সাইকো সার্জারি অপরাধীকেও ভালমানুষে রূপান্তরিত করতে পারে

লেখক
এন এন এস

ইদানীং প্লাষ্টিক সার্জারি করে বদলে দেওয়া যায় মানুষের চেহারা৷ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্যে কিডনি, হূৎপিণ্ড সব কিছু পাল্টে ফেলা সম্ভব হচ্ছে৷ হাড়, মজ্জা বদলে বা নতুন করে জোড়া লাগানোও মানুষের নাগালের মধ্যে৷ কিন্তু এভাবে যদি মানুষের মনের গতি বদলে দেওয়া যেত তাহলে এ পৃথিবীতে অনেক কাণ্ডই ঘটতে পারত৷ সম্প্রতি চিকিৎসকরা ‘সাইকো সার্জারি’র মাধ্যমে একজন অপরাধীকেও ভাল মানুষে রূপান্তরিত করতে পারবে৷ অপরাধীকে একজন শান্ত মানুষের মত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত করা যাবে৷ গবেষকদের এই সাফল্যের সূত্র ধরে একটি ঘটনার কথায় আসা যাক৷ প্রাচীন রোমে একটি প্রবাদ বাক্যের খুব প্রচলন ছিল যে, কপালে তলোয়ারের ঘা দিলেই পাগলামি ভাল হয়ে যাবে৷ কিন্তু কি কারণে গবেষকদের মনে এই বিশ্বাস দানা বেঁধেছিল তা আবিষ্কার করার জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৩৫ সাল অবধি৷ এ সময় দু’জন বিখ্যাত শরীর বিজ্ঞানী পি বার্ড ও ভি বি মাউন্টক্যাসেল একটি বিড়ালের মাথায় প্রায় পুরো ঘিলুটাই সরিয়ে ফেলেছিলেন, বাকি রেখেছিলেন শুধু সেটুকু অংশ, যেখানে মেরুদণ্ড গিয়ে শেষ হয়েছে৷ গবেষণায় দেখা গেল বিড়ালটি দিব্যি বেঁচে আছে, খাচ্ছে ঘুমুচ্ছে৷ কিন্তু ব্যতিক্রম একটাই, বিড়ালটি শান্তশিষ্ট ও স্থির মেজাজের হয়ে গেছে৷

এর কিছুদিন পর বিজ্ঞানী জেমস ফুলটনের গবেষণা আরও চমক সৃষ্টি করল৷ লুসি ও বেকি নামে দুই ভয়ানক রাগী শিম্পাঞ্জি ছিল৷ বিজ্ঞানী ফুলটন শিম্পাঞ্জিদ্বয়ের মস্তিষ্ক্ থেকে একটু স্নায়ুগুচ্ছ কেটে ফেলেন৷ সুস্থ হওয়ার পর দেখা গেল শিম্পাঞ্জির আগেকার সেই ক্রোধ স্তিমিত হয়ে একদম প্রভুভক্ত হয়ে গেছে ও সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে৷ খবরটি দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল৷ ডঃ এগাস মোনিস নামে এক বিজ্ঞানীর মাথায় খেলে গেল নতুন বুদ্ধি, মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখলে তো মন্দ হয় না৷ কারণ শিম্পাঞ্জি ও মানুষের মস্তিষ্কের গঠন তো প্রায় একই রকম৷ তাই লিসবনের পাগলা গারদ থেকে ৬৩ বছরের এক বদরাগী বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের ওপর অস্ত্রোপচার করলেন ও সাফল্য এলো অপ্রত্যাশিতভাবে৷

আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে কোন অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আবেগ, কোন অংশ পরিচালন করে অঙ্গ চালনা, আবার কোন অংশ খবরদারি করে স্মৃতিশক্তির৷ মানুষের চিন্তাশক্তির অঞ্চল থাকে সামনের মস্তিষ্কে, আর আবেগের অঞ্চল থাকে মধ্য মস্তিষ্কের নিচের দিকে ‘হাইপোথ্যালামাস’ নামক জায়গায়৷ এই দুই অঞ্চলকে সংযোগ করে রেখেছে যে স্নায়ুগুলো, সেগুলো কাটছাঁট করার উদ্দেশ্যে নেমেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই চিকিৎসক–জেমস ওয়াট ও ওয়াল্টার ফ্রিম্যান৷ তাই তাঁরা গবেষণা করে জেনেছেন যে, আবেগ ঘটিত বিষয়গুলো দমন করতে পারে এই স্নায়ুগুলো৷ তাই তারা ভুরুর নিচে ও নাকের কাছে ঘেঁষে একটি সূক্ষ্ম কাঁচি ঢুকিয়ে কেটে দিতে লাগলেন কয়েকজন পাগল ও খুনীর মস্তিষ্কের সংযোগস্থলে৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভিন্ন সমস্যা দেখা দিল৷ ওই সংযোগস্থল ছিন্ন করতে গিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ফলে অস্ত্রোপচারের পর অনেক ক্ষেত্রেই বিপরীত ফল দেখা দিল৷ যেমন কারও কারও ক্ষেত্রে আলস্য বেড়ে গেল, কেউবা জবুথবু স্বভাবের হয়ে গেল ও অতিপ্রাকৃত দৃশ্য দেখতে লাগল৷ সম্প্রতি সাইকো সার্জারির দু’জন বিশেষজ্ঞ নিউজিল্যাণ্ডের ডঃ মারে ও ফ্যালকোনার ও মিসিসিপির ডঃ অরল্যাণ্ডো জে এ্যাণ্ডির মতে, এই পদ্ধতিতে প্রায় ৮০ জনের ওপর নিখুঁত অস্ত্রোপচার করেছেন৷ তাঁদেরও ধারণা খুব শীঘ্রই তাঁরা সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে ১০০ ভাগ সফল হবেন৷ এই সফলতায় আমাদের পৃথিবীতে মানুষের অসামাজিক মনোবৃত্তি চিরতরে দমন করার পথ আবিষ্কার হতে পারে৷