বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় আয়-ব্যয়মাত্রিকা (বাজেট) লক্ষ্যহীন একটা রাজনৈতিক চমক!

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের বর্ত্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আর মাত্র কয়েক মাস আয়ু আছে কারণ ২০১৯ এর মাঝামাঝি পাঁচবছর পূর্ণ  হতে চলেছে৷ এই সরকারের শেষ ‘অন্তবর্তী বাজেট’ লোকসভায়  পেশ হয়েছে৷ কিন্তু এই বাজেট-এর আকার-প্রকার কিয়েক মাসের  জন্য নয়৷ এটা দেখে মনে হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ বাজেট৷ ২০১৯-২০২০ সালের বাজেট৷  বাজেট পেশ করা উচিত ছিল কয়েক মাসের জন্য  কাজ চালাতে৷ নির্বাচনের পর যে সরকার আসবেন তারা পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন৷ কিন্তু বিজেপি  সরকার প্রথা ভেঙ্গেছেন  নির্লজ্জভাবে নির্বাচনী চমক দিতে৷

অন্তবর্তী বাজেটে আয়করের ঊধর্বসীমা  বৃদ্ধির কথা আসে না৷ যে আর্থিক বছরে সেটা আসে তা হ’ল ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২০-এর ৩১শে মার্চ পর্যন্ত৷

১) এই সরকারের বাজেটে যা যা আছে তার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, যে কর্ষকদের পাঁচ একরের কম জমি আছে তাদের সরাসরি াঙ্ক  অ্যাকাউন্টে বছরে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে ও তা তিনটি  কিস্তিতে দেওয়া হবে জানানো হয়েছে৷

দেশে ১২.৫৬ কোটি  প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কর্ষক (চাষী) আছেন৷ খরচ হবে ৭৫ হাজার ৩৬০ কোটি  টাকা৷ তবে অর্থমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তাদের এই অর্থ অতি শীঘ্রই দেওয়ার  জন্যেই৷ কারণ নির্বাচন ঘোষণার পর আদর্শ আচরণবিধি লাগু হলে সরকার আর দিতে পারবেন না৷ কর্ষকদের মন জয় করতে হবে তো!

কর্ষক (চাষী) ও মধ্যবিত্তের  জন্য নির্বাচনী বছরে  আরো নানান সুবিধার প্রস্তাব৷

২) আয়কর ছাড়ের ঊধর্বসীমা বাড়াবার প্রস্তাব  আছে এই বাজেটে৷ এখানে বলে রাখি,মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে ‘বাজেট’-এর বাংলা হলো ‘আয়- ব্যয়মাত্রিকা’৷  সরকারে বাৎসরিক আয়-ব্যয়কে আইনসিদ্ধ করার যে পদ্ধতি সেটাই হলো বাজেট আলোচনা৷  সরকারের আয়ের বিশেষ দিক হলো নাগরিকদের প্রদত্ত আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স)৷ এদেশে যাঁরা বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত  আয় করেন তাঁদের এজন্যে কোন ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না৷ এটাই  আলোচ্য বাজেটে প্রস্তাব৷ বর্তমানে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় আছে --- যাঁদের বয়স ৬০ বৎসব আর ৮০ বৎসরের ঊর্ধে যাঁদের বয়স তাদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোনও আয়কর দিতে হবে না৷ তাছাড়া ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ থেকে আয়কর মকুব করা হয়েছে৷

৩) ব্যাঙ্কের ঋণ আদায়ে  দেউলিয়া কোডের  সংস্কার করার প্রস্তাব আছে৷ সরকার ঋণ উসুল করার টাকার পরিমাণ বেঁধে দিয়েছেন ৩ লক্ষ কোটি টাকা৷ আর.বি.আইর ‘‘প্রম্পট কারেকিটভ অ্যাকশন’’ পিসিএর সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে৷ তাতে ব্যাঙ্কের ঋণ দেওয়ার পদ্ধতির আরো সরল হবে৷

৪) মিঃ গোয়েল যে বাজেট (আয়- ব্যয় মাত্রিকা) পেশ করেছেন তাতে ২০১৯-২০ সালের রাজস্ব ঘাটতি  দাঁড়াবে  ৩.৪ শতাংশ৷

রাজস্বের ওপর আরো চাপ বাড়বে মূলতঃ ছোট ও প্রান্তিক চাষীদেরও জন্যে নানান প্রকল্প ঘোষণা করার ফলে৷ এরজন্যে অতিরিক্ত খরচ ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা৷ আর বেতনভুক কর্মীদের আয়কর  ছাড়ের  কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি হবে তা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা৷

৫) মেগাপেনশন প্ল্যান৷ অসংঘটিত  ক্ষেত্রে শ্রমিক ও কর্মীদের জন্যে বীমা প্রকল্প সরকার  ঘোষণা করেছেন৷ যাদের মাসিক আয় ১৫ হাজার  টাকার নীচে ও যাদের কোন সামাজিক নিরাপত্তা  আনা হয়নি, তারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে৷

৬) রিয়েল এসেস্টের ব্যবসাকে উৎসাহ ঃ বাড়ি ভাড়া বাবদ ২.৪ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়-এর ওপর আয়কর মকুব করেছেন৷ মূলধনী আয়ের সুবিধা বাড়িয়ে  ২কোটি টাকা করা হয়েছে৷ এই টাকা দ্বিতীয় বাড়ি ক্রয়ে লগ্ণি করা যাবে৷

মিঃগোয়েল বলেছেন, বর্তমানে  করদাতাদের  সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮৫ কোটি, আগে ছিল ৩.৭৯ কোটি৷ মূলতঃ মনে হয় এঁদের দেওয়া করই  দেশের মূল আয়ের উৎস৷

মোদ্দাকথা বাজেটে  সরকার কল্পতরু হয়েছে৷ আয়ের উৎস সরাসরি উল্লেখ্য করেননি৷ অর্থনীতিবিদ নীতিন দেশাই বলেন --- এটা আসলে অন্তর্বর্তী বাজেট নয়, এটা প্রধানমন্ত্রী বাঁচাও যোজনা৷

কলকাতার বণিকমহল বলেছেন, কেন্দ্রের ২০১৯-২০ বাজেট নির্বাচনী বাজেট৷ বিরোধীরা  মোদির বাজেটকে  জনমুখী বলতে নারাজ৷ অনেকে বাজেটকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির  বাজেট  বলে চিহ্ণিত করেছেন৷

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন--- এ বাজেট বিদায়কালে মোদি সরকারের প্রতারণার বাজেট ৷

বিজেপির শাসনে সারা ভারতে চরম আর্থিক সংকটে জনগণ হতাশাগ্রস্ত৷ গত ৪৫ বছরে এমন আর্থিক সংকট হয়নি৷ বর্ত্তমান কেন্দ্রের বাজেটে কর্মসংস্থানের কোন  দিশা নেই৷ এতে ভবিষ্যতের কোন আশার আলো খুঁজে পাওয়া যায় না৷

এই বাজেটে দিশাহারা মানুষকে কেবল চমক দেওয়া হয়েছে৷