিংহ৷

শ্রী খুশীরঞ্জন মন্ডল বলেন, গোর্র্খরা নেপাল থেকে  জীবিকার  সন্ধানে এখানে এসেছে৷ পশ্চিম বাংলা তাদের আশ্রয় দিয়েছে৷ তারা এদেশের নাগরিক নয়, তবুও পশ্চিমবঙ্গ তাদের অন্ন জুগিয়েছে৷ আর উল্টে এখন তারা পশ্চিম বাংলার বুকে ছুরি চালাতে বদ্ধ পরিকর৷ এটা যে কত বড় বিশ্বাসঘাতকতা---তা  ভাবা যায় না!

শ্রীকেশব সিং বলেন, ১৯৫০ সালে ভারত-নেপাল চুক্তিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নেপালীরা ভারতে আসতে পারবে , জীবিকা অর্জন করতে পারবে, কিন্তু এখানকার নাগরিকত্ব পাবে না৷ ১৯৫০-এর পূর্বে অতি সামান্য সংখ্যক গোর্র্খ  দার্জিলিং-এ ছিল৷ পরে তারা স্রোতের মত দার্জিলিংয়ে প্রবেশ করেছে৷ তাই এদের অধিকাংশই এখানকার আইনগতভাবে নাগরিকই নয়৷ কম্যুনিষ্টরা এদের  মন জয় করে নিজেদের পায়ের তলাকার মাটি শক্ত করতে এদের ‘গোর্র্খল্যান্ড’ সেন্টিমেন্ট দিয়ে উস্কিয়েছে৷ কম্যুনিষ্টদের এটাই চরিত্র! ত্রিপুরাতেও  এরা সেখানকার উপজাতিদের বাঙালীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তাদের (উপজাতিদের) কব্জা করতে চেয়েছিল৷ এদের বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতির জন্যে দেশের বিভিন্নস্থানে আজ নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে৷ মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে দার্জিলিংয়ে এসে স্পষ্ট ভাষাতেই বলে দিয়েছিলেন, যদি গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলন করতে হয়, তাহলে নেপালীরা যেন তাদের নিজেদের দেশ নেপালে গিয়ে আন্দোলন করে, এখানে নয়৷ এখানে তাদের কোনো বৈধ অধিকার নেই৷ গায়ের জোরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বাঙালী ও অন্যান্য অনেপালীদের ওখান থেকে তাড়িয়ে তারা বাঙলা ভেঙ্গে পৃথক গোর্র্খল্যান্ড রাজ্য বানাতে চায়৷

শ্রী কেশব সিং বলেন, বাঙলার বাঙালীরা কোনোমতেই আর বাঙলা ভাগ হতে দেবে না৷ গোর্র্খরা যদি বাঙলার সমাজ-সংসৃকতির সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে চায়, তাহলে তারা এখানে থাকতে পারে, না হলে তাদের দার্জিলিং ছেড়ে চলে যেতেই হবে৷

১০ই জুলাই সন্ধ্যায় আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে শিলিগুড়ির জলপাই মোড়েও এক পথসভা আয়োজন করা হয়৷ এখানে বক্তব্য রাখেন দেবাশিস দেব ও খুশী মন্ডল ৷ দেবাশিস দেব বলেন, বিমল গুরুংদের বিরুদ্ধে মদন তামাং হত্যা সহ নানান গুরুতর অভিযোগ রয়েছে৷ তার ওপরে এরা সরকারী সম্পত্তি নষ্ট, অগ্ণি সংযোগ,  ভাঙ্গচুর প্রভৃতি চালিয়ে যাচ্ছে৷  এই সমস্ত সমাজদ্রোহী , দেশদ্রোহীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত৷ আমাদের বিস্ময় লাগে, কীভাবে এরা আদালতের রায় অমান্য করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও অবাধে দার্জিলিংয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্য  ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েরই অবিলম্বে বিমল গুরুং ও তার ,সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷

১১ই জুলাই গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে পথসভা হয় প্রথমে কোর্টমোড়ে ট্রেজারী বিল্ডিংয়ের সামনে৷ এখানে বক্তব্য রাখেন কেশব সিং ও খুশী মন্ডল৷ এখানে কেশব সিং বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এক নাগাড়ে দেশী-বিদেশী পঁুজিবাদী ও শোষকগোষ্ঠী বার-বার বাঙলা ভাগ করে বাঙলাকে দুর্বল করে এর ওপর শোষণ চালিয়েছে৷ ব্রিটিশ আমলের পর ভারত স্বাধীন হওয়ার সময়েও বাঙলাকে ভাগ করা হয়েছে ও টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে৷ আবার বাঙলা ভাগের চক্রান্ত চলছে৷ আর নয়, কোনোমতেই আমরা বাঙলা ভাগ হতে দেব না৷

