আপামর জনগণের বিশেষ করে বর্তমানে ১৮ বছরের ঊধের্ব যাঁরা নাগরিক তাঁদের বোটদানে যাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনে আসেন তাঁদের পবিত্রতম কর্ত্তব্য হলো সারা দেশের জনগণের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে রক্ষা করা ও তাঁর সাথে সাথে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ অদ্যাবধি এদেশের বিভিন্ন দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ কী দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন? এক কথায় উত্তর হলো তাঁরা নোংরা দলবাজি করতে এসেছেন ও দলীয় স্বার্থসিদ্ধি করতেই ওস্তাদ জনগণকে ভাঁওতা দিয়ে৷ তাইতো দেখা যায় সরকারে আসীন দলীয় প্রতিনিধিরা অধিকাংশই কোটিপতি ও লক্ষপতি হয়ে জনগণের ভাগ্যবিধাতা হয়ে মগডালে বসে হাওয়া খাচ্ছেন!
১৩৫ কোটি জনগণের সিংহভাগকে---যাঁরা মধ্যবিত্ত নিয়মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সীমান্তে বসবাসকারী তাঁদের জীবন যাত্রাকে দুর্বিসহ করে ছেড়েছেন শাসকগণ৷ তাঁদের রাতের ঘুমটাই চলে গেছে অপদার্থ শাসকগণ এর কুশাসনে! ঋণে শস্য শ্যামলা ভারতকে পঙ্গু করে ছেড়েছে৷ উপরন্তু গত প্রায় দেড় বছরে করোনা বাইরাসে আক্রান্ত দেশকে এমন এক গভীর অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে চলেছেন তা কহতব্য নয়৷ দেশটি ভয়ঙ্কর বেকার সমস্যায়, আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে, অধিকাংশ কলকারখানা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বন্ধ রেখে অর্থনৈতিক কাজ কারবারকে পথে বসিয়ে চরম আর্থিক সংকটে ফেলে দিয়েছেন সরকার সারা দেশকে৷ ঘরবন্দী মানুষেরা প্রাণদায়ী ঔষধের অভাবে মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায়৷ দেশ যেন একটি মহাশ্মশান কিন্তু নেতা ও নেত্রীগণ টিভি ও সরকারী প্রচার মাধ্যমের মধ্য দিয়ে জনগণকে স্তোকবাক্য শুনিয়ে চলেছেন যা অধিকাংশটাই মিথ্যাচারিতার ছাড়া কিছুই নয়৷
অত্যন্ত বিসদৃশ ব্যাপার হলো এই চরম সংকটে মহাকাশ অভিযান হচ্ছে ভারতের মতো গরীব দেশে৷ কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক সমর অস্ত্র কেনার ব্যবস্থ হচ্ছে৷ আর দেশের নাগরিকগণ অভুক্ত ও রোগগ্রস্ত হয়ে ঘরে, পথে পড়ে অকালে মারা পড়ছেন৷ এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন! সারা পৃথিবীটাই করোনায় আক্রান্ত কিন্তু এমন দুরবস্থাতো অন্যদেশে হচ্ছে না৷ মূলতঃ দেশ সেবাটাকে তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন৷ কিন্তু এদেশের শাসকগণ নিছক মিথ্যার বাণী ছড়িয়ে হতভাগ্য জনগণকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার এক মিথ্যাচারিতার অভিনয়েই কী হাততালি পাওয়ার চেষ্টায় উন্মত্ত নয়?
