পুঁজিবাদী আগ্রাসনের অবসান কোন্ পথে

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

আজ সমাজের সর্বক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অবক্ষয়, শোষণ, নির্যাতন একজনকে বঞ্চিত করে আর একজন তার কাঙ্খিত দ্রব্য পেতে চায় ফলে শুরু হয়েছে অবাধ প্রতিযোগিতা সমাজের অধিকাংশ মানুষের প্রতি বঞ্চনার ওপর তৈরী হচ্ছে মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর প্রাচুর্যের ইমারত ফলে স্বাভাবিকভাবে জমছে ক্ষোভ সমাজের বৃহত্তম অংশের এই ক্ষোভকে যতই প্রশাসনিক শৃঙ্খলার নামে শাসক শ্রেণী সংযত রাখার চেষ্টা করুক না কেন, তা একদিন বিস্ফোরণের রূপ নেবেই নেবে আর সেই বিস্ফোরণে ধবংস হয়ে যাবে আজকের সভ্যতার এই চাকচিক্যময় ইমারত তখন কেউ বাঁচবে না পুঁজিপতি ধনিক গোষ্ঠী তো বাঁচবেই না, কিন্তু পাল্টা আক্রমণে পুরো সমাজটাই ধবংসস্তুপে পরিণত হবে

সরকারের ন্যাশন্যাল ক্রাইম ব্যুরোরই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১০ সালে ভারতে ১৫৯৬৪ জন কর্ষক অভাবের তাড়নায় ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছেন অথচ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোব্স পত্রিকায় প্রকাশিত তাদের এক সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে ২০১১ সালে ভারতের ১০০ জন শীর্ষস্থানীয় ধনী মানুষের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ২০১২ সালে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০ লক্ষ কোটি টাকা অন্যদিকে দেশের ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমারেখার নীচে তারা পেট ভরে খেতেও পায় না তাই বছরে প্রায় ২ কোটি মানুষের অর্ধাহারে অনাহারে অপুষ্টিজনিত রোগের কারণে মৃত্যু হয়

পরিসংখ্যানের বিরাট ফিরিস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু এটাতো সবার জানা, কোটি কোটি মানুষকে সুকৌশলে বঞ্চণা করেই পুঁজিপতিরা তাদের মুনাফার পাহাড় তৈরী করেছে

পুঁজিপতিরা কি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সমাজকে শোষণ করে স্ফীতোদর হচ্ছে ---না, তা নয় তারা অর্থের জোরে সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও কলুষতার ডানা বিস্তার করছে

প্রথম কথা বলি, সমাজে যারা চুরি, খুন-জখম, বলাৎকার করে সমাজকে কলুষিত করছে, ভাল করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাদের অধিকাংশর জীবনের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ করতে না পেরে তারা অন্ধকার পথকে আশ্রয় করেছে তারা না পেয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য, না পেয়েছে সুশিক্ষা, না পেয়েছে সুচিকিৎসা, না পেয়েছে শীতের পর্যাপ্ত বস্ত্র, না পেয়েছে বসবাসপোযোগী গৃহ এই কারণেই তাদের মনের হতাশায় তাদের বিপথে পরিচালিত করেছে, সমাজের স্বচ্ছল মানুষের প্রতিহিংসা তাদের অন্যায় কাজে বেপরোয়া করে তুলেছে

এতো গেল একটা দিক অন্যদিকে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিপুল সম্পত্তি যাদের আছে, তাদের অধিকাংশ এই সম্পদের অপব্যবহার করছে ধনীরা তাদের বিপুল সম্পত্তির ট্যাক্স দেওয়ার ভয়ে অধিকাংশ সম্পত্তিকে কালো টাকায় পরিণত করছে এই কালো টাকা দিয়ে চলছে ভারতের সমান্তরাল অর্থনীতি দেশে যে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ নানারকম ড্রাগ, হেরোইন প্রভৃতি মাদক দ্রব্য আমদানি হচ্ছে ও যুব সমাজকে ধবংস তার পেছনেও রয়েছে কালো টাকা

দেশ ছেড়ে বিদেশের ব্যাঙ্কে জমা হচ্ছে এই কালো টাকা ফলে  দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বহিঃস্রোত ঘটছে আমাদের নেতারা বিনিয়োগের জন্যে বিদেশী পুঁজিপতিদের আহ্বান করছে, কিন্তু অন্যদিকে পুঁজিপতিরা দেশের যে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বাইরে পাচার করছে তাই অর্থাভাবে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এই মুনাফাখোর পুঁজিপতি ও তাদের দালালরা দেশের উন্নতির চেয়ে নিজেদের মুনাফাটাকেই অনেক বেশী মূল্য দেয় মুনাফাটাই এদের ধ্যান-ধারণা

