গোর্খাদের আন্দোলন দেশদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন৷ ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দার্জিলিং৷ আর গোর্খারা বিদেশী--- নেপালের লোক৷ রুজি রোজগারের ধান্দায় দার্জিলিং এসেছে৷ এতো বিদেশীদের আগ্রাসী আন্দোলন যা কোন মতেই সহ্য করা যায় না ৷ ওরা নেপালের লোক৷ নেপালে গিয়ে গোর্খাল্যান্ড করুক৷
গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার পক্ষে হুমকি স্বরূপ৷ প্রবাদ বলে--- ‘খাল কেটে কুমীর আনা’৷ মিরজাফরেরা বণিক ইংরেজকে ডেকে এনেছিল৷ ধূর্ত ‘‘বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদন্ড রূপে’’৷ পশ্চিমবঙ্গের নয়া মিরজাফর কমিউনিষ্ট কংগ্রেস, বিজেপি এঁরা বিদেশী নেপালী যারা কাজের খোঁজে ভারতে আসে স্থানীয়দের তাড়িয়ে তাদের দার্জিলিং এর শাসক বানাতে চায়, ভারতের অংশ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চায়৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ভারতের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক৷ এ আন্দোলন ভারতের সংবিধান বিরোধী৷
নেপালীদের একটা গোপন অভিসন্ধি আছে৷ তারা নেপাল, ভূটান,সিকিম, দার্জিলিং , ডুয়ার্স, তরাই নিয়ে বৃহত্তর নেপাল গঠন করতে চায়৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সেই ষড়যন্ত্রের অংশমাত্র৷ পিছনে উত্তরপূর্র্বঞ্চলের জঙ্গীগোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদী চীনের মদত৷
নেপালী বলতে কোনও একটা জাতি নয় ৷ গোর্খা, নেওয়ারী , শেরপা, কিরাত, লিমপো, থারু ইত্যাদি প্রায় এক ডজনের ওপর জনজাতি নিয়ে নেপালী জনগোষ্ঠী৷ গোর্খারা তার একটা ক্ষুদ্র ভগ্ণাংশমাত্র৷ দার্জিলিং- -য়ে সব জাতেরই নেপালীরা এসেছে৷ গোর্খারা তার মাত্র ১২ শতাংশ মাত্র৷ এছাড়া আছে স্থানীয় বাঙালী জনজাতি লেপচা-ভুটিয়ারা ও অন্যান্য বাঙালীরা৷ এখানে চলছে বৃহদংশের ওপর ক্ষুদ্রাংশের আগ্রাসন, ক্ষুদ্রাংশের আধিপত্য৷ এখানে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ওঠে কী করে? বাঙালী বিদ্বেষী, দেশী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালাল রাজনৈতিক দলগুলোর বাঙলা ভাগের এ এক জঘন্য চক্রান্ত৷
q স্বাধীন সার্বভৌম নেপাল ভারতের প্রতিবেশী মিত্র রাষ্ট্র৷ ১৯৫০ সালে নেপালের সঙ্গে ভারতের শান্তি-মৈত্রী চুক্তি হয়৷ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নেপালীরা ভারতে অবাধে আসতে পারবে রুজি-রোজগার করতে পারবে, বসবাস করতে পারবে কিন্তু নাগরিকত্ব পাবে না৷ তাহলে যাদের নাগরিকত্বই নেই তাদের জন্য গোর্খাল্যান্ড, টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন হয় কীভাবে? ভোটাধিকারই বা হয় কি করে? নেপালীরা ভারতের নাগরিকই নয়৷ তাদের নিয়ে নির্র্বচন, এমপি এম এল এ,একেমন হাঁসজারু? এখনইগোর্খা মোর্র্চকে নিষিদ্ধ করা দরকার৷ রেশনকার্ড ,ভোটার কার্ড,প্যান কার্ড, আধার কার্ড টি, বা যে সমস্ত নাগরিকত্ব বিষয়ক নথিপত্র,প্রমাণপত্র দেয়া হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করা দরকার৷ গোর্খাল্যান্ড তো দূরের কথা৷
