শিশুদের জন্যে গান
রাতের বেলায় সবাই ঘুমায় শিউলি কেন জাগে৷
বলতে হবে মা গো আমায় বলতে হবে আগে৷৷
আর ফুলেরা দিনে জাগে রাত্তিরে ঘুমায়৷
দিনের বেলায় সুবাস ঢালে মধুতে গান গায়৷৷
তাদের সাথে মোর পরিচয় আলোর অনুরাগে৷৷
ঘুমায় ময়না কুকুরছানা, ঘুমায় যে মৌমাছি৷
শিউলি তরু হেসে’ বলে আমি জেগে’ আছি৷
বলো না মা শিউলি জাগে কাহার অনুরাগে৷
শিশুর মনের মতো করেই মা একটা উত্তর দিলেন–
শোণরে খোকন, শিউলি জাগে রাতের অন্ধকারে৷
দিনের আলোয় লজ্জা পেয়ে’ মাটিতে যায় পড়ে’৷
রাতের শেষে শিউলি ঝরে হলে পড়েই ভোর৷
সেই সময়ে সোণার খোকন ঘুমটি যাবে তোর৷৷
(৩৬১ সংখ্যক)
মধুর গীতি
সকল মনের বীণা এক সুরে বাজে আজ সকল হূদয় সৌরভ৷
নন্দনমধু সাজে এলে তুমি ধরা মাঝে দিলে সবে এক অনুভব৷৷
ছিঁড়ো না, ছিঁড়ো না এ কুসুম মালাখানি মমতার সারা বৈভব৷৷
এসো তুমি আরো কাছে আরো কাছে আরো কাছে ৷
নিয়ে যাও যাহা কিছু সব৷৷
অন্নপ্রাশনের গান
ননীর পুতুল টুটুল টুটুল হাত পা নাড়ছে হেসে’ হেসে’৷
অঙ্গুলিগুলি চম্পককলি, দ্যুলোকের দ্যুতি চোখে ভাসে৷৷
কুসুমিত বন করিয়া চয়ন এসেছে খোকন (খুকু) নব দেশে৷
গড়ে তুলে নোব ক্ষড় করে’ নোব’ কোলে তুলে’ নোব ভালবেসে৷৷
(৫৯ সংখ্যক)
বিবাহ অনুষ্ঠানের গান
দুজনে যখন মিলিছে তখন এদের তোমরা আশিষ দিও৷
দহনজ্বালাতে ফুলের মালাতে দুঃখ–সুখেতে সাথে থাকিও৷৷
মানব সমাজ অবিভাজ্য, কোন নীড় নয় পরিত্যজ্য৷
সবাই মিলিয়া নাচিয়া গাহিয়া এদের তোমরা মানিয়া নিও৷৷
ধরণীর ধ্বনি মমতার বাণী এদের জীবন রাঙিয়ে দিও৷৷
(৫৮ সংখ্যক
নববর্ষের গান
বৎসর, নব বৎসর, তুমি কল্যাণ এনো চারিদিকে৷
নূতন ভোরের হাতছানিতে নূতন ঊষার নবালোকে৷৷
বৃক্ষ–লতারা সবুজে ভরুক, বন্য পশুরা নিরাপদ হোক৷
পাখীরা কণ্ঠে অমিয় ভরিয়া উড়িয়া বেড়াক দিকে দিকে৷৷
মানুষে মানুষে ভেদ দূর হোক, ক্ষুদ্ধির অপচয় রোধ হোক৷
শক্তির সর্বনাশা প্রতাপ সংযত হোক সব দিকে৷৷’’
(১২৮ সংখ্যক)
বিজয়ার গান
এগিয়ে চলো আজিকে শুভ বিজয়া৷
দূর কাছে এসো, সবে ভালবাসো নবালোকে চলো নাচিয়া৷৷
যা ছিল বিভেদ সব ভুলে’ যাও, মিত্রারি সব কাছে টেনে’ নাও৷
মনের ময়ূরে নভে ছেড়ে’ দাও রঙীন কলাপ মেলিয়া৷৷
ঘনান্ধকার সরিয়া গিয়াছে, রণহুংকার পুরোনো হয়েছে৷
প্রীতি ঝংকার কর্ণে কহিছে সব গ্লানি ফেল মুছিয়া৷৷