এই মুনাফার অংশ বৃদ্ধি করার জন্যে পুঁজিপতিরা রাজনীতিতে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে কোটি কোটি কালো টাকা ঢালে এই কালো টাকার জোরে যোগ্য লোককে বঞ্চিত করে অযোগ্য দুর্নীতিপরায়ণ মানুষেরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে আর তারা শাসন ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে ওই পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধিতে তৎপর হয় এইভাবে গোটা রাজনীতিটা কলুষিত হয়

গণ মাধ্যম, পত্র-পত্রিকা ও দূরদর্শনের ক্ষেত্রে পুঁজিপতিরা বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালে দূরদর্শনে সিরিয়াল,  সিনেমায় সেই সমস্ত দৃশ্য বা ঘটনা দেখানো হয়, যা সাধারণ মানুষকে বেশী আকর্ষণ করে জল যেমন সাধারণভাবে নিম্নমুখী তেমনি সাধারণ মানুষের মনও সাধারণভাবে অশ্লীল চিত্র, অশ্লীল ঘটনা আর সস্তা আনন্দ-ফূর্ত্তির দিকে বেশী ধাবিত হয় তাই চলচ্চিত্রকাররাও তাদের চাহিদাটাই পূর্ণ করে লক্ষ্য---বইকে হিট করা অর্থাৎ বিপুল মুনাফা অর্জন করা সমস্ত গণ মাধ্যমের ক্ষেত্রেই এই জিনিসটা দেখা যায় ফলে মুনাফাখোর পুঁজিপতিদের কারসাজিতেই দেশে অসংসৃকতির (যাকে আমরা অপসংসৃকতি বলি, অপসংসৃকতি কথাটা ব্যকরণগতভাবে ঠিক নয় বলে অসংসৃকতি বলা হচ্ছে) প্লাবন বয়ে যায়, আজকে হচ্ছেও তাই

ধর্ম মানুষের আত্মিক উন্নতির পথ কিন্তু মুনাফাখোর পুঁজিপতিরা আত্মিক উন্নতি চায় না, আরও অর্থ চায় তাই তারা অর্থের দেবতার প্রতি, সৌভাগ্যের দেবতার প্রতি, বিঘ্ন নাশকের দেব-দেবীর প্রতিই বেশী আকৃষ্ট হয় এই ধরণের পূজা অনুষ্ঠানের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালে, এই ধরণের মন্দির গড়ার পেছনে বিপুল পরিমাণ ঢালে প্রকৃত আধ্যাত্মিক চর্চা যারা করে---তাদের প্রতি তাদের কোনও আকর্ষণই নেই তাই পুঁজিপতিদের বিপুল অর্থ সাহায্যে আসল ধর্ম মানুষের আড়ালে চলে যায়, নকল ধর্মেরই রমরমা বাজার দেখা দেয় এইভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতি সমাজের ধর্মবোধকে ধবংস করতে সাহায্য করে

পুঁজিবাদ সমাজে স্বাভাবিকভাবে আগে অর্থ রোজগারের অবাধ প্রতিযোগিতা সেখানে মূল্যবোধ বলতে আর কিছু থাকে না সবাই অর্থের পেছনে ছুটে মূল্যবোধকে গলা টিকে হত্যা করে এই কারণেই সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় বেড়েই চলে মানুষ তার মনুষ্যত্বকে খুইয়ে বসে তাই বলছি, সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা-সংসৃকতি, ধর্ম----এই সবকিছুকেই বাঁচাতে পুজিবাদের অবসান অত্যন্ত জরুরী

