বিষাক্ত রাজনীতি

লেখক
মনোজ দেব

 অদ্ভুত এক রাজনৈতিক বৈপরিত্যে আক্রান্ত ভারতীয় রাজনীতি৷ রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই৷ স্বাধীনতার  শুরুতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন-সুভাষচন্দ্রের বাঙলা কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল৷ ক্রমে সেই বিষাক্ত রাজনীতি গ্রাস করেছে বাঙলাকেও৷ ভ্রাতৃঘাতী রাজনীতি বাঙালীর  উন্নত সংস্কৃতি কৃষ্টি ও সভ্যতাকে অতি নিম্নস্তরে নিয়ে গেছে৷ সাঁইবাড়ী, বিজনসেতু বগটুই -রাজনীতির দানবিক বর্বরতার সাক্ষর বহন করছে৷ তবে এসবের পিছনে আছে এক সুগভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র৷ যারশুরু ৮৪ বছর আগে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতে৷

সেইদিন থেকে ভারতীয় মানুষ রাজনীতির এক বিষাক্ত বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে৷ দেশীয় পুঁজিপতিরা এই বৃত্তের কেন্দ্রে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের  সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর লণ্ডনে ভারতীয়  ছাত্রদের  এক সমাবেশে ভাষণ প্রসঙ্গে বলেন---‘‘দেশীয় পুঁজিপতিদের সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শক্তি অর্জন করছে৷ এদের বিরুদ্ধেও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে৷ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, মানুষকে অর্থনৈতিক  স্বাধীনতাও দিতে হবে৷’’

কি মারাত্মক ভাষণ একবার চিন্তা করুন৷ একদিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, আবার দেশীয় পুঁজিপতিদের ব্রিটিশ তোষণ চরিত্র, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুর্গে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বললেন সুভাষচন্দ্র  বসু৷ তখনকার কংগ্রেস নেতাদের  কাছে কথাগুলো  আজব মনে হলেও দেশীয় পুঁজিপতিদের বুকে কাঁপন  ধরিয়ে দিয়েছিল৷ এই সাংঘাতিক লোকটাকে  আর বাড়তে দেওয়া উচিত  হবে না৷  শুরু  হলো এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র৷ ভারতের স্বাধীনতা  সংগ্রামের এক জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতার  কলঙ্কিত ইতিহাস৷ সে ইতিহাস জনগণের  আজও  অজ্ঞাত৷ সেও আর এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে সে ইতিহাস প্রকাশের প্রতিশ্রুতি  দিয়েও  কথা রাখেননি নরেন্দ্র মোদি৷  রাখা সম্ভবও  নয়৷  কারণ সে কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই (গান্ধী, প্যাটেল প্রভৃতি) পশ্চিম ভারতের৷ তা ছাড়া এই মূহূর্তে দেশী বিদেশী সমস্ত  পুঁজিপতিদের সবথেকে  ভালো বন্ধু নরেন্দ্র মোদি৷   যাই হোক, প্রসঙ্গে  ফিরে আসি৷  সুভাষ চন্দ্রের  বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হলো৷ কংগ্রেস, আর  এস তো  বটেই, এমনকি কমুনিষ্টরাও সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত৷ তার পরের ইতিহাস আজও  অজ্ঞাত, শুধু আমরা জানি  সুভাষ চন্দ্র আর কংগ্রেসে থাকতে পারেন নি, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷ তবে লক্ষ্যচ্যুত হননি৷ আজাদ হিন্দ বাহিনীর স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম তার জ্বলন্ত স্বাক্ষর৷

তবে সুভাষচন্দ্রের শেষ পরিণতি আজও অজানা৷ বাঙালীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্র এখানেই শেষ হয়নে৷ বাঙলার উন্নত কৃষ্টি সংস্কৃতিকে ধবংস করে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে শ্যামলী বাঙলাকে লুন্ঠন করার সুগভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিছান হয়েছে স্বাধীনতার পর৷

দেশীয় পুঁজিপতিরা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বিষাক্ত  বৃত্তের পরিধিতে বেঁধে  রেখেছে৷ বৃত্তের কেন্দ্রে বসে ওই পুঁজিপতি শোষকরা ডান বাম রাম সব দলকেই  নিয়ন্ত্রণ করছে৷ ওরাই দেশের আসল শাসক৷ তাইতো  গরিব কৃষক ঋণ মুকুব  চাইলে গুলি খায়, আর ওইসব পুঁজিপতিদের  লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব হয়ে যায়৷

আর জনগণ! তাদের জন্যে পাড়ায় পাড়ায় গন্ডি কেটে দেওয়া হয়েছে৷ অমুক পার্টি, তমুক পার্টি, চটুল রসের গান, সিনেমা, ক্যাবারে ক্রিকেট (আই.পি.এল), ক্যাবারে ফুটবল (আই.এস.এল), মাঝে মাঝে দেশপ্রেমের বাই৷ সোজা কথা এই বিষাক্ত বৃত্তের বাইরে এসে  নোতুন কিছু ভাবার সুযোগ সময় নেই৷

তবু নোতুনের আহ্বান এসেছে৷ সব সময়ই সবদেশের কিছু ব্যতিক্রমী  মানুষ থাকে৷ তারা কোন াধা মানে না৷ কোন কিছুই তাদের েঁধে রাখতে পারে না৷ নোতুনের আহ্বানে তারা সব সময় ছুটে চলেছে৷ সুভাষ চন্দ্র স্বপ্ণ দেখেছিলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ দেখালেন পরম শ্রদ্ধেয় দার্শনিক ঋষি শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷ তাঁর দেওয়া সামাজিক-অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট৷ ওই বিষাক্ত বৃত্তের কেন্দ্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রাউটের পথে আসবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা৷ মুক্তির অন্য কোন পথ নেই৷

আজ নববর্ষের প্রথমদিন সেইপথে চলার ব্রত নিতে হবে৷ বাঙালীকে শুধু বাঙলার জন্যে নয় বিশ্বের প্রতিটি শোষিত নিপীড়িত মানুষের জন্যে৷