(৫০১৩ সংখ্যক)
ঋতু পর্যায়ের গান
শরৎ ওই আসে, ওই আসে, ওই আসে৷
শরৎ নাচের তালে তালে পা ফেলে’ ফেলে’
মন্দাক্রান্তা ছন্দে ধারায় হাসে৷৷
শরৎ শুধু নয় শেফালীর সুগন্ধতে,
শরৎ শুধু নয় শাদা মেঘের ভেলাতে৷
শরৎ প্রাণে আসে, শরৎ মনে আসে,
শরৎ ভুবনকে ভুলিয়ে মর্মে হাসে৷৷
শরৎ শুধু নয় বাতাবী নেবুর গন্ধে,
শরৎ শুধু নয় কুশ–কাশের দোলায় ছন্দে৷
শরৎ প্রাণে আসে, শরৎ মনে আসে,
শরৎ ভুবনকে দুলিয়ে’ মর্মে হাসে৷৷
(১২৩ সংখ্যক)
সমাজচেতনামূলক গান
উল্কা অশনি বহিছে বহ্ণি সফণ কালো সর্প৷
জাগাও মানবতা নাশো দানবতা আসুরী শক্তি করো খর্ব৷৷
এ আকাশ এ বাতাস স্বয়ং প্রকাশ সবার তরে দিল বিধাতা৷
তারকা খচিত নভঃ অবারিত শ্যামল শষ্পে ধরা ধাতা৷
সবাকার তরে ভাই এসো তাই মিশে’ যাই,
সবাই সবার মোরা গর্ব৷৷
সঞ্চয় উপসঞ্চয় যা রয়েছে মানুষের তরে তা যথেষ্ট৷
মিথ্যে কাড়াকাড়ি হানাহানি হয়েছে, হয়েছে ক্ষতি অনিষ্ট৷৷
আজ পূর্বাকাশে যে রবি হেসেছে তার আলোয় সব মন ভরব৷
অতীতে যা হয়নি তা করব৷৷
(৪৫৯৯ সংখ্যক)
বাউলাঙ্গের গান
তোমার নামে ভাসিয়ে দিলুম আমার সাধের তরীখানি৷
ঊহাবোহে চলবে দুলে’ অহর্নিশি ভয় না মানি’৷৷
ঝড়–বাদলের অশনিতে কাঁপবে নাকো আঁধার রাতে৷
ধ্যেয় তুমি ধ্যানও তুমি, দিচ্ছ হাতছানি৷৷
সৌরকরের স্বর্ণ আলোয়, মসীমাখা অমার কালোয়৷
চলবে বেছে’ মন্দ ভালোয় সরিয়ে সকল গ্লানি৷৷
(৪৭৫৫ সংখ্যক)
নব্যমানবতাবাদের গান
মানুষ যেন মানুষের তরে সব কিছু করে’ যায়’৷
একথাও যেন মনে রাখে পশু–পাখী তার পর নয়,
তরুও বাঁচিতে চায়৷
অন্ধকারে পথ হারাইয়া কেন বা মানুষ মরিবে কাঁদিয়া
আমাদের আশা যত ভালোবাসা কাছে টেনে’ নেবে তায়
অনশনে অশিক্ষাতে দগ্ধভালের বহ্ণিজ্বালাতে
সবারে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে রচিব এ অলকায়৷৷
(২১৯২ সংখ্যক)
আধ্যাত্মিক ভাবের গান
নয়নেরই অঞ্জন মানসরঞ্জন তুমি জনমে মরণে সাথী মোর৷
মঞ্জুল মহাকাশে অঙ্গ লাবণি ভাসে তোমাতে হয়েছি বিভোর৷৷
প্রপঞ্চ পরিসরে তোমারই মায়া মুকুরে
সব কিছু রণিত সিঞ্জিত ও নূপুরে৷
আঁখি তুলে ধরো আমারে করুণা করো সব ভাবে ওগো চিত চোর৷৷
কিছুই চাহিনা আমি তোমারই চরণে, দাও পরাভক্তি আত্মসমর্পণে
তুমিই অভীষ্ট আমার যে ইষ্ট, তুমি বিধু আমি যে চকোর৷৷
(১৩৭০ সংখ্যক)
- Log in to post comments