পুঁজিবাদের অবসান ঘটানোর জন্যে মার্কসবাদ এল কিন্তু মার্কসবাদের ভিত্তি জড়বাদ কিন্তু জড়বাদী জীবনাদর্শের ফলে মার্কসবাদীদেরও লক্ষ্য হল অর্থ তথা স্থূল সুখপ্রাপ্তি সমাজবাদের গোড়ার কথা হল, আমি কেবল নিজে ভোগ করব না সবাইকে সাথে নিয়ে ভোগ করব মানুষের মৌলিক মনস্তত্ব হল, মানুষের মনের অভাব অনন্ত মনের এই অনন্ত অভাববোধকে যদি স্থূল জড়-জাগতিক বস্তুর দিকে সবাইকে চালিত করে, তাহলে মানুষে মানুষে হিংসা-দ্বেষ-সংঘর্ষ আসবেই কারণ জড়বাদ বা জড়বস্তু সীমিত সীতি সম্পদের দিকে সবাই তার অসীম অভাব নিয়ে ধাবিত হলে এই সংঘর্ষ স্বাভাবিক উদাহরণ দেওয়া যাক, এক জায়গায় ১০০টা রুটি আছে আর আছে ১০০ জন প্রত্যেকের চাহিদা অনন্ত তাহলে প্রত্যেকেই চাইবে সবগুলো দখল করতে বা ভোগ করতে তাহলে তো সংঘর্ষ বাধবেই যার শক্তি, সুযোগ বেশী থাকবে, সে বেশী নেবে অন্যেরা বঞ্চিত হবে জড়বাদী মনস্তত্বের এইটাই স্বাভাবিক পরিণতি

বৃহত্তর সমাজের ক্ষেত্রে, ধরলাম, প্রশাসন কড়া মনোভাব নিয়ে ঘোষণা করল সমষ্টির স্বার্থে একটার বেশী রুটি কেউ পাবে না আর যাতে কেউ বেশী না নেয় এইজন্যে কড়া পুলিশী ব্যবস্থা করা হল কিন্তু মানুষের মনের একটা স্বভাব হল, মন বেশীদিন বাহ্যিক চাপ সহ্য করতে পারে না ফলে মনের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে সবার মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকল এই ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে হতে একদিন বিস্ফোরণের রূপ নিয়ে প্রশাসনকে চরমভাবে আঘাত করবে ফলে মার্কসবাদীদের তথাকথিত বিপ্লব প্রতিবিপ্লবে-র সম্মুখীন হতে বাধ্য ঠিক এই জিনিসটাই হয়েছে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে, পোল্যাণ্ড, চেকোশ্লাভাকিয়া, যুগশ্লাভিয়া, আলবেনিয়া, পূর্ব জার্মানি, পূর্ব ইজরায়েল প্রভৃতি সমস্ত দেশে ফলে ওই সব দেশেই জনগণ কমিউনিষ্ট শাসনকে আবর্জনা স্তূপে নিক্ষেপ করেছে

চীন, ভিয়েতনাম প্রভৃতি এই পরিস্থিতি দেখে আবার পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কসবাদের যে মূল কথা, ব্যষ্টিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ, এখন সর্বত্রই ব্যষ্টিগত সম্পত্তিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ফলে মার্কসবাদ সর্বত্রই পুঁজিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে

তাহলে পথ কী পুঁজিবাদের অবসান ঘটবে কোন্ পথে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, সমবায়ের আদর্শের ওপর সমাজের সামাজিক-অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তুলতে হবে

মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর প্রাউট দর্শনে বলেছেন, শিল্প ব্যবসায়ে ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয়করণ নানান কারণে সমর্থন করা যায় না, তার মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে এই যে, প্রথমত, আমলা নির্ভরশীল, মনে রাখতে হবে, মুখে যে যাই বলুক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আমলাতন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে যাকে বাদ দিয়ে সেবা চলতে পারে কিন্তু শাসন চতে পারে না রাষ্ট্রের পক্ষে দেশের সর্বাংশে পরিব্যাপ্ত ক্ষুদ্র-বৃহৎ প্রতি ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠায় যথাযতভাবে পরিচালন করা একেবারেই অসম্ভব, শুধু হিসাব-নিকাশেই নয়, কর্মী পরিচালনার ব্যাপারেও তাতে বেশ একটা শৈথিল্য দেখা দেবে দ্বিতীয়তঃ ব্যষ্টিগত অধিকারে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান যেরূপ শিল্পগত বা ব্যবসায়গত দক্ষতা দেখাতে পারে, রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠান তা পারে না বা পারা সম্ভব নয়

সকল শিল্প ব্যবসায় সামবায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত করার প্রস্তাবও বাস্তবতা বিরোধী, কারণ সমবায়ের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেই জনমণ্ডলীর মিলিত শ্রমে ও বুদ্ধিতে, যে জনমণ্ডলী একই আর্থিক কাঠামোয়, একই প্রয়োজনের তাগিদ নিয়ে বাস করছে ও সমবায়িক ভিত্তিতে উৎপন্ন (বা ক্রীত) বস্তুর তৈরী বাজার মোটামুটি বিচারে হাতের কাছে চাইছে