এদেশের প্রথম থেকেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিটাই বাসা বেঁধে আছে৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বুঝেছিলেন গরিব দেশের নাগরিকগণ অনেক কষ্ট করে ব্যাঙ্কে অর্থ সঞ্চয় করেন আর অনেক ব্যাঙ্ক গণেশ ওল্টায় তাদের পথে বসিয়ে ব্যাঙ্ক ফেল হয়৷ তাই তাদের রক্ষায় ব্যাপক জাতীয়করণ করেন জনগণের ব্যাঙ্কে আমানত জমা করার উৎসাহ বাড়াতে, জনগণের ও বিশ্বাস বাড়াতে ও নিরাপত্তা দানে৷
দেখা গেল কিছু বছর যেতে না যেতে ব্যাঙ্কে পুকুর চুরী হতে লাগলো নাম করা ধনী ঋণগ্রহীতাদের অশুভ কারণে৷ তারা ব্যাঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে সব বিদেশে পাড়ি জমালো৷ হতভাগ্য গরিব মানুষরা দারুণভাবে আশাহত হলো যখন তারা দেখলে তাঁদের রক্ত জল করা গচ্ছিৎ টাকার সুদ একেবারে কমে যেতে লাগলো৷ তাতে যাঁরা জমানো টাকার সুদে সংসার প্রতিপালন করে তাঁরা পথে বসলেন৷ চরম সংকটে পড়লেন সেই গরীব আমানতকারীগণ৷ মূলতঃ তাঁরাই গণতন্ত্রে সবদিক থেকে শোষিত হচ্ছেন৷ তাঁরা নানা ধরনের ট্যাক্স দিতে বাধ্য হচ্ছেন বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়ে৷
ভারতের দলীয় শাসকগণ মূলতঃ ধনীদের সেবাদাস৷ তাই দেখা গেল ধনীদের স্বার্থে আর কোটি কোটি দরিদ্র নাগরিকদের আর্থিক শোষণ করে বর্ত্তমান বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার বেচারামের সরকার হয়ে আর বেসরকারীকরণে এগিয়ে চলেছে৷ কারণ যাঁদের আর্থিক সংস্থান দৃঢ় করার কোন পরিকল্পনা থাকে না তাঁরা তো শাসন চালায় জনগণের উপর শোষনের রোলার চালিয়ে৷ তাই এঁরা শাসনে এসেই যে দু’টি কাজ করে গরিব মারার ব্যবস্থা করেছে--- তা হলো বিমুদ্রাকরণ৷ তার ফলে ৫০০ টাকার ১০০০ হাজার টাকার অনেক নোটই যাঁরা ভবিষ্যতের জন্য জীবনের গ্যারান্টি হিসাবে ঘরে জমা করেন, তাঁরা ভাঙাতেই পারেননি নানা কারণে৷ আর যাঁরা ধনী তাঁরা নানা ফাঁক-ফোকড় দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন৷ তাছাড়া জি.এস.টি (গুড্স সার্বিস ট্যাক্স) যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর বসেছে তার স্বচ্ছ ধারণা না জনগণের নেই৷ তার জন্য জনগণ ন্যাজেহাল হয়ে চলেছেন৷
আর ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণটা একটা ভয়ংকর ধান্দা এই সরকারের৷ আজও টাকা তোলার ব্যাপারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করে ও ব্যাঙ্কের কাজে যৎসামান্য লোক নিয়োগ করে বয়স্ক নাগরিকদের চরম দুর্গতির কারণ হয়েছে৷ ভালো ভালো এই বাঙলার গৌকব বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ককে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক করে যাদের সংখ্যা ১০টি ছিল, গত ২০২০ সালের ১লা এপ্রিল পর্যন্ত৷ এতে গ্রাহক স্বার্থ প্রায় ধবংস হয়ে যাবে৷ ভারতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭টা৷ ২০২০ এর সংখ্যা নেমে এলো মাত্র ১২টিতে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংকোচনে রক্ষণশীলরা মেনে নিতে পারেন নি৷ বিশেষ করে ইউবি আই ব্যাঙ্ক পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্তিটা অনেক গ্রাহকের মনে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে৷ এই ইউবিআই ব্যাঙ্কটি বাঙ্গালীর খুবই বিশ্বাসের ব্যাঙ্ক ছিল ও গ্রাহকদের আস্থাভাজন ছিল৷
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি কেন্দ্র সরকার কিছু ব্যাঙ্ক তুলে দিতে আর কিছু বেচে দিতে চান৷ রক্ষণশীলরা প্রতিবাদ জোরালো করতে পারতেন৷ কিন্তু ভ্রান্ত স্বার্থের আশায় তা করেননি৷ কিন্তু এই সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরে কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেসরকারী করণই হবে ভবিষ্যতে৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মল সীতারমন ১৬ই মার্চ আশ্বাস দেন আন্দোলনরত ব্যাঙ্কারদের কাছে এই বলে যে ব্যাঙ্ক বেসরকারী করণের কোন পরিকল্পনা নেই সরকারের৷ গত মঙ্গলবার খোলসা করে দিলেন অর্থসচিব টিভি সোমনাথন এক অনুষ্ঠানে বলেন ধীরে ধীরে সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারীকরণের পথে সরকার হাটবেন৷ সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অদক্ষতাটাই সারা দেশে প্রকাশ পাচ্ছে৷ তাই এর বিরুদ্ধে সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ ও বিরোধিতা হওয়াটা জরুরী৷ দেশকে বাঁচাতে এছাড়া কোন পথ নেই৷ সমস্ত বিরোধী দলেরই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জনগণ ও ব্যাঙ্ককর্মচারী ও গ্রাহকগণ আশা করেন৷ বর্ত্তমান সরকার এংক ভয়ংকর স্বৈরাচারিতার পথে হাঁটছেন৷ একদিন ইন্দিরা গান্ধী এইপথে হাঁটায় জনগণ তাঁকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন নির্বাচনের মাধ্যমে৷ সরকার সংযত হোন ও জনগণের কথা ভাবুন৷ জনগনের কথা ভাবুন৷ প্রতিটি মানুষ ক্ষুব্ধ সরকারের নির্মমভাবে ডিজেল, পেট্রোলের রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ও বাজারদর নিয়ন্ত্রন না করায়৷ তার উপর এইসব তুঘলকী কাণ্ড সেটা অসহ্য!
- Log in to post comments