স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

যোগ ও স্বাস্থ্য

যোগাচার্য্য

স্বাস্থ্য বলতে সাধারণতঃ মানুষের ধারণা শরীরটা সুস্থ থাকা৷ না, শুধু শরীর সুস্থ থাকলেই তাকে স্বাস্থ্য বলা হয় না৷ ধরা যাক, একজন শারীরিক ভাবে সুস্থ কিন্তু প্রচণ্ড ধরণের মানসিক বিষাদে ভুগছে৷ তাকে কী করে সুস্থ বলতে পারি কিছুদিন পর মানসিক বিষাদ থেকে তার পরিপাক ক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দেবে, ও তারপর নানান দৈহিক রোগেরও শিকার হবে৷ তাই বলছি, কেবল শারীরিক সুস্থতাকে স্বাস্থ্য বলে না৷

অপামার্গ / অপরাজিতা

অপামার্গের পর্যায়বাচক শব্দগুলি হ’ল ‘কোষাতকী’ ও ‘খরমঞ্জরী’৷ ভারতীয় অপামার্গ মুখ্যতঃ দুই প্রজাতির–শ্বেত অপামার্গ ও রক্ত অপামার্গ৷ কলকাতা অঞ্চলে আমরা অপামার্গকে কথ্য ভাষায় বলে থাকি অপাঙ বা আপাঙ৷ রাঢ়ে বলি চচ্চড়ে, অঙ্গিকা ভাষায় বলা হয় চিড়চিড়া৷ অপামার্গের শীষ কারো গায়ে ছুঁড়ে দিলে তা তার বস্ত্রে আটকে যায়৷

ডালিম / বেদানা

সংস্কৃতে ‘দাড়িম্ব’ থেকে মৈথিলিতে ‘দাড়িম’, ৰাংলায় ‘ডালিম’ শব্দ এসেছে৷ এই দাড়িম্ব বা ডালিমের বৈজ্ঞানিক চর্চা করে প্রাচীনকালে বেদানার উদ্ভব হয়েছিল৷ ইংরেজীতে এই দু’টিকেই pomegranate বলা হয়৷ বেদানার ভাল নাম ‘দাড়িম্বী’৷ আকারে ডালিম ৰড়, মাঝারি ও ছোট নানান ধরনের হয়৷ বেদানা হয় মাঝারি আকারের৷ ডালিমের খোলার গাত্রবর্ণ কিছুটা লালচে, বেদানার গায়ের রঙ খয়ের বা কপিশ বর্ণ৷ ডালিমের দানা লাল৷ বেদানার দানা হালকা গোলাপী অথবা বেগ্নে মিশ্রিত গোলাপী৷ স্বাদে ডালিম টক অথবা টক–মিষ্টি মেশানো৷ বেদানা সাধারণতঃ মিষ্টি৷ খাদ্যগুণ ডালিম ও বেদানায় থাকলেও, বেদানায় বেশী রোগীদের পথ্য হিসেবে বেদানাই ব্যবহার্য৷ ডালিম একটি রক্ত–ৰর্

আমানি

রাত্রে ভাত রেঁধে তা মাটির হাঁড়িতে রেখে তার সঙ্গে যদি কিছুটা জল, তেঁতুলের রস, প্রয়োজনৰোধে অত্যল্প লবণ দিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা পরের দিন সকালে গেঁজে গিয়ে যে বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, তাকে যদি ভাল করে চট্কে কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া হয়, তবে সেই তরল বস্তু ‘আমানি’ নামে অভিহিত হয়৷ এই আমানি এক ধরনের গেঁজানো সুরা৷ এতে অল্প পরিমাণ নেশা হয়৷ তবে এতে নেশার সঙ্গে সঙ্গে ঔষধীয় গুণও আছে৷ এ ঘুম আনিয়ে দেয়৷ বদহজম হলে হজমেও সাহায্য করে দেয়৷ (গরম কালে) ঘর থেকে বেরোবার সময় আমানি খেয়ে বেরোতে হয়, আর সর্দি–গর্মী হলে আমানি খেলে তাড়াতাড়ি ফল দিয়ে দেয়৷ কয়েকটি বিশেষ খাদ্য গ্রহণের ফলে উদরাময় বা অতি সার দেখা দিলে, আমানি তাতেও ঔষধ রূপে

