বক্সার দীনেশ কুমারের কথা মনে পড়ছে? একসময় দেশের হয়ে গ্লাভস হাতে এনেছেন অনেক পদক৷ দেশে-বিদেশে নানা প্রতিযোগিতায় জিতেছেন সতেরটি সোনা, একটি রুপো ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ৷ পদক ছিনিয়ে এনেছেন এশিয়ান গেমসের আসর থেকেও৷ লড়েছেন অলিম্পিকে৷ পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার৷ আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ণ ছিল তাঁর৷ কিন্তু চরম দারিদ্রতার কারণে দীনেশ আজ রাস্তার হকার৷ অলিতে-গলিতে ঠেলা গাড়ী নিয়ে কুলফি মালাই বেচে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে অর্জুন পুরস্কার জয়ী দেশের সম্পদ দীনেশ কুমাবকে৷
প্রচুর ধার দেনা করে খেলার খরচ যোগার করতে হয়েছিল দীনেশের পরিরবারকে৷ পরিবারের সকলেই একান্তভাবে চেয়েছিলেন দীনেশ ভাল বক্সার হোক৷ দীনেশের দাদা জানালেন ‘লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণের দায়ে ডুবে রয়েছি আমরা৷ দীনেশের বিদেশ যাওয়া ও তার অন্যান্য খরচের জন্যেই ওই ঋণ৷ এখন সংসারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ বক্সার হিসেবে সরকারের তরফ থেকে ভাল আয়ের ব্যবস্থা দীনেশকে করে দেওয়া হয়নি৷ বাধ্য হয়ে দীনেশ এখন আইসক্রীম-কুলফি বিক্রেতা৷ অন্য কোনও খেলোয়াড় কি এতটা অবহেলার শিকার হয়েছে?’
দীনেশ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘সরকার যে চাকরি দেবে বা আর্থিক সাহায্য করবে, এমন আশা দেখি না একেবারেই৷ ক্ষমতাসীন কোনও রাজনৈতিক দলও আমাকে সাহায্য করার যোগ্য বলে মনে করেননি৷ আমি কিন্তু এখনও ভাল ক্রীড়াবিদ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও পরিবারকে সাহায্য করতে এই রাস্তা বেছে নিয়েছি৷ বক্সার হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্যে আমার পরিবার যে অর্থ ঋণ করেছে তার দায় তো আমাকে নিতে হবে৷ সংসারের টাল-মাটাল অবস্থাকে স্বাভাবিক করারটাই এখন আমার মূল লক্ষ্য৷ সেই লক্ষ্যে সৎ উপায়ে আইসক্রীম বিক্রী করাকে আমি কোনও ছোট কাজ বলে ভাবি না৷ অদূর ভবিষ্যতে সংসারের আর্থিক অবস্থা সুরাহা হলে বক্সিং রিংয়ে ফিরব৷’’
দীনেশের ইচ্ছা আছে হাতে গ্লাভস নিয়ে রিংয়ে ফেরার কিন্তু উপায় নেই৷ এমনি ভাবেই কত ক্রীড়াবিদের স্বপ্ণ চুড়মার হয়ে যায়, কত প্রতিভা হারিয়ে যায়---সে খোঁজ পেলে অজান্তেই চোখের কোন ভিজে যায়---দীনেশকে আমাদের পরিবারেরই একজন মনে হয়, কারণ এমন অনেক দীনেশের প্রতিভার প্রদীপশিখা অকালে নিভে গেছে---যাচ্ছেও৷