ভাঁওতাবাজদের  এই বাজেট ধনী তোষণের হাতিয়ার

লেখক
একর্ষি

মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার বাজেটের বাংলা করেন আয় ও ব্যয়মাত্রিকা৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বছরের আয় বুঝে ব্যয় করার একটা খসড়া৷ সেটা গৃহস্থ যাঁরা যাঁদের যেমন আয় তাঁরা তেমনই ব্যয়ের হিসাবে হিসাব করেন৷ ঠিক তেমনই দেশের সরকার তাঁর যেমন আয়  তেমনই ব্যয়ের মাত্রা কষেন৷ যদি আয় বেশী হয় তাহলে সেই আয় ও ব্যয়মাত্রিকা হয় উদ্বৃত্ত আয় ব্যয়মাত্রিকা৷ আর যদি আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী হয় সেটাকে বলা হয় ঘাটতি বাজেট৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে দু’তিন বছর ধরে দেশের যে আর্থিক হাল তাতে করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশ একেবারে চরম আর্থিক সংকটে ছন্নছাড়া৷ জনগণের আর্থিক অবস্থা শোচণীয়! সরকারের আর্থিক ভাঁড়ার শূন্য৷ তবু একটা বাজেট করতেই হয়, বছরের প্রথম দিকে তাই করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের দ্বারা৷ এতে আয়ের উৎস্য খোঁজা হয়েছে কিছু জিনিসের দাম বাড়িয়ে আর কিছু জিনিসের দাম কমিয়ে৷ যেগুলির দাম বেড়েছে সেগুলি হলো---স্পীকার, ইয়ার ফোন, হেডফোন, শোলার সেল ও মর্ড্ডিলম, এক্স-রে মেসিন, বিদেশী ছাতা, আনব্রেড  ফুয়েল, ইলেকট্রনিক খেলনার যন্ত্রাংশ, ইমিটেশনের গয়না৷ আর দাম কমেছে---কম্পিউটার ল্যাপটপ ও চার্জার, মোবাইল ক্যামেরার লেন্স, স্মার্টওয়াচ, কানে শোনার যন্ত্র, গ্রহরত্ন, পালিশ করা হীরের, চামড়া জাতদ্রব্য, বিদেশী যন্ত্রপাতি কৃষি উপকরণ ও কৃষির যন্ত্রপাতি, ওহিং, বাতিল হওয়া ইস্পাত৷

সর্বনাশ হয়েছে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ কমেছে, ভর্তুকি ছাঁটাই খাদ্য-সারেও৷ জনগণ আশা করে ছিলেন আয়কর নিয়ে কিছু সুরাহা সরকার করবেন কিন্তু সরকার নীরবই আছেন৷ এতে চরম দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ নাজেহাল৷ চরম কর্ম সংকোচনে বেকার বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা৷ অর্থমন্ত্রী ভুল তথ্য দিয়েছেন বাজেটে ঘোষনায় কিন্তু তাতেই হাততালি পেয়েছেন৷

এই বাজেটে দেশের কোটি কোটি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও হতভাগ্য দরিদ্রগণ এর  ভাগ্যে প্রাপ্তিটা একেবারেই শূন্য!

মাননীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আট মাস আগে যে জি.এস.টি রেকড্‌ আদায়ের তথ্য দিয়েছিলেন, তার থেকে বাজেট ঘোষনার দিনে ৩৯৮ কোটি টাকা কম৷ এখানে প্রশ্ণ বিশেষজ্ঞদের ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের নাকি ২০২২ জানুয়ারী মাসের ঠিক৷

এ দিকে এই বাজেট সম্বন্ধে নানাজনের নানামত যেমন---পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দাবী---‘‘মানুষ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির ভারে বিধবস্ত৷ তাদের জন্য এই বাজেটে কিছুই নেই৷ সরকার  শুধু বড় বড় কথা বলছে, পেগাসাস স্পিন বাজেট৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে নান প্রশ্ণের  মুখে নাজেহাল৷ প্রশ্ণ---জনতা জানতে চাইছে ডিজিটাল অ্যাসেট মানে কি? উত্তর এখন বলা যাবে না৷ প্রশ্ণ--- মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?  বাজেটেও কিছু বলা হল না কেন?

প্রশ্ণ---বেকারত্ব কমাতে কিছুই করা হল না কেন?  মধ্যবিত্ত কিছুই পেল না কেন? -আয়কর কমানো হল না কেন? অর্থমন্ত্রী সঠিক প্রশ্ণের সঠিক উত্তর দিয়ে সক্ষম হননি৷ পশ্চিমবাঙলার মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন--- বাজেটের প্রতিশ্রুতি ভাঁওতা! কিছু বিশিষ্ট জনের প্রতিক্রিয়া--- প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী--- মাননীয় অর্থমন্ত্রী! সার্বিক  উন্নয়ণের কথা বলবেন?

সীতারাম ইয়েচুরি--- কারজন্য বাজেট?  সেই ১০ শতাংশ বড়লোকের জন্য, যাঁরা দেশের ৭৫ শতাংশ সম্পদের মালিক৷  মহামারীর সময় যাঁরা বিপুল মুনাফা করলো, তাঁদের উপর কেন আরো বেশী কর চাপানো হল না?