অশোক

অশোক একটি ভারতীয় প্রজাতির (Indica) গাছ৷ অত্যুষ্ণ বা অতি শীতল অঞ্চল বাদে ভারতের সর্বত্রই অশোক গাছ জন্মায়৷ কেউ কেউ দেবদারু (ঢ়েউ খেলানো পাতা) গাছকে ভুল করে অশোক বলে থাকেন৷ না, দেবদারু ও অশোক এক গাছ নয়৷ দেবদারু (Indian Pine) পাইন বর্গীয় গাছ, অশোক তা নয়৷ অশোক ফুল অধিকাংশ ক্ষেত্রে লালচে রঙের৷ কিন্তু শাদা, সোণালী ও হলদে রঙের অশোক ফুলও হয় যদিও তারা দুষ্প্রাপ্য৷

অশোক ফুল, ছাল ও মূল নানান ধরনের ঔষধ প্রস্তুতিতে লাগে৷ বিশেষ করে বিভিন্ন স্ত্রী–ব্যাধিতে অশোকের ঔষধীয় গুণ সর্বজনস্বীকৃত৷ অশোকাসব, অশোকারিষ্ট, অশোকক্ষীর প্রভৃতি ঔষধগুলি এই অশোক থেকেই প্রস্তুত হয়৷

গোলমরিচ

গোলমরিচকে প্রাচীনকালে কথ্য সংস্কৃতে ৰলা হত ‘‘কটূৰীজম’’৷ গোলমরিচের আদিবাস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া৷ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া গোলমরিচের অতি প্রিয়৷ হাওয়াতে–মাটিতে–জলে একটু নোনতা ভাব থাকলে তো সোণায় সোহাগা৷ মোটামুটি বিচারে ধরে নেওয়া যেতে পারে নারকোল, পান, চৈ, গোলমরিচ কতকটা একই ধরনের আবহাওয়া চায়৷ এই জন্যে আমরা দেখতে পাই অনেক ক্ষেত্রে লোকে গোলমরিচের লতা নারকোল গাছের ওপর তুলে দেয়৷ গোলমরিচ ভারত তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম ফসল ও যথেষ্ট গুণযুক্ত একটি মশলা৷ গোলমরিচ একটি সংরক্ষণযোগ্য ৰীজ ঙ্মশুকিয়ে রাখা যায় দীর্ঘদিনৰ৷ দক্ষিণ ৰাংলা, পূর্ব ৰাংলা ও উত্তর ৰাংলার আবহাওয়া নারকোল, চৈ ও গোলমরিচ–তিনেরই উপযোগী৷ পূর

পোস্ত

পরিচয় ঃ ‘পপি’ নামে এক রকমের ছোট ফুলের গাছ ইয়ূরোপ থেকে এদেশে এসেছিল৷ এটি শীতকালের মরশুমী ফুল৷ ভারতে এখন শখের ফুল হিসেবে অনেকেই বাগানে চাষ করেন৷ ফুলের রঙ নানান ধরনের–লাল, শাদা, হলদে, ৰেগনে৷ এটি নির্দোষ বা নির্বিষ বর্গীয়৷ ফুল ঝরে যাবার পর এর গাছে যে ৰীজকোরক আসে সেটা ছোট ও লম্বাটে৷ তার গা চিরে দিলে যে রস বের হয় তা নির্দোষ৷ ৰীজকোরকে যে ৰীজ হয় তা কালচে রঙের৷ এই পপির যে প্রজাতিটি ওপিয়াম পপি নামে পরিচিত, তা কিন্তু ভারতে বিদেশ থেকে আসেনি৷ সেটা এদেশেরই ফুল৷ সাধারণ পপি ও ওপিয়াম–পপির মধ্যে তফাৎ হ’ল, সাধারণ পপির চেয়ে এর পাতা ৰড়, মোটা, পুষ্ট ও সতেজ ও একটু বেশী রকমের জোরালো সবুজ৷ সাধারণতঃ

