বৃদ্ধির হার কমছে l রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে - আর্থিক অধোগতি শেষ সীমানায় পৌঁছেছে

সংবাদদাতা
পত্রিকা প্রতিনিধি
সময়

২৮ ডিসেম্বর এন.এস.ও (ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস) প্রকাশিত ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলেছে৷ অবশ্য অর্থনৈতিক বিষয়ের সচিব অতনু চক্রবর্তীর কথায়---অর্থনীতি অধোগতির শেষ সীমা স্পর্শ করেছে৷ এবার ঘুরে দাঁড়াবে৷

২০১৯ -২০ অর্থবর্ষের ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ আর্থিক বৃদ্ধির হার গত সাত বছরে তলানীত ঠেকেছে৷ যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অনেক নীচে৷ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪.৭ শতাংশ৷ অর্থমন্ত্রী কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির যে আশার কথা শুণিয়েছিলেন সে আশায়ও জল ঢেলেছে এই আর্থিক প্রতিবেদন৷ গত তিনটি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে উৎপাদন ক্রমশ কমছে৷ নতুন করে লগ্ণিও হচ্ছে না৷ এককথায় ক্রেতার চাহিদা, লগ্ণী ও রপ্তানী সবই অধোগতির দিকে৷ আর্থিক বিষয়ের সচিবের কথায় এটাই খারাপের শেষ সীমা৷ আর খারাপ হওয়ার রাস্তা নেই৷ এবার ভালর দিকে যাত্রা শুরু হবে৷

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা অতনু বাবুর কথায় আমল দিচ্ছেন না৷ তাঁদের কথায় খারাপের এখনও অনেক বাকী৷ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে জানুয়ারী-মার্চে তা প্রকাশ পাবে৷ তাঁদের মতে বাস্তবোচিত পরিকল্পনার অভাব ও করোনা ভাইরাসের থাবা অর্থনীতির ওপর পড়বে৷ তার ফলে আগামী তিন মাসে অর্থনীতির হার আরও খারাপ হবে৷

অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিব যতই আশার কথা শোনান বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার পরিসংখ্যান আরও খারাপের দিকেই ইঙ্গিত করছে৷ আর্থিক মূল্যায়ণ সংস্থা ফিচের সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখন আশা করা যায় না৷ দেশে উৎপাদন ও চাহিদা কমছে ও করোনা ভাইরাসের ফলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব চলতেই থাকবে৷ অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যাণ্ড ডেভেলপমেণ্ট সরকারের ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বাভাসকে নাকচ করে দিয়েছে৷

বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি

আর্থিক বৃদ্ধির হার কমার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় ও ঘাটতির পরিমাণ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে৷ সি.জি.এ. (কন্ট্রোলার জেনারেল অফ একাউণ্টস) জানিয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে সরকারের ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা৷ কিন্তু আর্থিক বর্ষের  শেষ তিন মাস এখনও বাকী৷ ইতোমধ্যে ঘাটতির পরিমাণ ৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা৷

রিজার্ভ ব্যঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের বক্তব্য নোট বাতিল, ভুলপথে জি.এস.টি. চালু ও সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার শ্লথ হচ্ছে৷ সরকার বিপুল ভোটে জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলেও আর্থিক উন্নতির দিকে মন না দিয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক লক্ষ পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷

বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন---পুঁজিবাদের অর্থে চালিত রাজনৈতিক দলের কাছে আর্থিক উন্নতির আশা করা বৃথা৷ তবে সাধারণ মানুষ অর্থনীতির এই সব জটিল তত্ত্ব বোঝে না৷ সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার নূ্যনতম প্রয়োজনটুকু পেলেই তারা খুশী৷ পৃথিবীতে সম্পদের অভাব নেই৷ অভাব পরিকল্পনার৷ তার জন্যে প্রাউটের পথে বাস্তবোচিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে৷ সেটাই হবে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর বাস্তবসম্মত পথ৷