ডেরেক ও ব্রায়েনের তৃণমূল--- হীরেই এখন সরকারের প্রকৃত বন্ধু৷ কৃষক মধ্যবিত্ত, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, বেকার নিয়ে কোনও চিন্তা নেই৷ এঁরা পি.এম কেয়ার্সের তালিকায় নেই৷

মায়াবতী---নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি  ঘোষণা করে জনচিত্ত জয় করার চেষ্টা করেছে বাজেটে৷  দারিদ্র, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি ও কৃষকদের আত্মহত্যার মত বিষয় নিয়ে কোন চিন্তা নেই কেন্দ্রের?

পি.চিদাম্বরম--- সবচেয়ে  ধনী ব্যক্তিদের ভাষা আয়ত্ব করেছেন নির্মলা৷ পরোক্ষ কর কমানো বা গরিবদের আর্থিক সহায়তার কথা নেই বাজেটে৷

রাহুল গান্ধী---মোদি সরকারের শূন্য গর্ভবাজেট৷ বেতনভুক কর্মচারী, মধ্যবিত্ত গরিব পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, যুবক কৃষক, এদের জন্য কিছু নেই৷

২০২২-২৩ এর বাজেটে ইপি এফের পেনশন বৃদ্ধির ঘোষনা নেই, তাই হতাশ ৬৫ লক্ষ গ্রাহক৷ দেশের প্রধান যারা সেই কর্ষক-কৃষকীদের মন জয় করার ব্যর্থ চেষ্টা কেন্দ্র সরকারের৷

এই বাজেটে জনগন চিরবঞ্চিত৷ কারণ সরকারতো জনগণের সরকার নয় এটা একটা জনস্বার্থ বিরোধী সরকার৷ এই সরকার কর্র্পেরেট সংস্থাগুলির তোষণ করার সরকার জনতার অর্থে৷ তাই জনতাকে চরম শোষণ করার জন্যই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির দাম বাড়িয়ে সরকারের তোষাখানার  পূর্ত্তি ঘটিয়ে নিছক গদী রক্ষা করে চলেছে৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা এ সরকার দেশের ১৩৫ কোটি মানুষের মধ্যে ১২০ কোটি মানুষের কথা মোটেই চিন্তা করে না, কারণ এই সরকার ধনীদের  অর্থেই পুষ্ট৷ তাই এরা ধনীদের স্বার্থে আর কর্র্পেরেট পুঁজির স্বার্থেই দাঁড়িয়ে আছে৷ লোক দেখানো ও লোক ঠকানো বাজেটে তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ণের কোন ভাব না চিন্তা নেই৷

অনেকের প্রশ্ণ এই বাজেট নাকি ৫টি রাজ্যের বোটে বিজেপি সরকার এর হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সরকার উপহার  হীন বাজেট তৈরী করেছেন৷ যাই হোক নির্বাচনে ফল কি হবে সেটা ভবিষ্যতের গর্ভে৷ তবে এটা সরকার লোকসভায় পেশ করবেন আর সংখ্যার জোরে পাশও করবেন কারণ বিরোধীদের সংখ্যা অত্যন্ত কম৷ এদেশে সংখ্যার জোরে সবই হয় তা দেখা যাচ্ছে৷ তবে গণতন্ত্রকে সার্থকভাবে প্রতিফলিত করতে হলে ও জনগণকে আর্থিক স্বনির্ভর করতে হলে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো দরকার দীর্ঘ ৭৫ বছরে যেকটি দল কেন্দ্রে শাসনে এসেছে তারা কোনটাই জনগণের  সেবক ছিল না৷ তাই নিছক দলবাজি হয়ে চলেছে৷ সব কটাই ধনীদের সেবক তাই জনগণ হলো নিছক বোটার তাঁদের বোট দিয়ে গদী বসাবে আর তারাই ছলবল কৌশলে সেই গদীতে গিয়ে তাদের শোষণ করবে৷ এটাই এদেশের গণতন্ত্র! দরকার আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ যাতে বোটারগণ নির্ভয়ে নির্বাচনে মতামত দান করে সৎনীতি বাদী দেশসেবকদের নির্বাচিত করতে সক্ষম হন৷ তাই সবকিছুর খোলনলচে পাল্টাতে সার্বিক শোষণ মুক্তির আন্দোলন সেটার জরুরী৷ দেশভাগ করে যে পাপ লোভী নেতারা করে গেছে তারই এটা বিষময় ফল!

তাই আজ প্রয়োজন গণতন্ত্রকে বাঁচাতে বিরোধীপক্ষকে লোক সভায় শক্তিশালী করা৷ এ কাজে প্রকৃত দেশ সেবক যাঁরা তাঁদের তুলে আনতে স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন গুলিকে সচেতন করে দেশের কাজে নামানো৷ তবে সারা দেশ বাঁচবে, দেশ সার্থক শাসক পাবে৷ দেশের আজও প্রকৃত শিক্ষা নেই আর গড়ে ওঠেনি  সেই সংঘটন৷ তাই জনগণকে  সচেতন করাটাই জরুরী৷ দেশ দুর্নীতিতে ও অসৎ ব্যষ্টিদের প্রাদুর্ভাবেই ছেয়ে গেছে, তাই এতো দুর্দ্দশা হত দরিদ্রদের! তবে মুষ্টিমেয় সৎনীতি বাদীরা এই ভাঁওতা মারা বাজেট মানে না ও স্বীকার করে না৷ দেশ এখন অসৎদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে৷