রাজনৈতিক দলগুলি  সংযত হোক ঃ এ রাজ্যের  জনগণকে আরও সজাগ হতে হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

 এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এদেশে ২০১৩-২০১৪ অর্থবর্ষে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির যে হার  ছিল ২০১৭তে  সেই উন্নতির  হার অনেক কমেছে৷ সেই কারণে  কর্ষকদের  মধ্যে মৃত্যুহার ও হাহাকার  বাড়ছে৷ তাঁরা অনেকেই  আত্মহত্যা করছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের লেবার ব্যুরোর প্রাপ্ত  সংবাদে জানা যায় ১লা এপ্রিল থেকে  জুলাই  ২০১৭তে ৪৭ হাজার চাকরীর অবলুপ্তি হয়েছে৷ ছোট ব্যবসায়ী যারা  ধান বিক্রি করে ৯ শতাংশ লাভ করেছিল৷ সেই পরিমাণ কমে ৫ শতাংশ হয়েছে৷

দুর্নীতির পরিমাণ ২০১৫ এর তুলনায়  বৃদ্ধি  পেয়েছে ৬৭ শতাংশ৷  ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে সুদ ও আসল জমা দেওয়া হয়নি ২ লক্ষ ৯ হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৭-১৮তে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  ৯লক্ষ ১২ হাজার কোটি  টাকায়৷ ছোট ছোট যে ঋণ  গরিব মানুষেরা নিয়েছে  ব্যাঙ্ক তাদের   পশ্চাতে ধাওয়া করছে৷

 সুইসব্যাঙ্কে  টাকা রাখার পরিমাণ  বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ হারে৷ শ্রী অমিত মিত্র বলেন জনধন যোজনায়  যে এ্যাক্যাউন্ট খোলা হয়েছে তাতে  এ্যাক্টিভ নয় এমন  এ্যাক্যাউন্ট এর সংখ্যা ৪৮ শতাংশ৷

এদিকে যেহেতু  পশ্চিমবাংলায় বিজেপি সরকার নয় তাই এখানে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দিকে মোটেই  নজর দিচ্ছে না৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও এমপি ও অন্যান্যদের বছরে বছরে বেতন বৃদ্ধি করছে  আর ডি .এ বাড়িয়ে  চলেছে৷ এখন প্রশ্ণ হলো রাজ্যগুলিকেও রাজ্যসরকারী কর্মচারীদের  কেন্দ্রের হারে ডি .এ দিতে  হয়৷  যদি রাজ্যের  প্রাপ্য অর্থটুকুই  না দেওয়া হয় তাহলে  ডিএটা রাজ্য দেবে কিভাবে?

 যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে  বর্ত্তমান  ভারতের  কেন্দ্রীয় সরকার  যেভাবে  শাসন  চালাচ্ছে সেটা অত্যন্ত সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থেরই  নিদর্শন  যা গণতন্ত্রে কাম্য নয়৷  আর্থিক সংস্কার  ঘটিয়ে  বিজেপি  সরকার দেশের অর্থনৈতিক  কাঠামোকে যে  একেবারে নড়বড়ে  করে ছেড়েছে  সেটা জলের  মতোই  পরিষ্কার৷ বর্ত্তমান রেশনিং  ব্যবস্থা নিয়ে  যে ব্যাপক  প্রচার  সেটা একধরনের  বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছুই নয়৷ ভারতের  বহুদলীয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন পৃথিবীতে  মোটেই একটা আশানুরূপ  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলো না৷  এটাই আমাদের এই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের ব্যর্থতা৷ সুইসব্যাঙ্কের  কালোটাকা এরা তো ফেরাতে পারেনি কিন্তু  প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলা দেশ-এর সুইজব্যাঙ্কে রাখা  কালো টাকা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে৷ আমাদের  দেশের দুর্নীতিপরায়ণ ধনী নেতারা  জোর  কদমে  দেশের টাকা সরাচ্ছে! এটা লজ্জার কথা৷  শাসকদলের এটা যে চরম ব্যর্থতা সেটা কিন্তু তারা স্বীকার  করেই না৷

অত্যন্ত হতাশার  কথা ভারতের  মতো গরিব দেশের  মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তদের  আর গরিবদের রক্ত জলকরা ব্যাঙ্কে সঞ্চিত টাকার  সুদ বছরে  বছরে  কমিয়ে  আর  জি.এস.টি বসিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আসলে  গরীবদের  ওপর শোষণ চালাচ্ছে৷

বর্ত্তমানে ভারতে রাজনীতির জগতে  দুবৃর্ত্তদের সংখ্যা  অত্যধিক  বৃদ্ধি  প্রাপ্ত হয়েছে৷ যেটা  রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্রয় দিচ্ছে বা নিয়ন্ত্রণ  করতে অক্ষম  হচ্ছে৷ এরই কারণে  আতঙ্ক ও সন্ত্রাস-এর সৃষ্টি হচ্ছে৷ আইন ও শৃঙ্খলা নষ্ট  হচ্ছে৷ কেন্দ্রে যারা  শাসনে তারা সারা ভারতে বিরোধী দলগুলিকে নির্মূল  করার চেষ্টাতে সদাব্যস্ত৷  ঠিক তেমনই রাজ্যে যারা  শাসনে তারাও  গণতন্ত্রের  মর্য্যাদাহানি করে  বিরোধী দলগুলিকে নির্মূল  করতে কোথাও কোথাও যেন  বদ্ধপরিকর৷ এই মানসিকতাটা গণতন্ত্রের পক্ষে  চরম ক্ষতিকারক৷ গণতন্ত্রে শাসকদের  অবশ্যই সংযত ও ন্যায়নিষ্ঠ ও যুক্তিবাদী হতে হবে৷ বিরোধী পক্ষ না থাকলে গণতন্ত্র বাঁচবে না৷  সরকারে যারা থাকবে তাদের  অবশ্যই  কিছুটা আইনের  মর্য্যাদা  রক্ষার  জন্যে উদার ও নীতিবাদী হতে হবে৷ তা না হলে  বামফ্রন্টের  মতো ধবংস হতে হবে৷  

তাই শাসকদল সংযত হোক৷ এই রাজ্যের জনগণকেও  আরও সচেতন হতে হবে৷