খুশী মন্ডলও বলেন, যারা আবার বাঙলা ভাগ করে গোর্র্খল্যান্ড বানাতে চাইছে সেই বিমল গুরুংদের  বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে৷  এর পেছনে কেন্দ্রের শাসকদলের চক্রান্তের তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন৷

১২ই জুলাই শিলিগুড়িতে বিধান রোডে গোষ্ঠ গোপালের মূর্ত্তির সামনে আমরা বাঙালীর তরফ থেকে পথসভা হয়৷ এই পথসভায় বিকাশ বিশ্বাস মিন্টু বিশ্বাস, দেবাশিস দেব ও খুশীরঞ্জন মন্ডল অবিলম্বে বিমল গুরুংদের গ্রেফতারের দাবী করেন৷ বিকাশ বিশ্বাস গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের ইতিহাস ও গোর্র্খদের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, গোর্র্খরা বিদেশী, দার্জিলিংয়ে গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের সাংবিধানিক বৈধতা নেই ও বাঙলার বিরুদ্ধে এ হল চরম বিশ্বাসঘাতকতা৷ মিন্টু  বিশ্বাস বাঙলার সমস্ত মানুষকে একযোগে বাঙলা ভাগের এই চক্রান্তের প্রতিবাদে গর্জে  উঠতে আহ্বান জানান৷

এদিন সন্ধ্যার পর হাকিমপাড়ায় পাকুড়তলা মোড়ে আমরা বাঙালীর পথসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এই পথসভাতেও  বিকাশ বিশ্বাস, মিন্টু বিশ্বাস, দেবাশিস দেব ও খুশীরঞ্জন মন্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷  বিকাশ বিশ্বাস  গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ  জানিয়ে বলেন, আর বাঙলা ভাগ নয়, বরং বাংলার সমস্ত টুকরো টুকরো অঞ্চল একত্রিত করে বাঙালীদের নিজ বাসভূমি ‘বাঙালীস্তান’ গড়ার জন্যে বৃহত্তর আন্দোলনে গড়ে তুলতে  সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷

গত ১৪ই জুলাই শিলিগুড়ির মহকুমার অন্তর্গত খড়িবাড়িতে ও নেপাল-ভারত সীমান্তের পাণিট্যাঙ্কিতে ও এরপর বাতাসী, ভালুগাড়া প্রভৃতি এলাকায় গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের নামে বাঙলা ভাঙার চক্রান্তের প্রতিবাদে ও এই আন্দোলনের পেছনে নেপালের মাওবাদীদের ও চীনের মদত  দানের প্রতিবাদে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে মিছিল ও পথসভা হয়৷ এই পথসভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় সচিব খুশী মন্ডল, বিভূতি দত্ত, সঞ্জয় দাস প্রমুখ৷

১৫ জুলাই আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে গোর্র্খল্যান্ডের নামে বাঙলা ভাগের চক্রান্তের প্রতিবাদে পথসভা হয় আশিঘর ও ঘুঘুমারিতে৷  এখানেও বক্তব্য রাখেন  খুশী মন্ডল, বিভূতি দত্ত, জয়ন্ত দাস প্রমুখ৷

১৬ই জুলাই শিলিগুড়ির  চম্পাসারি মোড়ে বিশ্বাস ঘাতক বিমল গুরুংদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রতিবাদে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে এক বাইক মিছিলের আয়োজন করা হয়৷ পরে চম্পাসারি বাজারে পথসভা হয়৷ এই পথসভায় বক্তব্য রাখেন --- বিকাশ রায়, বিভূতি দত্ত, জয়ন্ত দাস , খুশী মন্ডল প্রভৃতি আমরা বাঙালীর নেতৃবৃন্দ৷

১৭ জুলাই চকদই বাজারে ও নিউ জলপাইগুড়ি বাজারে নেতাজীর মূর্ত্তির সামনে আমরা বাঙালীর পথসভা হয় ৷ এই  পথসভায় বক্তব্য রাখেন --- বিকাশ বিশ্বাস, রামপ্রসাদ সরকার, দেবাশিস দাস, জয়ন্ত দাস প্রমুখ

১৮ জুলাই আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের মাধ্যমে পশ্চিমবাঙলার রাজ্যপালের কাছে এক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়৷ এই স্মারকলিপিতে দার্জিলিংয়ে অসাংবিধানিক অবৈধ গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের নামে বনধ্ ডেকে হিংসা ছড়ানো,  সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুর ও অগ্ণিসংযোগ প্রভৃতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের  ও মদন তামাং হত্যার অভিযুক্ত বিমলগুরুং ও মোর্র্চর অন্যান্য নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী করা হয়৷  এরপর ১৯শে জুলাই আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে শিলিগুড়িতে মহামিছিলের মাধ্যমে  গোর্র্খল্যান্ডের আন্দোলনের নামে বাঙলা ভাগের চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়৷