দার্জিলিংয়ে নেপালীদের ভূমিকাটা কেমন?--- না,যার খাবে পরবে- তারই বুকের ওপর বসে দাড়ি উপড়ারে! নির্লজ্জ বেইমানী৷ বাঙালীর আতিথেয়তা,উদারতার সুযোগ নিয়ে বাঙলাকেই টুকরো করতে তৎপর৷
গোর্খাদের জাতিসত্তার আবেগ একটা বিরাট ধাপ্পা৷ দার্জিলিং পাহাড়ের আন্দোলন মানুষকে ধাপ্পা দেওয়ার আন্দোলন৷ মুষ্টিমেয় কিছু গোর্খার আখের গোছাবার আন্দোলন৷ ঘিসিং-গুরুংদের রাজকীয় চাল চলন, আর্থিক অবস্থার পরিবর্ত্তন,পার্বত্য উন্নয়নের অর্থের পুকুরচুরি--- সেটাই প্রমাণ করে৷ সবচেয়ে বড় কথা হল পাহাড়ের আন্দোলনের ে পছনে কোনও বৃহৎ আদর্শ নেই৷ পাহাড়বাসীদের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য বহু শতকোটি টাকা সুভাষ ঘিসিং-বিমলগুরুংদের দিয়েছে৷ সাধারণ পাহাড়বাসীদের কাছে তার ছিটে ফোঁটাও পৌঁছায়নি৷ আবার এই বঞ্চনাকে মূলধন করেই স্বতন্ত্র রাজ্য--- গোর্খাল্যান্ডের দাবীতে আন্দোলন করেছে৷
q অনুপ্রবেশ লাগাম ছাড়া৷তাই দার্জিলিং পাহাড় অঞ্চল এ নেপালীরা সংখ্যাধিক্য৷ কিন্তু অঞ্চলটির আয়তন একটা রাজ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়৷ স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ছাড়া কেউই টিকে থাকতে পারে না৷ পাহাড়ের অর্থনীতি খুবই দুর্বল তাছাড়া সমতলের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল৷ পাহাড়ের অর্থনীতির মূল উৎস পর্যটন শিল্প৷ কেন্দ্র রাজ্য যদি বাঙালীর জাতি সত্তার অধিকারকে অস্বীকার করে, বাঙলা ভাগ করে গোর্খাল্যান্ড বানায়,তাহলে একদিন না একদিন বাঙালী জাগবেই৷ ভয়ঙ্কর অবরোধ হবেই হবে৷ বিদেশী নেপালীদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে৷ হাজার বছরের ৩৫ কোটি ঐতিহ্যমন্ডিত জনগোষ্ঠী বাঙালীর চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের ইতিহাস যদি কেন্দ্র বা বাংলার বাঙালীঘাতী রাজনৈতিক দলগুলো ভুলে যায় তবে তার চরমমূল্য দিতেই হবে৷
বিমল গুরুংরা আগুন নিয়ে খেলছে ৷ ভাবছে ওদের গোর্খা রেজিমেন্ট আছে৷ অবসর প্রাপ্ত হাজার হাজার গোর্খা সেনা রয়েছে৷ নিরীহ শান্তিপ্রিয় বাঙালীরা ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্র্দর৷ ভয় দেখিয়ে বাজীমাত করবে৷ তাই জঙ্গী আন্দোলন শুরু করেছে৷ খবরে প্রকাশ বহুদিন ধরে তারা সম্মুখ সমরেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ জি এল পি গঠন তার প্রত্যক্ষ প্রাথমিক প্রমাণ৷ বিমল গুরুংরা যা শুরু করেছে ---তাতে বাঙালী-নেপালী জাতি দাঙ্গার ক্ষেত্র রচনা করছে৷ বাঙলীরা বাংলায় বসবাসকারী সকলকেই বাংলার সম্পদ ভাবে৷ দার্জিলিং পাহাড়ে নেপালীরা দীর্ঘদিন ধরে এত গুন্ডামী করেছে বাঙালীরা জনগোষ্ঠীগত ভাবে কিছু করেনি৷ এখনও বিস্ময়কর ভাবে নীরব৷ গোর্খারা যেন এটাকে বাঙালীর দুর্বলতা না ভাবে৷ কাজেই গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা উচিত৷
