যে প্রক্রিয়ায় কর্ণাটকে বিজেপিকে মন্ত্রিসভা গঠন করানো থেকে আটকানো গেছে, সেই প্রক্রিয়ায় ঊনিশের লোকসভা থেকে বিজেপিকে কি হটানো যাবে? এই চিন্তাটাই এখন বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলি ও জাতীয় কংগ্রেসকে ভাবাচ্ছে৷
মমতার বক্তব্য, সব রাজ্যে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিতে হবে৷ আর যেখানে যে দলের শক্তি বেশি সেখানে সেই দলকে আসন ছেড়ে দিতে হবে৷ এতে আঞ্চলিক দলগুলি বেশি আসনে লড়ার সুযোগ পাবে৷ স্বাভাবিকভাবে এই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের মধ্যে ভাবনা দেখা দিয়েছে জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের অবস্থান কি হবে? আঞ্চলিক দলগুলিকে আসন ছেড়ে দিলে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী চরিত্রের অবশিষ্ট থাকলো কোথায়? কেননা প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই আঞ্চলিক দলগুলিরই প্রাধান্য বেশি থাকবে৷ আর কংগ্রেসকে তাদের জন্য আসন ছাড়তে হবে৷ ফলে ‘‘একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী’’ হলে কংগ্রেস তো অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে! জাতীয় দলের তকমা হারাবে৷ ও ভোটের ফল যদি বিজেপি বিরোধী জোট প্রার্থীদের অনুকুলে যায় , সেখানে কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে? সেক্ষেত্রে কম সিটে জোটে জেতা কংগ্রেস কি প্রধান মন্ত্রীত্বের দাবী করতে পারবে? সে দাবী তো উত্থাপনই করতে পারবে না কংগ্রেস৷ সেক্ষেত্রে চন্দ্রবাবু নাইডু, মমতা,মায়াবতী কিংবা মুলায়েম সিংহরা প্রধানমন্ত্রীর দাবীদার হবেন? কংগ্রেসের কিছু করার থাকবে না৷
আবার পরস্পর বিরোধী মতাদর্শের আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণটাই বা কী হবে? তখন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মতো কোনো জাতীয় দলের সরকার না থাকলে জাতীয় ঐক্য বজায় থাকবে কী করে? বিশেষ করে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হলে মোকাবিলা করতে নেতৃত্ব দেবে কারা? এটাও একটা জটিল প্রশ্ণ৷
আঞ্চলিক দলগুলি তো পরস্পর বিচ্ছিন্ন বিরোধী মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ এদের মিলাতে যাওয়া তো ‘‘সোনার পাথর বাটি’’ তৈরীর মতো অবস্থা! কংগ্রেস কি সেই অনুঘটক হতে পারবে? নাকি ‘‘সোনার পাথর বাটি’’ তৈরির অলীক স্বপ্ণ কংগ্রেসেরও ভরাডুবি ঘটবে?
এই জোটে আঞ্চলিক দলগুলির কিছু ফায়দা হলেও, কংগ্রেসের যে ভরাডুবি ঘটবে সে ব্যাপারে কংগ্রেসীদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে৷
দেশের সর্বনাশ তো পুঁজিবাদ সমর্থিত সবাই করছে৷ আগে কংগ্রেস করেছে, এখন বিজেপি করছে৷ এর থেকে মুক্তির উপায় পরস্পর বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির অশুভ আঁতাত নয় দরকার একই নীতি -আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ‘‘ আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বইকতাবাদ ’’ প্রতিষ্ঠার কোনো আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক দলের৷ এই মুহূর্তে যা প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) ও তার সমাজ আন্দোলন নামে পরিচিত৷ বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিক সচেতন প্রতিটি ভারতবাসীকে আজ সেই আন্দোলনের অনুগামী হতে হবে৷ সেটা ভিন্ন কথা৷ তবে প্রসঙ্গক্রমে তা কেবল বলে রাখলাম৷
- Log in to post comments