বধিরতা

লক্ষণ ঃ এই রোগে আক্রান্ত হবার প্রথমের দিকে রোগী কাণে ভোঁ–ভোঁ শব্দ শোণে ও ক্রমশঃ অনান্য সমস্ত শব্দই রোগীর কাছে অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে৷

কারণ ঃ জন্মগত কারণ ব্যতিরেকে বধিরতা নিজে কোন রোগ নয়–অন্য রোগের প্রতিক্রিয়া মাত্র৷ তাই এ রোগের অজস্র কারণ থাকতে পারে৷

১) অতিরিক্ত কুইনাইন বা অন্য কোনবিষ ঔষধ রূপে দীর্ঘকাল ব্যবহার করলে শ্রবণশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয় বা স্তম্ভিত হয়ে যায়৷

২) পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে পেরৌঢ়ত্বে বা বার্দ্ধক্যে অনেক লোকের শ্রবণযন্ত্রের স্নায়ুপুঞ্জ দুর্বল হয়ে পড়ে ও তার ফলে বধিরতা দেখা দেয়৷

মউমাছি ও মধু

ভারতে সাধারণতঃ তিন ধরনের মউমাছি দেখা যায়– রক্–ৰী, ৰুশ–ৰী ও এপিস ইণ্ডিকা৷ রক–ৰী ৰড় জাতের মউমাছি, মধু প্রস্তুত করে প্রচুর পরিমাণে৷ চাক ৰড় ৰড়, সাধারণতঃ বটগাছে বা ৰড় ৰড় গাছের ডালে চাক ৰাধে৷ অনেক সময় চাক এত ৰড় হয় যে চাক ফেটে টস্ টস্ করে মধু মাটির ওপরে পড়তে থাকে৷ রক–ৰীর দ্বারা তৈরী মধু একটু ঝাঁঝাল হয়৷ এই মধু উগ্রবীর্য নামে খ্যাত৷ মানুষের প্রাণশক্তি যেখানে কমে এসেছে –মৃত্যুর হিমশীতলতা যেখানে তার অবসন্ন দেহে নেবে এসেছে, অনেক সময় সেই অবস্থায় এই উগ্রবীর্য মধু নোতুন করে প্রাণসঞ্চার করে দেয়৷ প্রাণশক্তি কমে যাওয়া মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে যদি কোন রক্তক্ষয়ী রোগ না থাকে, তবে তিনটে কৃষ্ণতুলসীর পাতার সঙ্গে দ

শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত রোগ ও জ্বররোগে - তুলসী ও মধুর প্রয়োগ

তুলসীর পরিচয় ও প্রজাতি ঃ বিশ্বে এক শতাধিক প্রজাতির তুলসী বা Basil বর্গীয় গাছ রয়েছে৷ তুলসী জন্মায় আইবেরিয়ায় (স্পেন ও পর্তুগাল) সবচেয়ে বেশী৷ ৰাঙ্গালীস্তানের মাটি, জল, আবহাওয়া তুলসীর পক্ষে খুবই উপযোগী৷ শুধু ৰাঙ্গালীস্তান নয়, সমগ্র ভারতের প্রতি গৃহেই তুলসীর গাছ রাখার বিধি, এর ঔষধীয় গুণের কথা ভেবেই৷ সমগ্র তুলসী বর্গীয় গাছের একটা নিজস্ব বর্ণ–গন্ধ আছে৷ যদিও সকল রকম স্বভাবের তুলসীর ৰীজ অনেকটা এক ধরনের ও তুলসী বর্গের মূল গন্ধ সবাইতে আছে, তবুও সবাইকারই স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে নিজস্ব গন্ধও আছে৷ যে কয়েক প্রজাতির তুলসী ৰাংলার একেবারে স্থানীয় অর্থাৎ ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়, তাদের মধ্যে রাধাতুলসী ও বাবুইতুল