কেন্দ্রে ও রাজ্যে শাসক দলগুলির ধনীদের তোষণ ও উন্নয়নে  অদক্ষতাই  ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে  ফারাক বাড়াচ্ছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতে সম্পদ-এর বন্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে৷ মুষ্টিমেয় কয়েকজন কোটিপতি দেশের ১৫ শতাংশ জিডিপি দখল করে রেখেছে৷ দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছে৷ সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলি  বিত্তবানদের তোষণের নীতি গ্রহণ করার জন্য  এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷  বিত্তবানরা উত্তরাধিকার ও তাদের স্বীয়স্বার্থে ইচ্ছেমত সম্পদের  বিনিয়োগের ফলেই ক্রমশ বিত্তশালী হয়ে উঠেছে৷ ১৯৯১ সালে উদারীকরণ নীতি ও অন্যান্য আর্থিক সংস্কারের ফলে বিত্তবানরা  এই সুবিধাগুলি বেশী করে ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে৷

পাঁচবছর আগে জিডিপি-র ১০ শতাংশ তারা ভোগ করত৷  বর্তমানে তারা ১৫ শতাংশ ভোগ করছে৷  পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৭ সালে ভারতে ১০১ জন শতকোটিপতি৷  এই বৈষম্যের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির  দেশ গঠনের ক্ষেত্রে উদাসীনতা, অনভিজ্ঞতা, সদিচ্ছার অভাব ও দেশের উন্নয়নের প্রকৃত  নীতি নির্র্ধরণে অদক্ষতা৷  সমীক্ষায় বলা হচ্ছে  কায়িক ও অন্যান্য শ্রমের প্রতি অবহেলা করা হয়েছে ও আর্থিক মূলধনের কদরটাই বেশী৷ অর্থাৎ ধনীদের  তোষণটাই  হলো  শাসকদলের  লক্ষ্য৷

মনে  রাখতে হবে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে দক্ষ অদক্ষ কর্মীদের স্বার্থের প্রতি  সরকারের নীতির সহানুভূতি  প্রদর্শন করাটা দরকার৷

সমীক্ষার রিপোর্টে ধর্মমত, জাতপাত, অঞ্চল, এমনকি  লিঙ্গভেদে বৈষম্য যে কত রকম  আকার নিতে পারে  তার উল্লেখ  আছে৷

যে সংস্থা  সমীক্ষা করেছে  তার নাম  অক্সফ্যাম ইণ্ডিয়া৷ অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলতে হয় যে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অধীনস্থ  সরকারী কর্মচারীদের বেতনের হার বৃদ্ধি করেই চলেছেন  আর ডি.এ বাড়ানো হচ্ছে, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির  অনুপাতে৷  কিন্তু  রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের  সেই অনুপাতে  বেতন দিতে  পারছে না৷ ফলে  বৈষম্য যেমন  সৃষ্টি হচ্ছে, তার সঙ্গে অসন্তোষ  বাড়ছে৷

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণের  দিকে নজর না থাকায়  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরও কোনও সীমা-পরিসীমা নেই৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিল ও বর্তমানে তাঁরা যেভাবে জি.এস.টি. বাড়িয়ে কর আদায়  করছে তার কোন সঠিক  হিসাব জনগণের অজানা৷  খাদ্যদ্রব্য ও জীবনদায়ী ঔষধপত্র ও পোশাক পরিচ্ছদের দাম আকাশ ছোঁয়া৷

গত কয়েক দশকে  কলকারখানা বৃদ্ধি না হয়ে নানাকারণে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে৷ জনবহুল  পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়৷ কেন্দ্রে বিজেপি শাসনে  আসার পর দেশের  আর্থিক অবস্থা শোচনীয়  হয়ে পড়েছে৷  ছোট ছোট বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে  গেছে৷  মানুষের নৈতিক মানও নানা কারণে ধবংস প্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷  বাঁচার প্রয়াসে  অনেকেই  বিপথগামী হয়ে পড়ছে৷

দলছুট রাজনৈতিক দলগুলি দেশেরসেবার  পরিবর্ত্তে নোংরা  দল ভাঙ্গাভাঙ্গির কাজে  লিপ্ত হয়ে  এক ভয়ংকর রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি করেছে নিছক  গদীর স্বার্থে৷ ফলে  গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস উঠছে৷ আজকের নির্বাচন  পরিণত হয়েছে ধনীর টাকার খেলায় ৷ রাজনীতিতে হর্সট্রেডিং হচ্ছে৷ রাজনৈতিক নেতাদের  অনেকেই  আদর্শ ও নৈতিকতা ভুলে দল ভাঙ্গাভাঙ্গি করছে৷ ফলে  নির্র্বচনের  প্রতি মানুষের  বিশ্বাস হারিয়ে  যাচ্ছে৷ অন্য দিকে  শিক্ষিত নীতিবাদীরা রাজনীতি  থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷ ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বর্ত্তমানে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে৷ তাই নির্র্বচনে ‘‘নোটা বোটের’’ সংখ্যা বাড়ছে৷

অন্যদিকে  রাজনীতিতে দুর্বৃত্তদের প্রাদুর্ভাব ঘটছে উত্তরোত্তর৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরমভাবে  অসামাজিক  ব্যষ্টিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

সম্প্রতি  উত্তর পূর্ব ভারতে প্রচুর  টাকা  ছড়িয়ে  ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যাণ্ডকে  বিজেপি কবজা করেছে৷ অত্যন্ত লজ্জার  কথা নির্র্বচনে  দেশকে টুকরো টুকরো করার ইঙ্গিতও নাকি দেওয়া হচ্ছে৷ এটা তো সেই বিদেশী ব্রিটিশ সরকারের মতই বিচ্ছন্নতাবাদী নীতি৷

গণতন্ত্রে বিরোধী দলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ কিন্তু বর্তমানে কি কেন্দ্র কি রাজ্য সরকার দেশকে বিরোধীহীন করার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে৷ এটা গণতন্ত্রের পক্ষে