অর্থনীতির বেহাল দশা

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

উগ্র জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছে দ্বিতীয় মোদি সরকার৷ স্বদেশীয়ানায় এতটাই উন্মত্ত ছিল যে কোনোরকম বিরুদ্ধ সমালোচনা হলেই তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়েছে৷ কোনো বিরোধী নেতা-নেত্রীকেই রেহাই দেওয়া হয়নি৷

উগ্রজাতীয়তাবাদ যেমন সংসদীয় রাজনীতিতে জয়ের হাতিয়ার, তেমনি  ফ্যাসিষ্ট পুঁজিপতিদেরও শোষণের যন্ত্র এই উগ্র জাতীয়তাবাদ৷ কিন্তু জনগণকে ভাত কাপড়ের যোগান দিতে একেবারেই অকর্মন্য৷ সরকারও অসহায়, কারণ বোট বৈতরণী পার হতে, জাতীয়তাবাদের জোয়ার আনতে  ফ্যাসিষ্ট পুঁজিপতির হাত ধরতে হয়েছে৷

জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে জনগণকে যতই বঞ্চিত করা হোক, গণতন্ত্রের দেশে  একেবারেই উপেক্ষা করা যায় না৷ জনগণের প্রতি একটা দায় সরকারের থাকে৷ আর্থিক সংকটে পড়ে সেই দায় রক্ষা করতে গিয়ে এখন স্বদেশীয়ানায় ভাটা পড়েছে৷

দেশের আর্থিক সংকট চরমে৷ আগে কখনও দেশকে এই সংকটে পড়তে হয়নি৷ সরকারের ভাড়ার শূন্য, অর্থনীতিতে চরম মন্দা৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাড়তি টাকা সরকারের ভাঁড়ারে এনেও অবস্থা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়৷

আর্থিক মন্দা কাটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে চাঙ্গা করতে অর্থমন্ত্রী কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু তাতেও সংকট মোচনের ভরসা  পাচ্ছেন না৷ তাই এফ.ডি. আই নীতি সংশোধন করে  বিদেশী লগ্ণীর পথ আর বেশী করে উন্মুক্ত করা হচ্ছে৷

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি৷ টাকার মূল্য দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় সরকারের সংকট আরও বাড়িয়েছে৷ আর্থিক সংস্থাগুলিও সরকারকে খুব একটা আশার কথা শোণাতে পারছে না৷ কোভিড-১৯ লক্‌ডাউনের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যেও সংকট দেখা দিয়েছে৷ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ঘা খাচ্ছে৷

 এখন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে লাভজনক সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোয়৷ করুন৷ রেল রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক, বীমা ইত্যাদি সবই এখন বেচারামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ এর পরিণতি ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে দেশের এই সংকটের জন্য সরকার যদিও কোভিড ১৯কেই দায়ী করছে৷ আসলে অর্থনীতি সম্পর্কে বাস্তব বর্জিত জ্ঞান এই সংকট ডেকে এনেছে৷ সংকট মেটাতে সরকার যে পথে এগোচ্ছে তাতে সাময়িক স্বস্তি পেলেও  অর্থনৈতিক যন্ত্রণা আরও তীব্র হবে৷

দেশের অর্থনীতির এই সংকট আকস্মিক নয়৷ মিশ্র অর্থনীতির সোনার পাথর বাটি, অপরিকল্পিত ভ্রান্ত শিল্প ও  কৃষিনীতি, নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় এই সংকট ডেকে এনেছে৷ এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্তিত ‘প্রাউট’ তত্ত্ব দেখিয়েছে৷ প্রাউটের স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘটন ও সুসন্তুলিত অর্থনীতির প্রয়োগী এই সংকট থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করবে৷ বৃহৎ শিল্প নয়, ব্লকে ব্লকে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্প গড়ে’ বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ পশ্চিমবাঙলা, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই ধরণের কৃৃষি ভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্প গড়ে তোলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ দুঃখের বিষয়ে স্বাধীনতার চুয়াত্তর বছরে কোনও সরকারই এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি৷ এমনকি অর্থনীতিবিদরাও অর্থনৈতিক পরিল্পনার এই বাস্তব দিক নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করেননি৷ যদি করতেন দেশকে আজ পুঁজিবাদী আগ্রাসন এই সঙ্কটের মধ্যে ফেলতে পারত না৷ এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র বাস্তবোচিত পথ প্রাউটের বাস্তবায়ন৷

 সরকার যদি বাস্তবোচিত পথে গিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক সঙ্কট মুক্ত করতে না পারে তবে স্বদেশীয়ানার হুজুগে জনগণকে বেশীদিন মাতিয়ে রাখা যাবে না৷