চেতনার পরশমণি

লেখক
জিজ্ঞাসু

চাই চেতনার পরশমণি --- যার ছোঁয়াতে মানুষটি ভেতরে বাইরে বোধের আলোকে আলোকিত  হবেন৷ আজ আমাদের তেমন মানুষ  চাই৷ সে আলো কীভাবে  পাবো? সেবার মাধ্যমে৷ কাকে বলব সেবা? অন্যের  অসহায়  অবস্থায়  স্বেচ্ছায় এগিয়ে (বিনাশর্তে, বিনা লেন দেন) তার উপকার করা, সাহায্য দানের  অপর নাম সেবা৷  যতক্ষণ মনে ভয় আছে, সেই ভয়ের  মানসিকতায় সেবার ইচ্ছাও হবে না, এষণাও থাকবে না৷ কৃতজ্ঞতাবোধ, নান্দনিক রসজ্ঞান, দেহমানসিক শুচিতা এসবে নিরন্তর সঞ্জীবিত না হলে সেবা হবে ভণ্ডামির নামান্তর মাত্র৷ আজ শুধুআবার কৃতজ্ঞতা শব্দের ভাবটি অনুভবের  চেষ্টা করব৷ এটি এক অমূল্য মানবিক গুণ  যার অভাবের  কারণে  মানুষ অমানুষ অমানবিক হয়ে যায়৷ পৃথিবী  খাদ্য-খাদক বা শোষক-শোষিতের রণক্ষেত্র হয়ে থাকে মানবিক  পৃথিবী হয়ে উঠতে  পারে না৷ ৷ মানুষের  সমাজ গড়ে উঠতে পারে না৷ তো  কাকে  বলব কৃতজ্ঞতা বোধ? অন্যের  দ্বারা উপকৃত হয়ে, অন্তর  থেকে তুমি  যখন  সেই উপকার  ও উপকারীকে  মান্যতা দিলে , বিনম্র হলে, সম্মান  জানালে সেই অবস্থায় তোমার দেহমন সত্য, সরলতা, পবিত্রতা, শুচিতা, উদারতায় ভরে উঠবে এই হল কৃতজ্ঞতা- বোধ৷ এ এক নবজাগরিত  মানুষের  মধ্যে আবিষৃকত  চেতনার  পরশমণি৷ যে মুহূর্তে তুমি  কৃতজ্ঞ থাকলে যখন তুমি অখন্ড অদ্বৈতভাবে বিস্তারের অবস্থায় থাকলে তখন তুমি অন্তর থেকে মানবিক হলে৷ উল্টোপথে কৃতজ্ঞতার অভাবে মন তোমার দানবিক হতে বাধ্য৷ এবার বলি প্রতি দিন, প্রতি রাত, জীবনের প্রতিক্ষণ, প্রতি কর্ম , প্রতি চিন্তা, প্রতি স্থান কাল পাত্র, বস্তু বা শক্তিকে কৃতজ্ঞতার  পরশমণি দিয়ে কীভাবে রাঙিয়ে  নেওয়া যায় কীভাবে একটা তুচ্ছ বস্তু বা কর্ম থেকে ও সদর্থক স্বাস্থ্য, শান্তি, সামর্থ্য তৈরী করে নেওয়া যায়৷ এটা একটা Moment to moment journey নীচের লেখা প্রতি জন থেকে উপকার পেয়ে তুমি কি কৃতজ্ঞ থাকো? নাকি যন্ত্রবৎ আচরণ কর৷ এই ট্রেনিং চলুক৷ ভুল হতেই  পারে সংশোধন করে নিলেই  হবে৷  বাজারের চাষী মেয়ে যে তোমার প্রয়োজনের বকফুল  এনে দিল, যে ঝাড়ুদার তোমার  বাড়ির  সামনেটা সাফ করে গেল, যে বাস বা মেট্রো তোমাকে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিল, অসহনীয়  ব্যথার  ওষুধ যার মাধ্যমে পাওয়া গেল, ক্ষিদের সময় খাবার যিনি বানিয়ে  দিলেন, তোমার  বাগানের গাছে  ফুল ফোটানোর  পশ্চাতে মাটি  জল বাতাস, সূর্র্যলোক থেকে সার বীজের  দোকানদার---সবাই আছে৷

যে বিছানায় বিশ্রাম নাও যে ফ্যান  বা এসি ব্যবহার কর, যে মোবাইলে  লিখছ৷ যে কাজের  মেয়ে তোমার ঘর মুছে গেল ইত্যাদি  থেকে তোমার ছাতা , চশমা, পেন ব্যাগ  সবার কাছে ব্যষ্টিগতভাবে তুমি ঋণী৷ অতি সহজে যে চপ্পল পায়ে  গলালে সেটা করার পূর্বে ওই চপ্পলকে, সেটার প্রস্তুত কারকের  কাছে  মানসিকভাবে কৃতজ্ঞ থাকো ধন্যবাদ দাও,  প্রণাম  কর৷

এতো গেল গেল কৃতজ্ঞতা রূপ নব জাগরণের বাহির পর্ব৷ এর একটা অন্তঃপর্বও আছে৷ তাকেও মান্যতা দিতে হবে৷ তোমার শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া, এগারো ইন্দ্রিয় তাদের  কাজ, তোমার খাদ্য গ্রহণের  কাজ, কথা বলা বা চিন্তা করার সামর্থ্য, এসব যাঁর কাছ থেকে পেয়েছ, তাঁর  প্রতিও কৃতজ্ঞ হও৷ তোমার চতুপার্শের  সমস্ত প্রাণীন অপ্রাণীণ সত্তা--- সবার কাছেই  তুমি ঋণী৷ সবাই তোমার আপন৷ সবাইকে নিয়ে এই বিশ্বপরিবার৷ এই বিশ্বপরিবার, এই বিশ্বপবিবারেরর নিয়ন্তা, সবার কাছে তুমি প্রণত হও৷