পরম চৈতন্য সত্তা হ’তে বিশ্বসৃষ্টি হয়েছে৷ অর্থাৎ সঞ্চর ধারায় চৈতন্য সত্তাই ধাপে ধাপে চরমস্থূলত্বে পর্যবসিত হয়েছে অর্থাৎ ক্ষিতিতত্ত্বে (Solid facter) পরিণত হয়েছে৷ আবার প্রতিসঞ্চার ধারায় অর্ধবৃত্তাকার পথে ভৌতিক স্তরে এমন এক সূক্ষ্ম সত্তার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যারা ইলেকট্রন, প্রোটন, পজিট্রন প্রভৃতির তুলনায় ছোট৷ আবার মানসিকস্তরে চিত্তানুর (ectoplasm) চেয়েও ছোট, অর্থাৎ অবস্থিতির বিচারে এই সত্তাগুলির অবস্থান হচ্ছে ইলেকট্রন ও চিত্তাণুর মাঝামাঝি স্থানটিতে৷ আসলে এরা চিত্তাণু নয়, আবার বিদ্যুৎনুও (electron) নয়৷ মহাপ্রাজ্ঞ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার মহাশয় এই সূক্ষতম সত্তারই নাম দিয়েছেন--- মাইক্রোবাইটাম (Microvitum)৷
মাইক্রোবাইটাম শব্দটি একবচন মাইক্রোবাইটামের বহুবচন হ’ল --- মাইক্রোবাইটা৷
এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে যা কিছু ইন্দ্রিয় অনুভূতির আওতায় আসে বা যা কিছু প্রত্যক্ষ করি তা হ’ল বস্তু (matter)৷ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যা কিছু অনুভূত হয় বা প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে perception বলে৷ যদি ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিতে না আসে বা আসল না কিন্তু মনের অনুভূতিতে আসে বা মনের পরিভূর মধ্যে অনুভূত হচ্ছে তখন তাকে বলে conception, অর্থাৎ যে সমস্ত সত্তা মনের ধারণায় (conception) মধ্যে আসে, তারা হ’ল বিশুদ্ধ ভাবসত্তা (pure abstract) আর যারা দর্শনক্রিয়া অর্থাৎ জ্ঞানেন্দ্রিয় অথবা কর্মন্দ্রিয়ের অনুভবের মধ্যে আসে তারা হ’ল বিশুদ্ধ জড় (pure matter)৷
এখন, মাইক্রো- বাইটাম এই ভাবসত্তা ও বিশুদ্ধ জড়ের মাঝামাঝি স্থানটিতে অবস্থান করে৷
মাইক্রোবাইটাম তিন প্রকারের হয়৷ যথা ঃ
(১) পজেটিব মাইক্রোবাইটাম (মিত্র মাইক্রোবাইটাম)
(২) নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম (এনিমি মাইক্রোবাইটাম)
(৩) নিরপেক্ষ মাইক্রোবাইটাম৷
পজেটিব মাইক্রোবাইটামের মূল উৎস কোন মানুষ হতে পারে না৷ একমাত্র পরমপুরুষই (সদ্গুরু) একে কোন মহাকাশ হতে উৎসারিত করতে পারেন৷ এই কাজটা কোন মানুষের কর্ম নয়--- সাধারণ মানুষের কর্ম তো নয়ই, কোন অতিমানবের পক্ষেও সম্ভব নয়৷ বিরাট পুরুষ হতে এই তত্ত্ব উৎসারিত হয়ে এসেছে৷
তাই শ্রীপ্রভাত রঞ্জন সরকার বলেছেন--- ‘Microvitam is the mysterious Emanation of Cosmic Factor’’
এখন, এই যে মাইক্রোবাইটাম এদের ঘনত্ব বা সূক্ষ্মত্বের মাত্রা সমান নয়৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ খুব উন্নত মানের অনুবীক্ষণের আওতায় আসে, আবার কেউ কেউ আসে না৷ এদের মধ্যে যারা স্থূলতম তাদের দ্বারাই মহাকাশ হতে জীবপ্রাণ উৎসারিত হয়ে এসেছে ও জড়ের মধ্য এনেছে প্রাণ স্পন্দন৷ তারপর ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে ঘটেছে বহু পরিবর্তন৷ এসেছে ডাইনোসর, এসেছে ঐরাবৎ,---এসেছে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ৷ মাইক্রোবাইটাম একটি সূক্ষ্ম জীব৷ এই মাইক্রোবাইটামেরা এক জ্যোতিষ্ক থেকে অন্য জ্যোতিষ্কে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই অবাধে বিচরণ করতে পারে৷ অন্যান্য প্রাণীন ও ভাবসত্তার মত মাইক্রোবাইটামের কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে৷ যেমন--- অস্তিত্ব রক্ষা, মৃত্যু ও সংখ্যা বৃদ্ধি৷ এই মাইক্রোবাইটাম পঞ্চ তন্মাত্রের মাধ্যমেও স্থানান্তরে ছড়িয়ে পড়ে৷ পজেটিব মাইক্রোবাইটাম বহুবিধ মানব কল্যাণে, দৈহিক ও মানসিক হিতার্থে কাজ করে৷ অপরপক্ষে নেগেটিব মাইক্রোবাইটামেরা দৈহিক অস্বস্তির সৃষ্টি করে, নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে ও মানবমনে নানা অশুভ চিন্তার সৃষ্টির করে৷ মাইক্রোবাইটামের বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে হ’ল---
(১) পজেটিব মাইক্রোবাইটাম মানস ও মানসাধ্যাত্মিক স্তরে (Psychic and psycho-spiritual dimension) ভাল কাজ করে৷ কিন্তু নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম জাগতিক ও ভাল কাজ মানসিক স্তরে (Psychic and psycho-spiritual dimension) ভাল কাজ করে৷
(২) পজেটিব মাইক্রোবাইটা মানুষের বুদ্ধির আর বোধির কিছু অংশকে প্রভাবিত করে৷
(৩) পজেটিব মাইক্রোবাইটা সাত্ত্বিক মনোবৃত্তি তৈরী করে৷ অপরপক্ষে নেগেটিব মাইক্রোবাইটা তামসিক মনোবৃত্তি তৈরী করে৷ তাছাড়া এই নেগেটিব মাইক্রোবাইটামেরা মানুষের ভাবজড়তার বা ডগমা মনোভাব তৈরী করে থাকে৷ এখন মাইক্রোবাইটামের প্রভাব থেকে কেউই মুক্ত হতে পারব না
- Log in to post comments