এই কারণে, প্রাউটে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় প্রথমত, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প---যেগুলি ব্যষ্টির পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়া হবে এর মাধ্যমে কেউ পুঁজিবাদী হতে পারবে না দ্বিতীয়তঃ লৌহ-ইষ্পাত শিল্প প্রভৃতি অবৃহৎ শিল্প যে শিল্পগুলিও উৎপাদিত শিল্প অন্যান্য শিল্প কলকারখানায় প্রয়োজন হবে, এই সমস্ত মূল শিল্প স্থানীয় সরকারের হাতে (কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নয়) থাকবে ও এগুলি চলবে না লাভ-না ক্ষতি নীতিতে এদের লক্ষ্য দেশের অন্যান্য শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা

আর অতি ক্ষুদ্র নয় ও অতি বৃহৎ (মূল) শিল্প নয়---এমন ধরণের সমস্ত মাঝারি শিল্পকে সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত করতে পারবে এতে কর্মরত সমস্ত শ্রমিক বা কর্মীরই হাতে যৌথ মালিকানা থাকবে অর্থাৎ এসব সবার মধ্যে বণ্টিত হবে

সমস্ত কৃষি ব্যবস্থা, প্রাউট চায়, ধাপে ধাপে সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত করতে এই অর্থনীতিতে ব্যষ্টিগত কেউ অন্যকে বঞ্চিত করে বিপুল সম্পত্তি করতে পারবে না সে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে আর এভাবেই আগ্রাসী পুঁজিবাদের অবসান ঘটাতে হবে তবে এখানে একটা প্রশ্ণ উঠতে পারে সমবায়ের সাফল্য সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে এখানে প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন, সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূল তিনটি তত্ত্বের ওপর---নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান supervision)ও জনগণের হৃদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ এই তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করছে যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হওয়ার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ংনির্ভরতার চেতনা গড়ে উঠেছে কারণ জনগণ মনপ্রাণ দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে চায়, তাই সেখানে তারা সমবায়ের দ্বারা শুষ্ক মরুভূমিকে শস্যশ্যামলা করে তুলেছে ঠিক সেই মনোভাব ভারতে গড়ে তোলা হয়নি বলে সমবায় অসাফল্যের নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের সমবায়, অর্থনীতির উন্নতির জন্যে তৈরী হয়নি---তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তাই এখানে সমবায় সফল হওয়াটাই আশ্চর্যজনক হত (প্রাউটের রূপরেখা---পৃষ্ঠা ১১০)

সমবায়ের সাফল্যের পেছনে উল্লিখিত তিন তত্ত্বকে মজবুত করার জন্যে রাষ্ট্রনেতাকে চেষ্টা চালাতে হবে এজন্যে জনগণের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রয়াস চালাতে হবে জনগণের মধ্যে কর্তব্যনিষ্ঠা জাগাতে হবে এক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের কথা স্মরণীয়---ফাঁকি দিয়ে মহৎ কাজ করা যায় না

যেমন কৃষিতে সমবায়ের জন্যে মানুষকে উৎসাহিত করতে হলে প্রথমে কয়েকটি সার্থক নমুনা তৈরী করা চাই, তার জন্যে (pilot project), (machine sation), জলসেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা, ভাল বীজ, শস্য বিনষ্টকারী পতঙ্গ থেকে শস্য উদ্ধারের পদ্ধতি প্রভৃতি নানাপ্রকার ব্যবস্থা করা উচিত

মোট কথা, সমবায় হচ্ছে প্রাউটের অর্থনীতির মূল বুনিয়াদ দেশনেতাদের কর্তব্য, মানুষকে বোঝাতে হবে (নিজেদের আচার-আচরণ দিয়েও যে, ভৌতিক বা জাগতিক ক্ষেত্রে মানুষের অন্তর্জগতের সর্বোত্তম প্রকাশ হল এই সমবায় পদ্ধতি মানব অস্তিত্বের অমৃতরসের বৈবহারিক ও সামাজিক প্রতীকী রূপটি হল এই সমবায় প্রথা সর্বশেষে আবার বলি, দেশের মানুষের মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকূমূল্যবোধকে জাগ্রত করার সর্বতোমুখী প্রয়াস না করলে সমবায় ও সমাজকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না