বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি দর্শণে সূর্যগ্রহণে মিলল বহু তথ্য

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

৮ এপ্রিলের (সোমবার) পূর্ণগ্রাস সূর‌্যগ্রহণ দৃশ্যমান হয়েছিল মেক্সিকো, আমেরিকা ও কানাডা থেকে৷ এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি এরিস-এর গবেষকেরা৷ তাঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকার টেক্সাসের ডালাস শহরে৷ উদ্দেশ্য, সূর‌্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা৷ ডালাসের ‘কটন বোল স্টেডিয়াম’-এ গ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন কমপক্ষে ১০ হাজার সাধারণ মানুষ৷ সূর‌্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখার জন্য উত্তেজনায় ফুটছিলেন সকলেই৷ গ্রহণ দেখলেন তাঁরা, জানলেন সৌরজগতের খুঁটিনাটি, বিজ্ঞানের গল্প শুনলেন বিশেষজ্ঞদের থেকে৷

স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৩ মিনিট থেকে সূর‌্যের গা থেকে একটু একটু করে খসতে শুরু করে৷ প্রকট হতে থাকে উজ্জ্বল কাস্তের ফলা৷ তার পরে একেবারে চাঁদের আড়ালে চলে যায় সূর্য৷ দিনের বেলা অন্ধকার নামে পৃথিবীর বুকে৷ পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শুরু হয়েছিল ১টা ৪০ মিনিটে৷ পুরোপুরি ঢেকে যায় সূর‌্য৷ আর ঠিক এই মুহূর্তে স্পষ্ট ভাবে, উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সূর‌্যের করোনা (সূর‌্যের পরিমণ্ডলের একেবারে বাইরের স্তর)৷ এ দিনের গবেষণায় বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল এই করোনা-ই৷ তাঁদের বিশ্বাস, সূর‌্যের এই অংশের কার‌্যকলাপ বা গতিবিধি বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং চমকপ্রদও বটে৷ দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার৷ তা ছাড়া এই গবেষণার জন্যেও এটা আদর্শ সময়৷’’ গত বছর ২ সেপ্ঢেম্বর মহাকাশে পাড়ি দেয় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর প্রথম সৌরযান ‘আদিত্য-এল১’৷ এ বছর ৬ জানুয়ারি সে পৌঁছয় গন্তব্যে৷ বর্তমানে পৃথিবী ও সূর‌্যের মাঝখানে এল ১ পয়েন্টকে ঘিরে থাকা হ্যালো অরবিট থেকে আদিত্য নজর রাখছে সূর‌্যের উপরে৷ এটি একটি করোনাগ্রাফি স্পেসক্রাফ্‌ট৷ পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে নির্দিষ্ট কক্ষপথ থেকে সূর‌্যের পরিমণ্ডলের উপর নজরদারি চালাচ্ছে সে৷ আদিত্যের ৭টি প্রোব-ই নিয়মিত ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সূর‌্য ও তার হেলিওস্ফিয়ারকে নিয়ে৷

দীপঙ্কর জানান, ঠিক এই সময়ে সূর‌্যগ্রহণ এর থেকে ভাল সুযোগ হতে পারত না বিজ্ঞানীদের জন্য৷ সূর‌্য, চাঁদ ও পৃথিবীর এমন অবস্থানে স্পষ্ট হয়ে উঠবে সৌর পরিবেশ বা সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ার৷ এই সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ারের সব চেয়ে বাইরের অংশকে বলা হয় করোনা৷ পূর্ণগ্রাস সূর‌্যগ্রহণের সময়ে করোনার ভিতরের অংশ অনেকটাই পরিষ্কার দৃশ্যমান হবে৷

ডালাসের স্টেডিয়ামে উপস্থিত এরিসের দলে দীপঙ্কর ছাড়াও ছিলেন বিজ্ঞানী এস কৃষ্ণপ্রসাদ এবং বিজ্ঞানী টি এস কুমার৷ তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি ১৪ সেন্টিমিটার টেলিস্কোপ৷ গ্রহণকালে দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সূর‌্যের করোনায় তীব্র গতিতে ঘটতে থাকা পরিবর্তন৷ দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এই ক্যামেরা এতটাই শক্তিশালী যে প্রতি সেকেন্ডে ৮টি ফ্রেম বন্দি করতে পারে৷’’ দীপঙ্কর বলেন, ‘‘ইসরোর সৌরযান আদিত্য-এল১-এও একটি করোনাগ্রাফ যন্ত্র রয়েছে৷ পরবর্তী কাজ হচ্ছে, আদিত্যের করোনাগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য ও আমাদের গ্রাউন্ড রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা৷ বিষয়টা নিয়ে আমরা খুবই উত্তেজিত৷’’