মানুষের জীবনে  ও আদর্শ সমাজ নির্মানে  যোগের  ভূমিকা

লেখক
মোহন সরকার

২১শে জুন আন্তর্জাতিক  যোগ দিবস৷ এই দিন বিভিন্ন  স্থানে  ঘটা করে  শত শত মানুষ  যোগব্যায়াম  প্রদর্শন  করে৷ মানুষ আজ যোগকে নিয়েছে  শরীরকে সুস্থ রাখার  জন্যে,  কিছু ‘সেলিব্রিটি’ শরীরের মেদ কমানোর  জন্যে  কিছু কিছু যোগব্যয়ামের  চর্চা করছেন৷ দূরদর্শনে বা পত্রপত্রিকায় দেখা যায়  বিভিন্ন সিনেমা বা দূরদর্শনের শিল্পীদের  শরীর ঠিক রাখার জন্যে যোগব্যায়াম  করার নিদান৷ প্রাণায়ামের  নামে  কিছু ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ করে সাময়িকভাবে  দৈহিক  সুস্থতা আনয়নের  জন্যে খুব প্রচার  করা হয়৷  কিন্তু  প্রকৃতপক্ষে প্রাণায়াম অনেক সূক্ষ্ম জিনিস৷ ধূলা-ধোঁয়াতে প্রাণায়াম করা ক্ষতিকর৷  ধুমপানও চলছে, আর  প্রাণায়ামও চলছে এটা খুবই ক্ষতিকর৷ তাছাড়া, প্রাণায়ামের  সঙ্গে  আধ্যাত্মিক ভাবগ্রহণের  ব্যাপার আছে--- না হলে  এই প্রাণায়াম মনের অধোগতির কারণ হবে৷

কিন্তু  এ সব কিছু  নিয়ম-নীতিকে উপেক্ষা করে  সস্তা পাবলিশিটির জন্যে একসঙ্গে  বহু মানুষকে  গড়পড়তায় প্রাণায়াম  শেখানো বা দূরদর্শনে প্রাণায়াম  শেখানোর  ফল কিন্তু ভয়াবহ৷

তাছাড়া, একথা ভুললে চলবে না,  যে যোগের কথা বলা হচ্ছে, তা--- কার সঙ্গে  কার যোগ---এটা  তো বলা হচ্ছে না! ‘যোগ কথাটির তাৎপর্য কী?  এটাই  না বুঝে  যোগচর্চা মানুষকে  বিপথে  পরিচালিত করছে৷ এতে সাময়িক কিছু হিত হলেও আসলে  লাভের  লাভ কিছুই নেই৷  তাই দেখা যাচ্ছে, যোগের নাম  করে আসলে  বিশাল  ব্যবসা ফাঁদা হচ্ছে৷

প্রকৃত পক্ষে যোগ বলতে এর আটটি অঙ্গ--- যম নিয়ম আসন প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি৷ যোগ দেহ-মন ও আত্মার সমান্তরালতা  বিধানের পথ৷ যোগের  প্রকৃত ব্যাখ্যা ‘সংযোগে যোগ ইত্যক্ত জীবাত্মা-পরমাত্মানঃ’৷

অর্র্থৎ  জীবাত্মার সঙ্গে  পরমাত্মার সংযোগ৷ যোগ হল তাই মানুষের পূর্ণ বিকাশের পথ৷ আর যেহেতু পরমাত্মাার সঙ্গে প্রতিটি জীবের যোগ  রয়েছে, তাই যোগ অন্য  অর্থে সমস্ত  মানুষের  সঙ্গে --- শুধু মানুষ কেন  পশুপক্ষী তরুলতা--- সবার সঙ্গে  আন্তরিক যোগের মাধ্যম৷  এক কথায়  যোগের  মাধ্যমে মানুষ নব্যমানবতায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে৷

একথা একেবারেই  ভুললে চলবে না যে, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে  যোগসাধনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ আধ্যাত্মিকতা থেকে যোগকে  আদৌ পৃথক  করা যায় না৷ কিন্তু আশ্চর্যের  বিষয় বর্তমানে তারই চেষ্টা চলছে৷ আধুনিকতার ধবজাধারী বা বিজ্ঞানমনস্ক বহু মানুষ আধ্যাত্মিকতাকে এড়িয়ে  চলতে চান৷ তাঁদের ধারণা আধ্যাত্মিকতাটা সেকেলে  ভাবনা৷

তাদের মনে রাখা উচিত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ  বৈজ্ঞানিক  তথা দার্শনিক আইনষ্টাইন  যথার্থই  বলেছেন,Science without Religion is blind And Religion with out  Science is lame. এখানে বিশেষভাবে  উল্লেখ্য বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন  বিজ্ঞানের  সঙ্গে  সামঞ্জস্যপূর্ণ যে রিলিজনের কথা বলেছেন তা তথাকথিত সাম্প্রদায়িক ধর্মমত নয়, তা সর্বজনীন আধ্যাত্মিকতা৷ তিনি  বলেছেন  বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা দুটোকে সঙ্গে নিয়ে চললেই  মানুষের  জীবনের তথা সমাজজীবনের যথার্থ প্রগতি৷ এর কোনো একটিকে বাদ দিলে  তা হবে অধোগতি তথা ধবংসের  কারণ৷ বিজ্ঞান মানুষকে  গতি দেবে৷ কিন্তু কোনদিকে  এগুবে মানুষ৷ বিজ্ঞানের  সহায়তায়  বিচিত্র ভোগোপকরণ তৈরী  করে  মানুষ কি এই ভোগবাদে উন্মত্ত হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য  হয়ে ছুটে  চলবে,যেমন  বর্তমানে  চলেছে৷ এতেই  কি সমাজের  অগ্রগতি? না, মোটেই  নয়৷ এতে তো মানুষ হারিয়ে  ফেলছে মূল্যবোধ, হারিয়ে  ফেলছে মানবিক গুণগুলো৷ মানুষের মধ্যে  শুধু চলছে  জাগতিক  সম্পদ, পদ, মান-যশের  কাড়াকাড়ি, হিংসা, খুনোখুনি৷  দুর্নীতিতে সমাজ  ছেয়ে গেছে৷  পরস্পরকে শোষণ করার আদিম মনোবৃত্তি আজ  সমাজের  সমস্ত সুষমাকে ধবংস করে দিচ্ছে৷