রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্যের পরিকল্পনা

লেখক
মনোজ কুমার সরকার


সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়া ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী ইয়ূনিয়নগুলি কেন্দ্রের কাছ থেকে ৮৫৮৬ কোটি টাকার মুলধন পাবার পথ সুগম করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে প্রাথমিক চুক্তি সই করেছে৷ এর মধ্যে কলকাতায় সদর দপ্তর থাকা তিনটি ব্যাঙ্কও রয়েছে৷ অবশ্য ব্যাঙ্কগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য পেতে গেলে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে৷ যার মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের কিছু সুযোগ সুবিধা কাটা, ছাটাই, কিছু কিছু শাখা বন্ধ করার মত শর্ত৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই শর্তগুলি নিয়েই সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে৷ সরকারী ইয়ূনিয়নের নেতারা অবশ্য বলছেন সই হওয়া সমঝোতাপত্র বা মউ আদতে প্রাথমিক চুক্তি ছাড়া কিছুই নয়৷ কর্মচারী ছাটাই করার শর্ত মেনে নিয়ে কোনও চুক্তি সই করা হবে না৷ 
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে সরকারের শর্তাবলী মেনে নিয়ে ইয়ূনিয়নগুলি ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতায় আসা ও শেষমেষ আর্থিক সাহায্য বাস্তবায়িত হওয়া হয়ত সময়ের ব্যাপার৷ কিন্তু প্রশ্ণ হ’ল ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙ্গা করার জন্যে সরকারের এই প্রয়াসে কতটা সুফল মিলবে৷ সরাসরি আর্থিক সাহায্যের পরিবর্তে ব্যাঙ্কগুলির বিপুল পরিমাণ অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধারের জন্যে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ যদি কেন্দ্রীয় সরকার তথা অর্থমন্ত্রক নিতে পারত তবে হয়তো অনেক বেশী সুফল মিলত৷ ব্যাঙ্কগুলি সাধারণতঃ জনগণের আমানত ও অন্যান্য মূলধন ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় বড় ব্যবসায়ী ও বড় বড় শিল্পপতিদের ঋণ হিসেবে দিয়ে সুদ উপার্জন করে৷ যেহেতু ব্যাঙ্কগুলির প্রদত্ত ঋণের পরিবর্তে সুদ উপার্জন করে তাই ব্যাঙ্কের কাছে প্রদত্ত ঋণ সম্পদ বলে পরিগণিত হয়৷ তাই ব্যাঙ্ক দ্বারা প্রদত্ত এই ঋণ ও তার প্রদেয় সুদ যদি একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা অবধি অনাদায়ী থাকে তবে তা অনুৎপাদক সম্পদ বলে পরিগণিত হয়৷ ৩১শে মার্চ ২০১৬ অবধি সমস্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের সম্মিলিত পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা (৫,৯৪,৯২৯ কোটি টাকা)৷ পরবর্তী এক বছরে এই পরিমাণ আরও বেড়েছে৷ এই বিপুল পরিমাণ টাকা, যেটা কিনা জনগণের আমানতের ও ব্যাঙ্কের মূলধনের একটা বড় অংশ, ঋণ খেলাপী বড় বড় শিল্পপতিদের হাতে অনাদায়ী হিসেব আটকে আছে৷ ঋণ খেলাপী বড় বড় শিল্পপতিদের অনেকে আবার বিদেশে আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার যদি ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধারের জন্যে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে পারত তবে বেশী সুফল মিলত৷ চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে যে টাকা ব্যাঙ্কগুলিতে দেওয়া হবে তার একটা বড় অংশই আবার অবশ্যম্ভাবী ভাবে অনুৎপাদক সম্পদ নামক ব্ল্যাক হোলের গর্তে সেঁধিয়ে যাবে৷