ভারত যুক্তরাষ্ট্রে সংকীর্ণ ধর্মমতকে অধিকাংশ মানুষই মান্যতা দেয় না

লেখক
প্রভাত খাঁ

অত্যন্ত দুঃখের কথা এই যে ভারত যুক্তরাষ্ট্র হলো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র যদিও এটা হবে ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কারণ হিন্দুত্ববাদটি হলো এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মমত৷ এই পৃথিবীতে কয়েক শত তারও বেশী ধর্মমত আছে৷ আর তাতেই অনেকের বিশ্বাস৷ কিন্তু স্মরণে রাখা অত্যন্ত জরুরী তা হলো সকল মানুষের ধর্ম হলো কিন্তু এক ও অভিন্ন৷ মানুষ যে যেখানের  বাসিন্দা হোক আর ভাষা বিভিন্ন হোক তারা সকলেই সেই একই মহান ঈশ্বর তাঁর নাম সেই ঈশ্বর, গড ও আল্লাহ৷ তিনি তো এক৷ তাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই৷ কিন্তু সেই ধর্মমতের নামে আজ অত্যাধুনিক সভ্যতার যুগে কি করছে অনেক সরকার! তারা সেই সাম্প্রদায়িকতার নামে মেকী ভূয়ো জাতীয়তাবাদের নামে মহান মানবতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করে মানুষের সমাজে ঐক্য সংহতি, শান্তি নষ্ট করে ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়িয়ে অশান্তি ঘৃনা ও হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে স্বয়ং যাঁরা দেশের নেতা ও শাসক! ‘‘হিন্দু না ওরা মুসলিম৷

ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন?

কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ

সন্তান মোর মার! এই মহান প্রশ্ণটি রেখে গেছেন বাংলার মহান বিপ্লবী কবি নজরুল৷

ভারত হল সারা মানবজাতির মহামিলনের তীর্থক্ষেত্র৷ একথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন৷ আজও দেখা যাচ্ছে সেই জঘন্য সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিচ্ছে এই ভারতে হিন্দুত্ববাদী কেন্দ্র সরকারের দল! তার কারণে রামনবমীতে শোভাযাত্রা নিয়ে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ সহ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ এতে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, তামিল নাডুর মুখ্যমন্ত্রী প্রায় এক হয়ে ১৩টি বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন৷ তাঁরা প্রশ্ণ তুলেছেন কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্রমোদী কেন নীরব?

অত্যন্ত দুঃখের কথা ভারত এর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ভারতীয় সংবিধানের বাস্তবে রক্ষাকর্র্ত্ত কিন্তু তিনি ও তাঁর দলই হলো প্রতি পদে পদে  সংবিধান বিরোধী কাজে মদৎ দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে চলেছেনা৷ মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট ও দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকেন৷ এটাই ভারতে বহু ধর্মমত ও ভাষাভাষীদের পক্ষে ক্ষতিকারক এটাতো পাকিস্তান নয়৷ যদিও সেই সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার অখণ্ড ভারতবর্সকে ধবংস করতে হিন্দু ও মুসলমানদের দুই নেতা জওহরলাল ও জিন্নার হাতে অখণ্ড দেশকে তিনটুকরো করে দু’খণ্ড মুসলমানদের হাতে ও ডানাহীন পাখির মতো মায়ের খণ্ডটি জওহরলালের হাতে তুলে দেয়৷ যাতে সারা জীবন একা ঝগড়া করে শেষ হয়ে যায়!

বর্তমানে চরম কঠিন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের পর বিজেপি দলের প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারতে সরাসরি  হিন্দুত্ববাদকে জোর করে চাপাতে গিয়ে যে কাণ্ড করে চলেছেন সেটা মহান ভারতেরই আদর্শ বিরোধী কাজ৷  নেহেরুজী কিন্তু একটি কাজ করে গেছলেন সেটি হলো ভারতের মহান বিদ্বান দেশ প্রেমিকদের নিয়ে যে সারা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংবিধান ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘটন হয় সেটি সত্যই মানবতাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত সেটিকেই যেন বর্তমানযুগে অস্বীকার করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবেই৷

কারণ এদেশের বর্তমানে যারা সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সম্প্রদায় তাঁরা হলেন অতীতের প্রায় সবাই হিন্দুমতের বিশ্বাসী তাঁরাই নানা কারণে বাধ্য হয়ে মুসলমান ধর্মমতে দীক্ষা নেন৷ তাঁরাই আজ সংখ্যায় হিন্দুদের চেয়ে লঘু৷ তাই এখানে আজ এদের সঙ্গে বিরোধ করাটা হলো চরম দুর্ভাগ্যের ও সংকীর্ণতার পরিচয়৷

মনে রাখা দরকার শাসকদের সবাই হলো ভারতযুক্ত রাষ্ট্রের অতিপ্রিয় সন্তান সন্ততি৷ সিন্ধু শব্দ থেকে হিন্দু শব্দটি এসেছে সেই বিদেশীদের ভুল উচ্চারণের জন্য  সেই আলেকজাণ্ডারের আগমণের কাল থেকে৷  বিদেশী ‘স’ উচ্চারন করতে পারতেন না তাই ‘হ’ উচ্চারণ করতেন৷ ভারতের ধর্ম হলো সেই বিশ্বধর্ম সনাতম ধর্ম৷ আর হিন্দুধর্ম হলো একটি বিশেষ এলাকার মানুষের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস৷ যা কিছুটা সেই সনাতন ধর্মের অংশ বিশেষ৷ সেটাকে নিয়ে শাসকদলের বাড়াবাড়িটাকে মেনে নেওয়া কি যায়? সারা ভারত তো এটাকে মানে না বা বিশ্বাস করে না৷