দিনের পর দিন যদি শিশুর পায়খানা না হয় অথবা তার পায়খানা যদি অস্বাভাবিক শক্ত, শুষ্ক্ ও নিষ্কাশনে কষ্ট হয় তবে বুঝতে হবে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে৷ একেক জনের পায়খানার ধরণ একেক রকম৷ তবে সাধারণভাবে সপ্তাহে তিনবারের কম কষ্টদায়ক পায়খানা হলে সেটাকে কোষ্ঠাকাঠিন্য বলা চলে৷ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ কী? শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ তবে বেশ কিছু বিষয়কে কোষ্ঠাকাঠিন্যের জন্যে দায়ী করা হয়৷
সঠিক কৌশলে না খাওয়া
শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ালে ও তা সঠিক পদ্ধতিতে তৈরী করতে না পারলে শিশুর কোষ্ঠাকাঠিন্য হয়৷ অনেক মা সচেতনতার অভাবের জন্যে শিশুকে খুব পাতলা করে দুধ তৈরী করে খাওয়ান৷ তারা ভাবেন দুধ ঘন হলে বুঝি শিশুর পেটে সমস্যা দেখা দেবে৷ কিন্তু দুধ পাতলা করে তৈরী করলে তাতে পর্যাপ্ত খাদ্যসার থাকে না৷ ফলে শিশুর মল তৈরী হতে পারে না৷ আবার গোরুর দুধে জল না মেশালেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়৷ এছাড়া যেসব শিশু দুধ ছাড়া অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করেছে তাদের খাবারে আঁশের পরিমাণ পর্যাপ্ত না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে৷ শাকসবজি, ফলমূল এসব থেকে সে বঞ্চিত থাকলে কিংবা এসব খাবার না খেলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হবে৷
কম জল পান
শিশুকে কম জল খাওয়ালে সে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগবে৷ অনেক বাবা–মার ধারণা, শিশু বেশী জল খেলে বমি করবে৷ এ ধারণা নিতান্ত ভুল৷ বরং বেশী জল খেলে তার শরীরের কোষে কোষে দেখা দেবে সজীবতা৷ জল কম খেলে শরীর জলশূন্য হয়ে সৃষ্টি করবে কোষ্ঠকাঠিন্যের৷ শিশু যদি শুধু জল খেতে না চায় তাহলে তাকে লেবু সহকারে শরবত বানিয়ে খাওয়াতে হবে নইলে রেহাই পাওয়া যাবে না কোষ্ঠাকাঠিন্যের হাত থেকে৷
মলত্যাগের ভুল কৌশল
শিশুকে সময় মতো প্রতিদিন মলত্যাগের অভ্যাস করানো ভালো৷ নইলে অনিয়মিত মলত্যাগের ফলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে৷ অনেক বাবা–মা শিশুকে পায়খানা করানোর জন্যে জোরাজুরি করেন, পক্ষান্তরে এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্ম দেয়৷
মলত্যাগে ভীতি ঃ একবার কোনো শিশুর কোষ্ঠাকাঠিন্য হলে মলত্যাগের ব্যাপারে তার মনে এক ধরণের ভীতির জন্ম নেয়৷ সে ভাবে মলত্যাগ করতে গেলে বুঝি আবার কষ্ট হবে৷ এটা চিন্তা করে সে মল চেপে রাখার চেষ্টা করে৷ এর ফলে মল আরো শক্ত হয়ে যায়৷ সহজে নিষ্কাশন করতে পারে না৷ আরো বেড়ে যায় কোষ্ঠাকাঠিন্য৷
অসুখ–বিসুখ–কিছু কিছু অসুখ–বিসুখের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটে থাকে৷ এর মধ্যে রয়েছে
* মলদ্বারে ফিশার বা ক্ষত
* মলদ্বারের বা মলনালীর অস্বাভাবিক ঘটন
* অন্ত্রের আবদ্ধতাপ্ত হার্সপ্রাং রোগ
* থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস প্রভৃতি ওষুধপত্র
কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়৷ যেমন এণ্ঢাসিড, এণ্ঢিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, পেটব্যথার ওষুধ, মূত্রবর্ধক ওষুধ প্রভৃতি৷ এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যে শিশুকে বারবার পারগেটিভ জাতীয় ওষুধ দিয়ে পায়খানা করালে শিশু নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷ তখন কোষ্ঠকাঠিন্য লেগেই থাকে৷
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যে শিশুকে ওষুধ না দেওয়াই শ্রেয়৷ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে যা করতে হবে তা হলো
* শিশুর নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে৷
* শিশুকে বেশী করে জল ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে৷
* শিশুকে বেশী ফলমূল ও শাকসব্জি খাওয়াতে হবে৷
* সঠিক প্রণালীতে দুধ তৈরী করে খাওয়াতে হবে৷
* বয়স্ক্ শিশুদের ক্ষেত্রে সামান্য জোলাপ ব্যবহার করা যেতে পারে৷
* শিশুর মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে হবে৷
* শিশু কোনো নির্দিষ্ট অসুখে ভুগলে তার চিকিৎসা করাতে হবে৷
* শিশুকে ইসবগুলের ভুষি ও ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে৷
* শিশুকে বিভিন্ন ধরণের খেলাধূলায় উৎসাহিত করতে হবে৷
* কোষ্ঠকাঠিন্য গুরুতর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে৷
- Log in to post comments