ভাষা-সংসৃকতি একটি জনগোষ্ঠীর প্রাণ ভোমরা৷ একে অবহেলা করা, অবজ্ঞা করা, গুরুত্বহীন করা বা মর্র্যদা না দেওয়া নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারা ৷ সর্র্বেপরি মাতৃভাষাকে সরকারী বেসরকারী সব ধরণের কাজে ও শিক্ষায় আবশ্যিক না করা আত্মহননের সামিল৷ পশ্চিমবঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষায় বাংলা আবশ্যিক না হওয়াতেই যত বিপত্তি৷ ভাষা তো সংসৃকতিরই ধারক ও বাহক৷ বাংলা ভাষাকে স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকেই অবশ্যিক বাধ্যতামূলক করা হলে ঘিসিং-বিমল গুরুংদের জন্ম হোত না৷
ভাষা-সংসৃকতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সুরক্ষা- কবচ৷ নেপালীরা রুজি রোজগারের ধান্দায় দলে দলে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করেছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে নিজের দেশ ভাবেনি৷ পশ্চিমবঙ্গ তাদের কাছে নেহাতই একটা ধান্দার জায়গা মোত্র৷ শুরু থেকেই ভাষা-সংসৃকতির সঙ্গে একাত্ম হতে বাধ্য করা হলে , এ রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে ওদের স্বার্থের সমাহার হলে গোর্র্খল্যান্ড দাবী ওঠার জায়গা থাকতো না ৷ নেপালীরা তো বিদেশী অনুপ্রবেশকারী৷ বিদেশীদের জন্যে বাঙলার বুকে স্বতন্ত্র বাসভূমি হাস্যকর ব্যাপার৷ ১৯৫০ সালে নেপাল-ভারত, শান্তি-মৈত্রী চুক্তি অনুযায়ী নেপালীরা ভারতে আসতে পারে, থাকতে পারে, রোজগার করতে পারে, কিন্তু নাগরিক হতে পারে না৷ এ নিয়ম তো সারা পৃথিবীতেই আছে৷ ভারত থেকে বহু মানুষ পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা , অষ্ট্রেলিয়া , ইয়ুরোপের বিভিন্ন দেশে কায়িক বৌদ্ধিক শ্রমভিত্তিক কাজ ও পড়াশোনার জন্য যায়-আসে৷ তারা কি সেখানে ভারতীয়দের জন্যে ভারতভূমি দাবী করছে? ইংরেজী আর্ন্তজাতিক ভাষা৷ ইংরাজী শিখে যায়৷ যেখানে যায় সেখানে সেখানকার স্থানীয়ভাষা শিখে নেয়৷ কেননা চলাচল কাজকর্ম স্থানীয় ভাষাতেই করতে হয়৷ তাই নেপালীদেরও বাংলা শিখতে হবে, কাজে কর্মে বাংলা ব্যবহার করতে হবে৷ বাংলার অর্থনৈতিক- সাংসৃকতিক স্বার্থের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে৷ নতুবা যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ফিরে যেতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প হতে পারে না৷
বাংলা ভাষার ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাসহ সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক না হওয়ায় কি কেবল দার্জিলিংয়ে বিছিন্নতাবাদের জন্ম দিয়েছে ? না৷ গোটা পশ্চিমবঙ্গই বারুদের স্তুপ হয়ে উঠেছে৷ খোদ কলকাতার অবস্থা কী? এ রাজ্যের শিল্পাঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী? ওই সব অঞ্চলে গেলে বাঙলায় দাঁড়িয়ে আছি বলে মনে হয় না৷ এ প্রসঙ্গে আনন্দ বাজার পত্রিকার ১৫ই এপ্রিলের সংখ্যার ‘ভাষা হারা বাঙালী’ শীর্ষক বিশেষ নিবন্ধে দৃষ্টি দেয়া যাক---......
‘‘বাংলায় লেখা, বাংলায় পড়া, বাংলায় শোনা--- এই লক্ষ্য পূরণের ত্বরিত পথ প্রণয়ন না করিলে ভারতীয় বাঙালীর যবনিকাপাত কেবল সময়ের অপেক্ষা’’৷ এরপরেও বলার জন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকে কি?
- Log in to post comments