অগ্ণিপথ–গ্ণিবীর নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘‘বাঙালী’’ রেজিমেন্ট পুনর্ঘটন চাই

লেখক
তপোময় বিশ্বাস 

পাঠকবর নিশ্চয়ই অবগত আছেন গত কয়েকদিন পূর্বে কেন্দ্রীয় মোদী সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘অগ্ণিপথ’ নামক চুক্তি ভিত্তিক সেনা নিয়োগের এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা, মূলত যুবকবৃন্দ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিক্ষোভ প্রদর্শন অবশ্যই সাংবিধানিক অধিকার স্বীকৃত৷ কিন্তু বিক্ষোভকারীরা চরম হিংসাত্মক তথা ধংসাত্মক পথে  বিক্ষোভের নামে দেশের সম্পদকে ধ্বংস করেছে তা কখনোই কাম্য নয়৷ বিহার সহ দেশের  বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেন/গণপরিবহন জ্বালিয়ে দেওয়া, অবরোধের নামে জনসাধারণ আটকে পড়েছেন, বাড়ী ফিরতে পারছেন না৷ এসব কিছু আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন বা কেউ কেউ পরিস্থিতির শিকারও হয়েছেন৷ ‘অগ্ণিপথ’ নামক বিজেপির ক্যাডার  তৈরীর এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদ দেখানো উচিত, কিন্তু অবশ্যই তা ধ্বংসাত্মক পথে নয়৷

চার বছরের চুক্তি সেনা মানেই দেশের সেবক, চুক্তি করে স্বার্থসিদ্ধি করা যায় দেশসেবা নয়৷ এই চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের ফলে দেশের বর্তমান যুব প্রজন্মের মন থেকে দেশ ভক্তি বা দেশ সেবার বিষয়টাই থাকবে না, থাকবে কিছু স্বার্থ বা অর্থের লোভ৷ তাই আমি মনে করি দেশের প্রত্যেক শুভ বুদ্ধির সম্পন্ন মানুষের উচিত এই চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের প্রক্রিয়া তথা অগ্ণিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হওয়া৷ এর বিরুদ্ধে এই অগ্ণিপথ বাতিলের দাবীতে অবিলম্বে দেশজুড়ে গণপ্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন৷

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বাঙালী রেজিমেন্ট পুনর্ঘটনের বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন কোন রাজনৈতিক দলের উচ্চবাচ্য নেই, চিন্তা নেই কেন? সেই বিষয়টি আজকে জনসমক্ষে আশা দরকার৷ অনেকেই জানেন না যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ‘বেঙ্গল রেজিমেন্ট’এর অস্তিত্ব ছিল, সেই সময়ের বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী সৈনিকরা শৌর্য বীর্যের সাথে লড়াই করেছেন৷ ব্রিটিশরাজ শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল বাঙালী সৈনিকরা যে বীর্যবত্তার পরিচয় দিচ্ছে তাতে খুব শিগগিরই তারা ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করবে, তাই চক্রান্ত করে ১৯২০ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার ‘বেঙ্গল রেজিমেন্ট’ কে ভেঙে দিল এবং সাথে সাথে বাঙালী তথা দেশবাসীর জনমানসে ‘‘বাঙালী লড়াই করতে পারে না’’ এই ভুল ভাবনা সূচিকাভরণ করে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রের রচিত করা হল৷ কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বাঙালী রেজিমেন্ট ভেঙে ও বা লড়াই সম্পর্কে বাঙালীদের মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিয়েও ব্রিটিশদের ভারত রাজের স্বপ্ণ সত্যি হয়নি, এই বাঙালী বিপ্লবীদেরই অগ্রণী ভূমিকায়, সংগ্রামে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়৷ আজও কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে গেলে  বেঙ্গল রেজিমেন্টের মৃত বাঙালী সৈনিকদের স্মৃতিসৌধ দেখতে পাওয়া যায়৷ দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৭৫ বছর আগত৷ এই দীর্ঘ সময়ে বহু রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে/রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কেউই ‘‘বাঙালী রেজিমেন্ট’’ পুনর্ঘটনের ব্যাপারে নূ্যনতম উদ্যোগ নেয় নি বরং ব্রিটিশদের তৈরী হীনমন্যতা বাঙালী লড়াই করতে পারে না এই অপপ্রচার চালিয়ে গেছে৷ এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলি বাঙালীর পাশে নেই, বাঙলার  পেশে নেই৷ তারা বাঙালী বিদ্বেষী৷

বাঙালী লড়াই পারে না বর্তমানে কার্গিল বা গালওয়ান, পুলওয়ামা ইত্যাদি নানান যুদ্ধে বহু বাঙালী সৈনিক বীরের মতন শত্রুর সাথে লড়াই করেছেন, কেউ বা শহীদ হয়েছেন৷ এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় বাঙালী লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে পালায়নি ও ভবিষ্যতে পালাবে না৷ লড়াই বাঙালীর রক্তে আছে৷ বর্তমানেও ভারতীয় সেনাতে বহু বাঙালী সৈনিক রয়েছেন, কিন্তু তারা বিহার বা অন্য রাজ্যের রেজিমেন্টে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ কেন এমনটা হবে? অতীতের ব্রিটিশদের হয়ে ভারতীয় বিপ্লবীদের খুন করা চীনের দালাল বিদেশী এজেন্ট গোর্খাদের রেজিমেন্ট ভারতীয় সেনাবাহিনীতে রয়েছে, তা হলে কেন বাঙালী রেজিমেন্ট থাকবে না? ভারতে ১৯টি জাতিভিত্তিক রেজিমেন্ট আছে৷ অবিলম্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বাঙালী রেজিমেন্টের পুনর্ঘটন করতে হবে, তবেই সহজে বাঙালীদের পিছনে বিদেশী স্ট্যাম্প, বাংলাদেশী স্ট্যাম্প সাঁটিয়ে দিতে পারবে না৷ আমরা বাঙালী, আমরা নেতাজীর বংশ, মাস্টারদার বংশ, ক্ষুদিরামের বংশ৷ অতীতে বাঙালী মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, ভবিষ্যতেও বাঙালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে৷