শিলচর ঃ গত ২৪শে নবেম্বর শিলচরের অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপিনচন্দ্র পাল মিলনায়তন হলে এক মনোজ্ঞ সেমিনারের আয়োজন করা হয়৷ অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ ও রেণেশাঁ ইয়ূনিবার্র্সলের শিলচর শাখার যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনার হয়৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে অসমের ‘রাওয়া’ শিল্পীগোষ্ঠী প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান আহ্বায়ক অধ্যাপক সুমন গুণ সেমিনারের পরিকল্পনার ও বিশেষত্বের ওপর আলোকপাত করেন৷ এরপর রেণেশাঁ ইয়ূনিবার্র্সলের কেন্দ্রীয় সচিব আচার্য রবীশানন্দ অবধূত আনন্দমার্গের সংস্কৃতিক প্রকোষ্ঠ ‘রেণেশাঁ ইয়ূনিবার্সালের মূল উদ্দেশ্য যে সংস্কৃতিক নবজাগরণের মাধ্যমে এক আদর্শ বিশ্বরচনা---তা ব্যাখ্যা করে বোঝান৷
সেমিনারে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ অরুণ কুমার ঘোষ বাংলার জাতিসত্তা ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর বক্তব্য রাখেন৷ মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার, যিনি শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী নামে সমধিক পরিচিত, তাঁর ‘বাংলা ও বাঙালী’ পুস্তকে বাঙালীর জাতিসত্তা ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে যে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন শ্রী ঘোষ তার ভূয়সী প্রশংসা করেন৷
তিনি বলেন, বাঙালীর জাতিসত্তা ৩টি সভ্যতার সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ ও পুষ্ট হয়ে এক মহান সভ্যতার সৃষ্টি করেছে৷ বাংলার এই উন্নত সভ্যতা সমগ্র বিশ্বকে পথ দেখাবে৷ তিনি আরও বলেন, আজ বিশ্বজুড়ে যে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শই এই অবক্ষয় রোধ রোধ করতে পারে৷
প্রথম অধিবেশনে দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন আচার্য সর্র্বত্মানন্দ অবধূত৷ তিনি শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর প্রবর্তিত নোতুন বিষয় ‘যোগ-মনোবিজ্ঞান’’-এর ওপর বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন যে মানুষের শরীর মন যুক্ত অস্তিত্ব এক সুন্দর অথচ জটিল জীববৈজ্ঞানিক ও মানসিক যন্ত্র (Bio-Psychological machine) ৷ তিনি মানুষের মেরুদন্ডের সর্বনিম্ন অংশ থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত স্থিত সাতটি চক্র ও প্রতিটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রন্থি-উপগ্রন্থি ও তা থেকে হরমোন ক্ষরণের ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেন৷ তিনি বাস্তব উদাহরণ সহযোগে দেখিয়ে দেন, চক্র-গ্রন্থি-উপগ্রন্থির হরমোন ক্ষরণের ফলে মানুষের আচরণ স্বভাব(mood) কীভাবে পরিবর্ত্তিত হয়৷Apexced Psychology বা সূচ্যগ্র মন প্রসঙ্গে অলোচনা করতে গিয়ে তিনি উচ্চতর চত্র Pituitary গ্রন্থি বা আজ্ঞাচক্রের সাহায্যে স্ট্রেস বৃত্তি সহ অন্যান্য বৃত্তিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও মানসাধ্যাত্মিক ও আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে কীভাবে যোগমনোবিজ্ঞানের চরম পর্র্যয়ে সমুন্নত সাধক-মন শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মমনে লীন হয়ে যায়---তা ব্যাখ্যা করেন৷
সেমিনারে দ্বিতীয় অধিবেশনে আচার্য রবীশানন্দ অবধূত শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী অর্র্থৎ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রদত্ত প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্ব (প্রাউট)-এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন৷ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে সাধারণ মানুষের স্বার্থে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সামাজিক আর্থিক অঞ্চলগুলিরও আর্থিক স্বয়ংম্ভরতা অর্জন সর্র্বগ্রে প্রয়োজন৷ উদারহরণ স্বরূপ তিনি বলেন যে, শিলিগুড়ি করিডর যদি কোনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে উত্তরবঙ্গসহ সমগ্র উত্তরপূর্র্বঞ্চল শুকিয়ে মরবে৷ সেক্ষেত্রে প্রতিটি ব্লক যদি আর্থিকভাবে স্বয়ংম্ভর থাকে, তাহলে কোন বিপদ হবে না৷ সমগ্র মানবতার আর্থিক মুক্তির এটাই একমাত্র পথ৷ আচার্য রবীশানন্দ অবধূত শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের আদর্শ সমাজগড়ার ছয়টি উপাদানকে প্রাঞ্জলভাবে ব্যাখ্যা করেন৷
সবশেষে ‘রাওয়া’-র পক্ষ থেকে আচার্য রবীশানন্দ অবধূত সেমিনারের মুখ্য বক্তা হিসেবে শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন অধ্যাপক শ্রী অরুণ ঘোষ-এর ‘বাংলা ও বাঙ্গালী ’ সম্পর্কে অমূল্য বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন ও তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন৷ তিনি অসম বিশ্ববিদ্যালয়, শিলচর-এর অধ্যাপক সুমন গুন, অধ্যাপক অর্জুন নারায়ণ সেনশর্র্ম ও অন্যান্যরা অন্যান্য বক্তা ও সমবেত শ্রোতৃমণ্ডলী ও সেমিনারের স্থানীয় সংঘটকদের ধন্যবাদ জানান৷