আজকাল বেশীর ভাগ বাচ্চাদের জ্বর হলেই তড়কা বা কনভাল্শন হচ্ছে৷ এতে স্বাভাবিকভাবেই বাবা–মায়েরা ভয় পান, নার্ভাস হয়ে পড়েন৷ বেশ কিছুদিন আগেও এ বিষয়ে মানুষের ধ্যান ধারণা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন৷ তখন তড়কা বা ফিট হলেই লোকে ভাবত ভূতে পেয়েছে৷ মানুষ ছুটত ওঝার কাছে৷ তখন ওঝাই ছিল এই রোগের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক৷ যে পদ্ধতিতে এর চিকিৎসা করা হত সেটাও ছিল বীভৎস, কষ্টদায়ক ও অমানুষিক৷ ক্রমশঃ মানুষ সভ্যতার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল৷ চিকিৎসা পদ্ধতিতেও এল পরিবর্তন৷ চিকিৎসা পদ্ধতিও হ’ল আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত৷ সাধারণতঃ বেশী জ্বর, শরীরে জল কমে যাওয়া, মৃগী আর মেনিনজাইটিস থেকে এই তড়কা বা ফিট হয়৷ ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস থেকেও ফিট হতে পারে৷ শতকরা ৫ ভাগ শিশু যার তড়কায় আক্রান্ত তাদের মৃগী রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে৷ যদি সময় মত টিটেনাসের টীকা নেওয়া হয় তবে ভয়ের আর কোন কারণ নেই৷ যে সমস্ত শিশুদের মধ্যে এই তড়কা বা ফিট হওয়ার লক্ষণ আছে তাদের জ্বর কখনই বেশী হতে দেওয়া উচিত নয়৷ জ্বর তাড়াতাড়ি কমিয়ে ফেলা দরকার৷ মাথায় জল ঢেলে বা জলপট্টি দিয়ে জ্বর কমানো যেতে পারে৷ তাতেও যদি না কমে জ্বর কমানোর ওষুধ খাওয়াতে হবে৷ শিশুর ফিট হলে ও তার নিশ্চিত কারণ না বোঝা গেলে তাকে চেপে ধরে রাখা ঠিক নয়৷ চামচ বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মোড়া একটা কাঠের টুকরো শিশুর দাঁতের দু–পাটির মধ্যে দেওয়া উচিৎ যাতে শিশু নিজের জিভ কামড়ে না ফেলে৷ যদি বাচ্চার তড়কা ভাব পাঁচ–মিনিটের কম থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে তার উপশম করা উচিত৷ কিন্তু যদি পনের–মিনিটের বেশী সময় স্থায়ী হয় তবে চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন৷ শিশুর এই ফিটের হার যত বেশী হবে ততই তার মস্তিষ্ক্ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এর ফলে শিশু অবাঞ্ছিত আচরণ করতে পারে৷ তাছাড়া তার বুদ্ধির বা স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেও অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ কাজেই সব সময় লক্ষ্য রাখা দরকার এই তড়কা বা ফিট যেন খুব বেশী বার না হয়৷ তবে এই সমস্ত বাচ্চাদের প্রতিপালন সাধারণভাবেই করা উচিত৷ বাচ্চাদের প্রতি অতিরিক্ত নজর দিলে বা যত্ন নিলে তার জেদী ও খেয়ালী হবার সম্ভাবনা থাকে৷ শিশুর অহেতুক জেদ পূরণ না করলে সে প্রচণ্ড রাগারাগি ও কান্নাকাটি করতে পারে৷ তখন অভিভাবরাও ভাবেন এবার বুঝি বাচ্চাটি ফিট হয়ে যাবে৷ কিন্তু সে ধারণাটা সম্পূর্ণ অমূলক৷ অনেক সময় বাবা–মায়েরা বাচ্চাদের কাঁদাতে চান না ফিট হয়ে যেতে পারে ভেবে৷ কিন্তু তার ফল হয় বিপরীত৷ বাচ্চারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে৷ এই আচরণ শুধু বাচ্চাটির পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, এর ফলে অন্যান্য ভাইবোনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে ও সেটা পরিবারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ সুক্লে শিশুটিকে সঠিক সময়ে ভর্তি করা উচিত৷ সুক্লের শিক্ষক–শিক্ষিকা ও বন্ধু–বান্ধবদের শিশুটির তড়কা হবার ব্যাপারটি জানিয়ে রাখা দরকার৷ যাতে তারা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন৷ একজন সহানুভুতিশীল ও বিবেচক শিক্ষক শিক্ষিকার গুরুত্ব অনেক বেশী৷
- Log in to post comments