বর্তমান বিশ্বে বহিরাগতদের আধ্যিপত্যবাদ একটা গুরুতর সমস্যা৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলি অধিকার করা৷ স্থানীয় ভাষা সংসৃকতি অবদমন করা৷ শোষণ যন্ত্রের যাতা ফলে স্থানীয় মানুষকে পিষে ফেলা একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দেশী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীরা ছলে-বলে-কৌশলে বহুরূপী রূপ ধারণ ধরে শোষণরাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই উদ্দেশ্য পূরণে ওদের প্রথম কাজ স্থানীয় ভাষা-সংসৃকতিকে আক্রমণ করা----ধবংস করা৷ তার ফলে বিনা বাধায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ও বাজার হাতের মুঠোয় চলে আসে৷ কেননা ভাষা সংসৃকতি হীন ব্যষ্টি বা গোষ্ঠী বা জাতি প্রাণহীন দেহের মতো৷ প্রতিবাদ প্রতিরোধ আত্মমর্র্যদা কিছুই অবশিষ্ট থাকে না৷ দেখুন গোর্খা নেপালীরা এই কাজটা প্রথমেই করেছে৷ দার্জিলিং পাহাড় অঞ্চলে নেপালী ভাষাকে সরকারী ভাষার স্বীকৃতি আদায় করে সর্বস্তরে চালু করেছে৷ বাংলা ভাষা সংসৃকতিকে পাহাড় থেকেবিদায় করে দিয়েছে৷ রাজ্য সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাংলা ভাষা আবশ্যিক করা হবে বলতে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠল ৷ আসলে শতধিক বৎসর ধরে নেপালীরা বাঙলায় বসবাস করলেও নেপালীরা বাংলা ভাষা সংসৃকতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেনি৷ কর্মক্ষেত্রগুলো অধিকার করেছে ৷ এতো সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক মানসিকতা৷ দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল নেপালীদের উপনিবেশ হয়ে উঠেছে৷ যা বাঙলা বাঙালীর স্বার্থ ও জাতিসত্তার আবেগ ও সুরক্ষার পক্ষে হানিকর৷ মনে রাখা দরকার নেপালীদের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে৷ এটা পাকা মাথার কাজ৷ বাঙলার মীরজাফরী রাজনৈতিক দলগুলো নেপালীদের তোল্লা দিয়ে, জাতিসত্তার সুরসুড়ি দিয়ে, মদত দিয়ে, নেপালীদের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে তাতিয়ে দিয়েছে৷ এটা একশত শতাংশ সত্য, তথাপি এটা একমাত্র কারণ নয়--- এর পিছনে দীর্ঘ-অতিদীর্ঘ হাত রয়েছে৷ বাঙলায় যদি নেপালীদের থাকতে হয় তবে বাঙলা অবশ্যই শিখতে হবে, প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার করতে হবে৷ বাঙলার সামাজিক ঐতিহ্য ও সংসৃকতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷ বাঙালীর সামাজিক অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে৷ যে অনুন্নয়ন বঞ্চনার জিগির তুলে পাহাড়- সমতল, বাঙালী-নেপালী বিভেদ-দ্বন্দ্ব বাধানো হ’ল, তার সমাধান গোর্খাল্যান্ড নয়৷ দার্শনিক-শ্রেষ্ঠ শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার প্রণীত প্রাউট দর্শন নির্দেশিত বিকেন্দ্রিত অর্থনীতি, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা আঞ্চলিকতার পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের আদর্শই একমাত্র পথ৷
- Log in to post comments