সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়া ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী ইয়ূনিয়নগুলি কেন্দ্রের কাছ থেকে ৮৫৮৬ কোটি টাকার মুলধন পাবার পথ সুগম করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে প্রাথমিক চুক্তি সই করেছে৷ এর মধ্যে কলকাতায় সদর দপ্তর থাকা তিনটি ব্যাঙ্কও রয়েছে৷ অবশ্য ব্যাঙ্কগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য পেতে গেলে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে৷ যার মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের কিছু সুযোগ সুবিধা কাটা, ছাটাই, কিছু কিছু শাখা বন্ধ করার মত শর্ত৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই শর্তগুলি নিয়েই সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে৷ সরকারী ইয়ূনিয়নের নেতারা অবশ্য বলছেন সই হওয়া সমঝোতাপত্র বা মউ আদতে প্রাথমিক চুক্তি ছাড়া কিছুই নয়৷ কর্মচারী ছাটাই করার শর্ত মেনে নিয়ে কোনও চুক্তি সই করা হবে না৷
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে সরকারের শর্তাবলী মেনে নিয়ে ইয়ূনিয়নগুলি ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতায় আসা ও শেষমেষ আর্থিক সাহায্য বাস্তবায়িত হওয়া হয়ত সময়ের ব্যাপার৷ কিন্তু প্রশ্ণ হ’ল ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙ্গা করার জন্যে সরকারের এই প্রয়াসে কতটা সুফল মিলবে৷ সরাসরি আর্থিক সাহায্যের পরিবর্তে ব্যাঙ্কগুলির বিপুল পরিমাণ অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধারের জন্যে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ যদি কেন্দ্রীয় সরকার তথা অর্থমন্ত্রক নিতে পারত তবে হয়তো অনেক বেশী সুফল মিলত৷ ব্যাঙ্কগুলি সাধারণতঃ জনগণের আমানত ও অন্যান্য মূলধন ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় বড় ব্যবসায়ী ও বড় বড় শিল্পপতিদের ঋণ হিসেবে দিয়ে সুদ উপার্জন করে৷ যেহেতু ব্যাঙ্কগুলির প্রদত্ত ঋণের পরিবর্তে সুদ উপার্জন করে তাই ব্যাঙ্কের কাছে প্রদত্ত ঋণ সম্পদ বলে পরিগণিত হয়৷ তাই ব্যাঙ্ক দ্বারা প্রদত্ত এই ঋণ ও তার প্রদেয় সুদ যদি একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা অবধি অনাদায়ী থাকে তবে তা অনুৎপাদক সম্পদ বলে পরিগণিত হয়৷ ৩১শে মার্চ ২০১৬ অবধি সমস্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের সম্মিলিত পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা (৫,৯৪,৯২৯ কোটি টাকা)৷ পরবর্তী এক বছরে এই পরিমাণ আরও বেড়েছে৷ এই বিপুল পরিমাণ টাকা, যেটা কিনা জনগণের আমানতের ও ব্যাঙ্কের মূলধনের একটা বড় অংশ, ঋণ খেলাপী বড় বড় শিল্পপতিদের হাতে অনাদায়ী হিসেব আটকে আছে৷ ঋণ খেলাপী বড় বড় শিল্পপতিদের অনেকে আবার বিদেশে আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার যদি ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধারের জন্যে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে পারত তবে বেশী সুফল মিলত৷ চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে যে টাকা ব্যাঙ্কগুলিতে দেওয়া হবে তার একটা বড় অংশই আবার অবশ্যম্ভাবী ভাবে অনুৎপাদক সম্পদ নামক ব্ল্যাক হোলের গর্তে সেঁধিয়ে যাবে৷
- Log in to post comments