যে প্রাণী পাখি নয়

গোয়েন্দা গল্পে পোড়ো বাড়ির অন্ধকার চিলেকোঠায় বাদুড়ের পাখা ঝাপ্ঢানোর ঘটনা যখন আমরা পড়ি তখন অজান্তেই বুকের ভেতরটা ছম ছম করে ওঠে৷ বাদুড়ের মতো একটা নিরীহ প্রাণীকে নিয়ে কেন এই ভয়–তার কোনো যুৎসই উত্তর নেই৷ তবুও আমরা বদ লোকের বাঁকা হাসিকে নাম দিয়েছি বাদুড়ে হাসি৷ এমনকী ‘ব্যাট–ম্যান’ নামক সাড়া জাগানো একটা সিরিয়াল পর্যন্ত হয়ে গেছে টেলিভিশনে৷ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, এই প্রাণীটির গুরুত্ব একেবারেই ফেলনা নয়৷

বাদুড় হ’ল একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী–যে উড়তে পারে ওড়াউড়ি করলেও তার ডানা কিন্তু অন্য পাখিদের মত নয়৷ এক ধরণের স্বচ্ছ চামড়ার পর্দা দিয়ে তৈরী ডানার সঙ্গে ছাতার শিকের কায়দায় জুড়েছে কয়েকটা সূক্ষ্ম হাড়৷ হাত আর পায়ের পুরোটা এই স্বচ্ছ পর্দার সঙ্গে জুড়ে থাকায় আলাদা শক্তি ফিরে আসে ডানায়৷ যার ফলে ওড়ার গতিতে একটা ছন্দময় তাল সে আনতে পারে যা অন্য পাখিদের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়৷

বাদুর ঘুমোতে যাবার সময তার ছাতার মত ডানাটা বন্ধ করে দেয়৷ কখনও কখনও মুখটাও ঢেকে নেয় ডানার ভেতর৷ সাধারণত গুহা কিংবা গাছের ডালে বাদুর দল বেঁধে বাস করে৷ বেশীরভাগ সময় তারা পায়ের নখ দিয়ে ডাল আঁকড়ে মাথা নিচে দিয়ে ঝুলে থাকে মোচার মত৷

প্রায় সারাদিনই কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমে ডুবে থেকে রাতে বের হয় বাদুরের দল৷ ঘুটঘুট্টি অন্ধকারের ভেতরও সে ঠিক মতো পথ চলতে পারে৷ এ সময় কোনো বাধা সামনে এলে এক ধরনের প্রতিধ্বনির সাহায্যে তা সহজে পৌঁছে যায় তার কানে৷ বাদুড়ের বড় কানের রহস্য এবার সহজে বুঝে নেওয়া যায়৷ 

ছোট পোকামাকড় ধরার জন্যে বাদুড় অনেক সময় এই ধ্বনির সাহায্য নেয়৷ বিভিন্ন রকম পতঙ্গ তাদের প্রিয় খাদ্য৷ গাছের ফল ফলাদি চুরি করে খেতে তাদের জুড়ি নেই৷ আফ্রিকার বিখ্যাত ভ্যাম্পায়ার বাদুড় জীবজন্তুর রক্ত চুষে খেতে পছন্দ করে৷ এরা ঘুমন্ত জন্তুর গায়ে কামড় বসিয়ে এমন দ্রুততার সঙ্গে রক্ত চুষে নেয় যা সহজে টের পাওয়া যায় না৷