বর্ত্তমান ভারতে প্রায় ১১৬৫২১০ টি গ্রাম, ১১৬৫২১টি পঞ্চায়েত, ব্লক এর সংখ্যা প্রায় ৬৮৮৪টির বর্ত্তমানে কিছু বেশী হতে পারে৷ যেহেতু লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
যেহেতু সারা ভারতে পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাই পঞ্চায়েত গুলিকে আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে স্বয়ংভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতে হবে জনগণ ও শাসকগণকে যৌথভাবে৷ গণতান্ত্রিক সরকারের অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন৷ তাই অন্ততঃ ১১৬৫২১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা প্রয়োজন৷ আর ১১৬৫২১টি পঞ্চায়েতে অন্ততঃ ২টি করে উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে তোলা দরকার৷ তাতে সকলে শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে৷ ৬৮৮৪ ব্লকে, বর্তমানে ব্লকের সংখ্যা কিছু বেশী হতে পারে ভারতে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে, সেই কারণে হায়ার সেকেন্ডারী বিদ্যালয় খুলতে পারলে ছাত্র-ছাত্রার সুবিধা হবে৷ মহাবিদ্যালয় গ্রাম-শহরে আরো বেশী খোলা জরুরী কারণ শিক্ষার হার বাড়ছে৷ এছাড়া গ্রামীণ ভারতে হাতে কলমে কাজ করার শিক্ষা দেওয়ার জন্যে কারিগরী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে,কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যাতে বিজ্ঞান সম্মতভাবে ছেলে মেয়েরা সুশিক্ষা লাভ করতে পাবে৷ তার জন্যে বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র ব্লকে ব্লকে খুলতে হবে৷ তা হলে বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে৷
প্রতিটি ব্লকে সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদ করার চিন্তা করতে হবে৷ এই কাজে সাহায্য করবে কৃষি, শিল্পে শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যষ্টিগণ নিজ নিজ ব্লকে৷ সরকারী খাস জমিগুলি সংস্কার করে এই সব শিক্ষিত ব্যষ্টিদের দ্বারা বিজ্ঞান সম্মতভাবে চাষাবাদ করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ পঞ্চায়েতে শিক্ষাপ্রাপ্তদের দ্বারা সমবায় ভিত্তিক বিপণি খুলে তাদের স্বয়ম্ভর করে গড়ে তুলতে হবে৷ এগুলি হবে ন্যায্য মূল্যের বিপণি৷ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রতিটি পঞ্চায়েতে যে সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে সেখানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত অর্র্থৎ শিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের নারীপুরুষ নির্বিশেষে নিয়োগ করে স্বয়ংম্ভর করে তুলতে হবে৷ কৃষিভিত্তিক ও কৃষিসহায়ক শিল্পও গড়া দরকার পঞ্চায়েতগুলিতে যাতে তারা পর মুখাপেক্ষী না হয়৷ সব দিক থেকে পঞ্চায়েত তথা ব্লকগুলিকে স্বয়ম্ভর করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে৷ চাকুরীর আশায় গ্রাম থেকে যেন যুবক যুবতীগণ শহর মুখী না হয়৷ গ্রাম আজও অনাদৃত হয়ে পড়ে আছে, শহর ও নগর জনসংখ্যার চাপে দূষিত হচ্ছে৷ শহরের পৌরসভাগুলিকেও স্বয়ম্ভর করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে৷ স্থানীয় যুবক যুবতীদের বিষয়ে -সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে যাতে করে তাদের কর্মসংস্থান সেই পৌরসভার মধ্যেই হয়৷ লোকসংখ্যা অত্যধিক হওয়াতে সেটা সম্ভব না হলেও পৌরসভার মধ্যে যে সব কলকারখানা আছে সেগুলিতে যাতে স্থানীয়রা কাজ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ স্কুল কলেজ, উচ্চবিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় গুলিতে স্থানীয় শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কর্মে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ যদি এই পদ্ধতি গ্রহণ না করা হয় তাহলে ক্ষোভ ও অশান্তি বাড়তেই থাকবে৷ প্রতিটি ব্লক ও পৌরসভাগুলিতে যেন স্থানীয়রা কর্ম করার সুযোগ পান৷ তবে বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্তদের পদপূরণের জন্য বাহিরের লোককে নিয়োগ করা যেতে পারে৷
অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার কথা, জীবন-জীবিকা নির্র্বহের জন্য এদেশের হতভাগ্য গরিব যুবক ও যুবতীগণ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন বাহিরে ভাগ্যান্বষণে যাত্রা করে৷ এ এক দারুণ দুর্র্ভগ্যের বিষয় তাই দেশকে স্বয়ংভর করে গড়ে তোলার দায় হলো সরকার ও জনগণের৷
স্থানীয় লোকেরা যতো স্থানীয় ক্ষেত্রে কর্মক্ষম হবে ততই মঙ্গল ৷ অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ হবে, দেশ স্বয়ংভর হবে৷ দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে যেভাবে ভারতের প্রতিটি মানুষ যারা হতদরিদ্র ও শোষিত হচ্ছে তাদের শোষণ থেকে একমাত্র মুক্তির উপায় স্থানীয়দের স্থানীয়ভাবেই যতোটা পারা যায় তাদের বেকারত্ব দূর করা৷ প্রাউটের মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হ’ল এটাই৷ আশা করি, দেশের জনগণ ও সরকার এটা বুঝেই এগিয়ে যাবেন৷
স্থানীয় মানুষদের স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হলে তাদর সেবার মানসিকতা বাড়বে ও নিজের বলেই কর্মক্ষেত্রকে মনে করবে৷ উৎপাদন এতে বাড়বে ও নানাসমস্যা থেকে কর্মক্ষেত্র রক্ষা পাবে৷
গণতন্ত্রে সমবায়ই হলো বাঁচার একমাত্র পথ৷ যদি গণতন্ত্র সামাজিকরণকে অগ্রাধিকার না দেয় তাহলে গণতন্ত্র প্রহসনেই পরিণত হয়, যা বর্ত্তমানে হয়ে চলেছে৷
- Log in to post comments