(গত ২৬শে সন্ধ্যায় আনন্দনগর ধর্মমহাসম্মেলনে রেণেশাঁ ইয়ূনিবার্র্স্যলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আচার্য কিংশুকরঞ্জনজীর ভাষণ ঃ আচার্য মোহনানন্দ অবধূত কর্তৃক অনুলিখিত ও সংক্ষেপিত)
ধার্মিক ব্যাষ্টির বৈশিষ্ট্য হল , সে সংশ্লেষণের পথ ধরে এগিয়ে যাবে৷ নিজে কেবল ধার্মিক ব্যষ্টি হলে যথেষ্ট নয়, তাঁর আচরণ যেন ধর্মসম্মত হয় তা দেখতে হবে ৷ নেতারা বিশ্লেষণের পথ নিয়ে চলে আর তা চলে স্বার্থপূর্ত্তির উদ্দেশ্যে৷ কিন্তু ধার্মিক ব্যষ্টি বা সাধক চলবে সেবা-মানসিকতা নিয়ে৷ এতে মানসিক শক্তির প্রচুর বিকাশ ঘটবে৷
এই জগৎ আপেক্ষিক আর আপেক্ষিক জগতে বাস করতে গেলে আমাদের Subjective Approach Through Objective Adjustment করে চলতে হবে অর্থাৎ আমাদের লক্ষ্যটা হবে পরমপুরুষ কিন্তু জাগতিক যা কিছু কর্ত্তব্য-কর্ম ব্রাহ্মী ভাবনা নিয়ে করে চলব৷
এখন শংকরাচার্য বলেছেন, ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা৷ কিন্তু বাবা বলেছেন, ব্রহ্ম সত্য জগদপি সত্যম আপেক্ষিকম্৷ এখন আপেক্ষিক সত্যটা কী জিনিস? যেমন আমরা চলন্ত ট্রেনে বসে আছি অন্য যাত্রীদের তুলনায় আমি স্থির কিন্তু আসলে কী আমি স্থির? স্থির না৷ কারণ ট্রেন তো ৮০/৯০ কি.মি বেগে ছুটছে তো আমিও ট্রেনের বেগে ছুটে চলেছি৷ এখন অন্য যাত্রীর তুলনায় যে আমি স্থির এটাও তো সত্য৷ এ হলো আপেক্ষিক সত্য৷ কিন্তু আসল সত্য কী ? আসল সত্যটা হলো আমিও ৮০/৯০ কিমি বেগে অর্থাৎ ট্রেনের বেগে গতিশীল৷ যেমন, এখন আমরা সকলে বসে আছি ভাষণ শুণছি তো আমরা সকলে স্থির আছি৷ কিন্তু সত্যিটা হলে পৃথিবী যে গতিতে ঘুরছে৷ আমরাও পৃথিবীর প্রবল বেগের সঙ্গে ঘুরে চলেছি৷ কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারছি না ও অনুভব করতে পারছি না৷ কিন্তু এটাই আসল তথ্য৷ আর আমরা বসে আছি বলে যে স্থির তা তো আসল তথ্য নয়৷ কিন্তু এর তুলনায় অন্যেরা স্থির এটা তো একটা তথ্য৷ তাই এটাই হলো আপেক্ষিক সত্য৷ আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই সৃষ্টিতে কোন কিছু স্থির নেই--- সবই গতিশীল৷ তাই চরম স্থিরতা বলে কিছুই নেই, সত্য হলো তা যাতে স্থান-কাল-পাত্রের কোন প্রভাব নেই৷ তা হলো স্থানাতীত, কালাতীত ও পাত্রাতীত৷ কেবল ব্রহ্মই স্থান কাল-পাত্রাতীত, দ্বিতীয় অন্য কোন সত্তা নয়৷ মহান বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন এই আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা বলে গেছেন৷ তিনি বলেছেন, আলোকের গতি সবসময় ধ্রুবক (কনস্ট্যান্ট) যা হলো ১,৮৬,০০০ মাইল প্রতি সেকেন্ডে ৷ কিন্তু ভর (পাত্র) , কাল (সময়), স্থান সবসময় পরিবর্তনশীল৷ প্রতি সেকেন্ডে এদের পরিবর্ত্তন হয়ে চলেছে৷
নিউটন আপেল পড়া লক্ষ্য করে বলেছেন পৃথিবীর আকর্ষণের ফলে আপেল মাটিতে পড়ে ৷ এটাকে বলা হয় মাধ্যাকর্ষণ বল৷ বৈজ্ঞানিকগণ শুধু পৃথিবীর আকর্ষণের প্রতিটি কথা বলেননি তাঁরা বলেছেন, বিশ্বের সমস্ত অণুপরমাণু, বিশ্বের যে কোনো স্থানের অণুপরমাণুকে আকর্ষণ করে চলেছে৷ তেমনি গ্রহ-তারা-নীহারিকা অন্য তারা-গ্রহ-নীহারিকাদেরও আকর্ষণ করে চলেছে৷ এই যে একের সঙ্গে অন্যের কমবেশী আকর্ষণ একে বলা হয়েছে মহাকর্ষ বল৷ ঠিক তেমনি পরমপুরুষ প্রতিটি অণু-পরমাণু গ্রহ-তারা-রবি, জীবজন্তু, মানুষ পশু উদ্ভিদের প্রতি আকর্ষণ করে চলেছেন৷ আমরাও পরমপুরুষকে আকর্ষণ করে চলেছি৷ আমরা পরমপুরুষের চারিদিকে ঘুরে চলেছি ও তার কাছাকাছি চলেছি৷ এইভাবে চলতে চলতে আমরা তার সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যাব৷
এখন যেভাবে তাঁর আকর্ষণে তাতে মিলে যাব সেইটাই আমাদের সাধনা৷ মনে রাখতে হবে জগতের মূল নীতিটা হল একে অন্যের প্রতি আর্কষণ৷ যাকে আমরা বিকর্ষণ বলি আসলে তাও একধরণের আকর্ষণ, তা হলে ঋণাত্মক আকর্ষণ৷ যেমন ধর--- কোন মানুষের প্রতি আমার খুবই হৃদ্যতা--- এ হলো আকর্ষণের ব্যাপারে ,কিন্তু কোন কারণে মনোমালিন্য হয়ে গেল তার প্রতি বিদ্বেষভাব এসে গেল৷ কিন্তু এই বিদ্বেষ ভাব অবস্থায় ঘুরে ফিরে তারই কথা মনে আসবে--- তারই চিন্তা ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠবে৷ এ হ’ল একধরণের আকর্ষণ৷ যেমন কংস তার মৃত্যুর আগে চবিবশ ঘন্টা শত্রু হিসাবে কৃষ্ণেরই ভাবনা নিত৷ যাইহোক বিশ্বে সর্বত্র এই আকর্ষণ শক্তি কাজ করে চলেছে৷ পরমপুরুষেরও আমাদের প্রতি আকর্ষণ আছে আর আমাদেরও পরমপুরুষের প্রতি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আকর্ষণ আছে৷ এই পরস্পরের আকর্ষণে যেদিন আমরা এক হয়ে যাব সেদিনটা হবে আমাদের জীবনের স্বর্ণিম দিন৷ সেইদিনের প্রতীক্ষায় আমাদের আকুল আগ্রহে থাকতে হবে৷ এইটাই জীবনের লক্ষ্য৷
- Log in to post comments