সভ্যতার সঙ্কট ও তার প্রতিকার

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

সবাই সুখ চায়, শান্তি চায়৷ কিন্তু বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি সুখ বা শান্তির জন্যে অনুকূল নয়৷ অর্থ দিয়ে মানুষ কত কি করছে৷ সুখ শান্তি সে তো অর্থকরী ফসল নয় যে অর্থ দিয়ে তা কিনবে৷ তা মানুষের কর্মের পরিণতি৷ বর্তমান এ জটিল পরিস্থিতিতে এককভাবে শান্তি রক্ষা করাও সম্ভব নয়৷ তাই সামূহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে চাই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা৷ আর তারই জন্যে প্রয়োজন কুসংস্কার মুক্ত বৃহদাদর্শ৷ ‘‘যত মত তত পথ’’ হলে এখন আর চলবে না৷ সর্বধর্ম সমন্বয়ও আর কাজে লাগছে না৷ তাই চাই সংগ্রামী জীবন, বলিষ্ঠ মন, কর্মতৎপর,  সৎসাহসী গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ৷ কী তাঁদের কাজ? তাঁরা নিজেরা কালিমামুক্ত জীবন যাপনে নীতিবাদী মানুষ রূপে পরিচিত হবেন ও অন্যকেও সে পথে প্রেরণা যোগাবেন৷ সৃষ্টিশীল সেবামূলক মানব কল্যাণের কাজে রত থেকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলবেন৷ কী তাদের আদর্শ? অন্যায় করব না, অন্যায় বরদাস্ত করব না৷ তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন–‘অন্যায় যে করে ও অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে৷’

আর আজ অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে করতে  আমরা মানবতাকে শুধু কলুষিত করছি তাই নয়–আমরা মানব পরিচয়ের যোগ্যতাই যেন হারিয়ে ফেলছি৷ কীভাবে? 

*    আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের এমনভাবে গ্রাস করছে যে নিজ সুখের জন্যে অন্যের কষ্টের কারণ হতেও যেন আজ আর দ্বিধা নেই৷

*    পচনশীল সমাজনীতি (কম্যুনিজম্, ক্যাপিট্যালিজম্) সবাইকে অন্ধকূপে ফেলছে তবু তাকে আঁকড়ে ধরে আছি৷

*    অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার হিম্মত কজনের আছে? যাদের আছে তাঁরাই বিশ্বৈকতাবাদের স্বপ্ণ দেখেন৷

*    নগ্ণ ছবি পথে ঘাটে টাঙিয়ে রেখে যুবশক্তিকে ধবংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তার প্রতিকার নেই কেন? নীতিবাদীরাও কী আজ অন্ধ হয়ে গেলেন, না সহনশীলতার দোহাই দিয়ে দায়দায়িত্ব থেকে দূরে সরে থাকছেন?

*    পার্টি পলিটিক্সের নামে দেশকে বিক্রি করতেও দ্বিধা নেই৷ প্রতিবাদী দু/চার জন যাঁরা আছেন তাঁদেরও চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে৷

*   ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া দুটোই অন্যায় তবু তা বন্ধ হচ্ছে না৷

*   এদেশের অর্থ ও সম্পদ বহির্দেশে পাচার হচ্ছে তা জেনেও রাজনৈতিক নেতারা তাতে মদত দিচ্ছে নিজ স্বার্থে৷

*   বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মানব কল্যাণে প্রয়োগ না হয়ে তা গোষ্ঠীস্বার্থে প্রয়োগ হচ্ছে কেন?

*   অতি বিলাস–সামগ্রী কি জন্যে তৈরী হচ্ছে (যেখানে মানুষ খেয়ে পরে শিক্ষা–দীক্ষায় এগোতে পারছে না)?

কী তার প্রতিকার?

প্রাচ্যের মুনি–ঋষিদের মূল্যবোধের শিক্ষা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে৷ নৈতিক মান বাড়ানোর জন্যে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে৷ অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ সংস্কারকদের সবাইকার মিলিত প্রচেষ্টায় মানবতার শিক্ষায় শিশুদের মানুষ করতে হবে৷ সবাইকার ভাগ্য একই সূত্রে গ্রথিত একথা ভুললে চলবে না৷ যারা আকাশে বাতাসে, সমাজ ও মানব মনে বিষ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে৷ স্ত্রীজাতির নগ্ণতা প্রকাশ হওয়া মানে মাতৃজাতির অবমাননা করা যা সমাজকে ধবংসের মুখে ঠেলে দেয় তা হতে দেওয়া চলবে না৷ মাদক দ্রব্যের ওপর প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতেই হবে নাহলে বাঁচার তাগিদেই মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে৷ তাই শান্তিকামী মানুষদের কাছে আমার হার্দিক আবেদন–অশান্তির বিষবায়ুতে দগ্ধ না হয়ে আসুন আমরা প্রতিবাদী হয়ে মিলিত ভাবে শুভমের প্রতিষ্ঠায় জগৎ কল্যাণের কাজে সামিল হই৷ শুভকাজে পরমপুরুষের শুভাশিস সঙ্গে থাকে৷ তাই একাজে আমরা সফল হবোই৷